Bangladesh

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার শিক্ষার্থী অঙ্কিতা
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা, ১০ জানুয়ারি ২০২৩ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পড়ার সুযোগ পেলেন এক ট্রান্সজেন্ডার নারী। সম্প্রতি অঙ্কিতা ইসলাম নামের ওই শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ব্যবস্থাপনা বিভাগের এমবিএ প্রোগ্রামে।
অঙ্কিতার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের নান্দুরিয়ায়। করোটিয়ায় সরকারি সা’দত কলেজ থেকে গণিতে সন্মানসহ স্নাতক করেছেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন থাকলেও ভয় ও অনিশ্চয়তায় স্নাতকে ভর্তি পরীক্ষায়ও বসেননি তিনি। তবে স্নাতক শেষ করে সেই স্বপ্ন পূরণে লড়ে যান এই ট্রান্সজেন্ডার নারী।
প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ঢাবির এমবিএ প্রোগ্রামে পড়ার সুযোগ পান অঙ্কিতা। অনিশ্চয়তা থাকলেও তার অধ্যয়নের পথ মসৃণ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দুই বছরের বাণিজ্যিক এই প্রোগ্রাম শেষ করতে তাকে কোনো অর্থও খরচ করতে হবে না। এই লড়াইয়ে তার পাশে থেকেছেন ট্রান্সজেন্ডার অ্যাক্টিভিস্ট হোচিমিন ইসলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরাও বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবেই নিয়েছেন।
শুরুর গল্প জানিয়ে অঙ্কিতা বলেন, আমি যখন এইচএসসি পাস করি আমার স্বপ্ন ছিল কোনো একটা পাবলিক ভার্সিটিতে পড়াশোনা করব। ওইসময় আমার মানসিক শক্তি এতটা ছিল না যে নিজে নিজে গিয়ে পড়াশোনা করব। আমি একেতো ট্রান্সজেন্ডার, আবার একেবারে দরিদ্র ঘর থেকে উঠে আসা মানুষ। এসকল কারণে প্রস্তুতি তো দূরের কথা ভর্তি পরীক্ষাও দেওয়া হয়নি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে একটা কলেজ থেকে অনার্স শেষ করি।
তিনি বলেন, গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন হওয়ার পর একটা বেসরকারি ব্যাংকে যোগদান করি। এখানে এক বছর চাকরি করার পর বারবার মনে হচ্ছিল আমার মাস্টার্সটা করা জরুরি। আবার ভয়ও হচ্ছিল যে কিভাবে কী ম্যানেজ করব। পরে ঢাকা ইউনিভার্সিটির একটা সার্কুলার দেখি এবং অনেকটা অনিশ্চয়তা নিয়ে আবেদন করি। আমাদের জীবনটাই অনিশ্চয়তা আর বাঁধা। তবুও ভাবলাম আরেকটা যুদ্ধ করে দেখি। এখানে রিটেন পরীক্ষা দিয়ে টিকে যাই, এরপর আমাকে ভাইভার জন্য ডাকা হয়। ভাইভা দেওয়ার আগে আমার ভয় হচ্ছিল আমাকে স্যাররা কিভাবে নেন। তবে স্যাররা যথেষ্ট আন্তরিক ছিলেন এবং সৌভাগ্যক্রমে আমি টিকে যাই।
অঙ্কিতাই প্রথম ট্রান্সজেন্ডার যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এর মাধ্যমে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হলো। অনিশ্চয়তার কথা জানিয়ে অঙ্কিতা বলেন, আমার জন্য কঠিন হলেও ধার করে ভর্তিও হয়ে যাই। কিন্তু কোর্স ফি দেখে আমি আকাশ থেকে পড়লাম এত টাকা আমি কিভাবে ম্যানেজ করব। এদিকে আমার তীব্র ইচ্ছে যেভাবে হোক আমাকে পড়াশোনা সম্পন্ন করতেই হবে। তখন অনেকভাবে চেষ্টার পর হোচিমিন ইসলাম আপুর সাথে দেখা হয় এবং ঘটনাটা শেয়ার করি। আপু আমাকে নিয়ে উপাচার্য স্যারের সাথে দেখা করেন। স্যার যথেষ্ট মানবিকতার সাথে আমার কথা শোনেন এবং সাথে সাথে ডিন স্যারকে ডেকে স্কলারশিপের মাধ্যমে পড়াশোনার সুযোগ করে দেন।
অপরদিকে অঙ্কিতার মতো ট্রান্সজেন্ডারদের পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব বলেই মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান।