Bangladesh

আত্মগোপনে বঙ্গবন্ধুর পরিবার ১৯৭১
ফাইল ছবি/উইকিমিডিয়া কমন্স/Mehdi Hasan Khan

আত্মগোপনে বঙ্গবন্ধুর পরিবার

Bangladesh Live News | @banglalivenews | 30 Mar 2023, 06:58 pm

বিশেষ প্রতিবেদন : পঞ্চাশের দশক থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সার্বক্ষণিক সঙ্গি ছিলেন মোমিনুল হক খোকা। একাত্তর সালে পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে তিনি আগলে রাখেন। এ সময় তিনি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর পরিবারসহ আত্মগোপনে থেকেছেন। মোমিনুল হক খোকার ‘অস্তরাগে স্মৃতি সমুজ্জ্বল : বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবার ও আমি’ শিরোনামে স্মৃতিচারণামূলক গ্রন্থ থেকে সেসময়কার ঘটনা নীচে তুলে ধরা হলো:

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এলো। কারফিউ শুরু হয়ে গেল। ওই ফ্ল্যাট বাড়িতেই একটা কামরাতে রাতে থাকার বন্দোবস্ত করলাম। এরই মধ্যে আশার কথা শুনলাম, ‘ঢাকার বাইরে পাকবাহিনী প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছে। সারা দিনের ক্লান্তি, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভাবনা, ক্ষণে ক্ষণে ভাবীর বিলাপ—রাত্রে আর ঘুমানোর আশা করিনি। তবু মানুষের শরীর, কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বলতে পারবো না। সকালে উঠে দেখি সারা বাড়ি নিস্তব্ধ, কোনো মানুষের সাড়া নেই। আগের দিনেই কিছু কিছু পরিবার চলে গিয়েছিলেন, এখন দেখি কেউ নেই। সবাই চলে গিয়েছেন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। ভাবী বল্লেন, ‘আর তো এখানে থাকা সম্ভব নয়, চল্ তোর শ্বশুরবাড়িতেই যাব এখন।’ আমি ভাবী ও বাচ্চাদেরকে নিয়ে রওয়ানা হলাম।

মগবাজার থেকে বেরিয়ে রাজারবাগ হয়ে উয়ারির দিকে আসতে থাকি। পথে দেখি পাক সেনাবাহিনী পুলিশ ব্যারাক সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে দিয়েছে। শুনতে পেলাম, পাকবাহিনী পুলিশের হেড কোয়ার্টার দখল করতে এসে প্রতিরোধের সম্মুখীন হলে ট্যাংক নিয়ে এসে আক্রমণ করে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তাদের ৩০৩ (থ্রি নট থ্রি) রাইফেল দিয়ে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করলেও পরে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। আরও কিছু দূর এগিয়ে এসে কাকরাইলের দক্ষিণ প্রান্তে দেখি লাশ পড়ে আছে। কিছু লোক লাশটিকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে। তাদের একজনের মুখে শুনতে পেলাম স্টেডিয়ামের অতি পরিচিত মুখ মুশতাকের লাশও নাকি কিছু আগে এভাবে পড়ে ছিল। মুশতাক বাঙালি ছিল না। কিন্তু প্রায় ২৪ বছর স্টেডিয়ামস্থ এলাকায় কাটিয়ে সে যে বাঙালি নয়, এ কথা সে নিজেও ভুলে গিয়েছিল। টিকাটুলি এলাকায় প্রবেশের মুখে দেখলাম- দৈনিক ইত্তেফাকের অফিসসহ সব কিছু জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। ধ্বংসের লীলা দেখতে দেখতে উয়ারিতে বলধা গার্ডেনের পাশে শ্বশুরবাড়িতে পৌছুতে বেলা গড়িয়ে যায়।

আমার শ্বশুর-শাশুড়ি আমাদের সবাইকে দেখে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করেন। আমার শ্যালকরা যারা ছিল সবাই এসে ভাবী ও বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। শাশুড়ি ভাবীকে বল্লেন, ‘কিছু চিন্তা করো না মা, সব ঠিক হয়ে যাবে, আল্লাহর ওপর ভরসা রাখ।’ যাই  হোক, সেখানে বেশ কিছুদিন রইলাম। কিন্তু ইতিমধ্যে পাড়া-প্রতিবেশীদের কেউ কেউ আমাদের ওখানে থাকার বিষয়টা সহজভাবে নিতে পারছিল না। ভাবী তাই একদিন আমাকে বল্লেন, ‘ভাডি, আমাদের তো এক জায়গায় বেশি দিন থাকা সম্ভব নয়। তুই অন্য কোথাও আমাদেরকে নিয়ে চল্।’ আমার শ্বশুর শুনে বল্লেন, ‘তা কি করে হয় মা, এই বিপদের মধ্যে কোথায় যাবে তুমি, এখানে আমরা সবাই এক সঙ্গে আছি। আমার ছেলেরা পালা করে পাহারা দিচ্ছে, আল্লাহর মেহেরবানিতে এখানে কোনো বিপদ দেখা দেয়ার সম্ভাবনা নেই। আমার শ্বশুরবাড়ির পাশেই ছিল আবদুস সাত্তার চৌধুরী, মরহুম লাল মিঞা (সাবেক মুসলিম লগি মন্ত্রী)র জামাইর বাসা। দুই বাড়ির মাঝখানের দেয়ালের কিছু অংশ আমরা ভেঙে ফেলেছিলাম, যাতে করে দুই বাড়ির মধ্যে সহজে যাতায়াত করা যায়, আর রাতে এ বাসার মেয়েদেরকে ঐ বাসাতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ভাবী কিন্তু মানলেন না, আমার শাশুড়িকে বল্লেন, ‘মাওই আম্মা, আমি জানি আপনাদের এই বাসাই আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল। তাই এ জায়গা আমি নষ্ট করতে চাই না। এখন গিয়ে কিছুদিন থাকি অন্য জায়গায়, আবার অসুবিধা দেখলেই চলে আসব।’ (চলবে)

সর্বশেষ শিরোনাম

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের জামিন শুনানি বৃহস্পতিবার Mon, Dec 04 2023

তারেকের সঙ্গে মতের অমিল: নতুন কর্মসূচি চান শীর্ষ নেতারা Mon, Dec 04 2023

কমে যাচ্ছে গ্যাসের মজুত, অবশিষ্ট আছে ৩২ শতাংশ! Mon, Dec 04 2023

সমাবেশের অনুমতি চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে আ.লীগের চিঠি Mon, Dec 04 2023

আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় ৬০ প্রার্থীকে শোকজ Mon, Dec 04 2023

সারাদেশে ওসিদের বদলির সিদ্ধান্তের কারণ জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী Mon, Dec 04 2023

প্রধানমন্ত্রীর হাতে ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার পুরস্কার তুলে দিলেন তথ্যমন্ত্রী Mon, Dec 04 2023

এমন কাজ করবেন না যাতে জনগণের কাছে হেয় হতে হয়: রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ইসি Mon, Dec 04 2023

ইসি’র সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের আস্থা রয়েছে : ওবায়দুল কাদের Mon, Dec 04 2023

একলা এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ, বেকায়দায় শরিকরা Sun, Dec 03 2023