Bangladesh
‘১৮০ ডিগ্রী’ ঘুরে গেলেন হেফাজতের আমীর
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২১: ‘১৮০ ডিগ্রী’ ঘুরে গেলেন হেফাজতের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী। সব দোষ চাপালেন ‘জীন-ভূতের’ ওপর।
সোমবার (১৯ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টার দিকে এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘মোদি আসার বিষয়ে আমরা হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে কোনো কর্মসূচি দিই নাই। তাছাড়া গত ২৬ মার্চ আমাদের কোনো কর্মসূচি ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘গত ২৬ মার্চের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু অঘটন ঘটেছে। যেগুলোর কোনোটিতেই হেফাজতের কমান্ড ছিল না। হেফাজতে ইসলাম ভাঙচুরে বিশ্বাস করে না। হেফাজতের নেতাকর্মীরা ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও করে নাই।’
বাস্তবে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বায়তুল মোকাররম মসজিদের সমাবেশে উত্তপ্ত বক্তব্য দেন হেফাজত ঘনিষ্ট নেতারা। এখান থেকে গুজব ছড়িয়ে দেশের একাধিক স্থানে তান্ডব চালানো হয়। এখন সরকারের দৃঢ় অবস্থানের মুখে হেফাজত প্রধান বাবুনগরীর এই দাবি কেবল পিঠ বাঁনোর কৌশল হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
বাবুনগরী বলেন, ‘সরকার আমাদের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানি করছে, গ্রেফতার করছে। গ্রেফতার আতঙ্কে এখন অনেকেই বাইরে রাত্রিযাপন করে। আবার পুরো রাত বাইরে থেকে যখনই তারা সেহরি করতে বাড়িতে আসছে, তখনই পুলিশ গিয়ে ধরে ফেলছে। কাউকে কাউকে ইফতার এবং তারাবির নামাজের সময়ও গ্রেফতার করছে।’
হেফাজত প্রধানের হঠাৎ করে এ ধরণের ‘ইউ টার্ন’কে তাদের আকাশ থেকে জমিনে পতনের সংগে তুলনা করা যেতে পারে। বিশেষ করে যে হাটহাজারিতে হেফাজত নেতা-কর্মীরা সবচেয়ে ভয়াবহ তান্ডব চালিয়েছে সেখান থেকে বাবুনগরীর এই বক্তব্য আত্মসমর্পনের সামিল।
ইতিমধ্যে হেফাজতের বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে সরকার।
১ এপ্রিল হেফাজতের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, মহাসচিব আল্লামা নুরুল ইসলামসহ ৫৪ নেতা-কর্মীর ব্যাংক হিসাব তলব করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। সচল করা হয় মতিঝিলের শাপলা চত্বরের ঘটনাসহ হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৭-৮ বছর আগের পুরনো মামলা। এসব মামলায় প্রথমে কর্মীদের, পরে স্থানীয় থেকে মধ্যম সারির নেতাদের এবং সর্বশেষ কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেফতার করছে সরকার।
এছাড়া হেফাজতের মূল ঘাঁটিখ্যাত চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভের পর গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর হেফাজতের তৎকালীন আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর ঘটনায় যে মামলা হয়েছিল, সেটিতে পরবর্তীকালে আমিরের দায়িত্ব পাওয়া জুনায়েদ বাবুনগরীসহ ৪৩ জন নেতাকে অভিযুক্ত করে ১২ এপ্রিল প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
এরপরই প্রতিক্রিয়া দেখান হেফাজতের প্রধান জুনায়েদ বাবুনগরী। সম্ভবত তিনি নিজেই এখন গ্রেফতার আতংকে আছেন। তাই সরকারের মন পাওয়ার জন্য বয়ান দিচ্ছেন। এখন তিনি বলছেন, ‘হেফাজত সরকারের বিরোধী নয়। তারা সরকারের পতনও চায় না। চাইলে এই সরকার আরো ২০০ বছর ক্ষমতা থাকুক।’