Bangladesh
এক আঙিনায় মসজিদ-মন্দির, সম্প্রীতির উজ্জ্বল নিদর্শন
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা, ৩ অক্টোবর ২০২২ : একই উঠানে মসজিদ ও মন্দির। এক পাশে ধূপকাঠি, অন্য পাশে আতরের সুঘ্রাণ। এক পাশে উলুধ্বনি, অন্য পাশে চলছে জিকির।
এভাবে ধর্মীয় সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যুগ যুগ ধরে চলছে পৃথক দুদটি ধর্মীয় উপাসনালয়। শারদীয় পুজা উপলক্ষে এমন দৃশ্য বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। নড়াইল পৌরসভার মহিষখোলা এবং লালমনিরহাট শহরের দুটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো:
সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট শহরের কালীবাড়ী এলাকার পুরান বাজার জামে মসজিদ ও কালীবাড়ী কেন্দ্রীয় মন্দিরটি একই উঠানে রয়েছে। যে যার মতো ধর্ম পালন করে চলেছেন। এখন চলছে শারদীয় দুর্গোৎসব।
স্থানীয়রা জানান, ১৮৩৬ সালে কালী মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই সময় লালমনিরহাট শহরে কালীবাড়ী এলাকার পুরান বাজার এলাকায় বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ধর্মপ্রাণ মুসলমান ব্যবসায়ীরা নামাজ করার জন্য তার পাশেই একটি ছোট ঘর তোলেন। আর সেটির নামকরণও করা হয় পুরান বাজার জামে মসজিদ হিসেবে। ওই সময় থেকে এক উঠানে চলছে দুই ধর্মের দুই উপাসনালয়ের কাজ। পূজা শুরুর আগে মসজিদ ও মন্দির কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেন। এ পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি।
মন্দির ও মসজিদ দেখতে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছে সাধারণ মানুষ। কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতও এই মন্দির ও মসজিদ পরিদর্শন করেছেন।
এদিকে নড়াইল পৌরসভার মহিষখোলা এলাকায় এক আঙ্গিনায় মসজিদ-মন্দির, পূজা-নামাজ হচ্ছে নির্বিঘ্নেই। ছোট্ট একটি মাঠের একপাশে মসজিদ আর অন্যপাশে মন্দির। সময় হলে কেউ যাচ্ছেন নামাজে, আর কেউ যাচ্ছেন দেবী দর্শনে। স্বাধীনভাবে যার যার ধর্ম পালন করছেন সবাই; চলছেন স্ম্প্রীতি রক্ষা করে।
ধর্মীয় সম্প্রীতির এমন উজ্জ্বল নিদর্শন রয়েছে চিত্রার নদীর পাড়ে নড়াইল পৌরসভার মহিষখোলা এলাকায়। প্রায় চার দশক ধরে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ পরষ্পরের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তাদের ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করছে। ঐহিত্য মেনে সেই উৎসবে সামিলও হচ্ছেন সবাই।
এলাকাবাসী জানান, এক সময় নড়াইলের পুরান সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয়টি মহিষখোলায় ছিল। সেই কার্যালয়ের পাশেই ১৯৭৪ সালে মহিষখোলা পুরাতন সাব রেজিস্ট্রি অফিস জামে মসজিদ নামের এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৯৯২ সালে নতুন করে মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। আর ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় মহিষখোলা সার্বজনীয় পূজা মন্দির। নিজস্ব জায়গায় মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
মন্দিরে মহাসপ্তমীর পূজা দেখতে আসা যশোরের বাঘারপাড়া এলাকার সুবল দাস বলেন, ‘আমি আগেই এখানকার কথা শুনেছিলাম। একই জায়াগায় পাশাপাশি মন্দির ও মসজিদে যে যার ধর্ম পালন করে। এটা দেখে বেশ ভালো লাগলো। সবাই এ রকম মিলেমিশে থাকলে তো ধর্ম নিয়ে কোনো ঝগড়াঝাটি আর থাকত না।’