Bangladesh
শোকের মাতমে শেষ হলো ঐতিহ্যবাহী তাজিয়া মিছিল
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা, ৯ আগস্ট ২০২২: ইসলামের ইতিহাসে মহররম মাসের ১০ তারিখ বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন দিন। দিনটি আশুরা হিসেবে পালন করে বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়। কারবালার বিয়োগান্তক স্মৃতি স্মরণে শোকের আবহে পালিত হয় পবিত্র আশুরা। করোনা মহামারির ব্যাপক প্রাদুর্ভাবে টানা দুই বছর বন্ধ থাকার পর এবার যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে রাজধানীতে মহররমের ঐতিহ্যবাহী তাজিয়া মিছিল বের হয়েছে। এতে শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলিমদের ঢল নামে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মিছিলে আসা শিয়া মুসলিমদের বেশিরভাগই কালো পোশাক পরে বুক চাপড়ে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ ধ্বনি তোলেন। হোসেনি দালান ইমামবাড়া ব্যবস্থাপনা কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত মিছিলে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারও চোখে পড়ে।
মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সকাল ১০টায় রাজধানীর হোসেনি দালান থেকে তাজিয়া মিছিলটি বের হয়ে চকবাজার, লালবাগ, আজিমপুর, নীলক্ষেত, নিউমার্কেট ও সাইন্সল্যাব হয়ে ধানমন্ডি ২ নম্বরে গিয়ে শেষ হয়।
হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) শিশুসন্তান জয়নাল আবেদীন ও তার বংশধরসহ ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শাহাদতবরণ করেন। শত শত বছর ধরে শিয়া মুসলিমরা কারবালার শহীদদের স্মরণে শরীর থেকে রক্ত ঝরিয়ে মিছিল ও শোকের মাতমে দিন পালন করেন।
শিয়া মুসলিমরা তাজিয়া মিছিলে শোকের প্রতীক হিসেবে খালি পায়ে পুরুষরা কালো পাঞ্জাবি-পাজামা এবং নারীরা কালো কাপড় পরে মিছিল করেছে। ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ ধ্বনিতে মাতম ও বুক চাপড়ে কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার স্মরণ করেন তারা। মিছিলে অংশ নেন বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ভক্তরা। মিছিলের সামনের কাতারে ছিল ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেনের দুটি প্রতীকী ঘোড়া, দ্বিতীয় ঘোড়ার জিন ছিল রক্তের লালে রাঙানো।
মিছিলের প্রথম অংশে দুটি কালো গম্বুজ বহন করা হয়েছে। জানা যায়, বিবি ফাতেমাকে স্মরণ করে এ গম্বুজ দুটি বহন করা হয়েছে। মিছিলে কালো কাপড় দিয়ে ইমাম হোসেন (রা.) এর প্রতীকী মরদেহ বহন করেন শিয়া মুসলিমরা। ধানমন্ডি লেকে প্রতীকী কারবালা প্রান্তরে এসে মিছিলটি শেষ হয়।
মিছিলে অংশ নেওয়া শিয়া মুসলিমদের হাতে লাল, সবুজ, কালোসহ বিভিন্ন রংয়ের নিশান, মাথায় শোকের কালো কাপড় শোভা পায়। এ বছর তাজিয়া মিছিলে প্রায় এক হাজার নিশান উড়ানো হয়। কারবালার স্মরণে কালো চাঁদোয়ার নিচে কয়েকজন বহন করেন ইমাম হোসেনের প্রতীকী কফিন। মাতমকারীদের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন সেচ্ছাসেবকরা। তাদের পানি ও শরবত বিতরণ করতে দেখা যায়।