Bangladesh
১৯ মার্চ সশস্ত্র প্রতিরোধ দিবসের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির উদ্যোগ নেওয়া হবে
ঢাকা, ২০ মার্চ ২০২২: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ১৯ মার্চ একটি মাইলফলক। তাই এই দিনটিকে যথাযথ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির উদ্যোগ নেওয়া হবে।
শনিবার সকালে ১৯ মার্চ সশস্ত্র প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে গাজীপুর জেলা প্রশাসন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, দীর্ঘ কঠিন-কঠোর ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সবশেষ মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি। আর এ মুক্তিযুদ্ধ হঠাৎ করে শুরু হয়নি। বাঙালির এ দীর্ঘ ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামে যিনি সফল নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি হলেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে ২৬ মার্চের আগে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯ মার্চ গাজীপুরে সংগঠিত হয়েছিল প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধ। সেই প্রতিরোধযুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন হুরমত, নিয়ামত, মনু খলিফা ও কানু মিয়া। আহত হয়েছিলেন আরও অনেকে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই ১৯ মার্চ একটি মাইলফলক।
জেলা প্রশাসন মিলনায়তনে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান। এর আগে জেলা সার্কিট হাউজ প্রাঙ্গণে ১৯ মার্চ শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মারক ভাস্কর্য ‘অনুপ্রেরণা ১৯’ এ পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর আন্দোলন দুর্বল করতে অন্যান্য সেনানিবাসের মতো জয়দেবপুরের দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈন্যদের কৌশলে নিরস্ত্র করার জন্য তাঁদের অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় ঢাকা ব্রিগেড সদর দপ্তর। কিন্তু মুক্তিকামী বাঙালি সৈন্য ও স্থানীয় জনতা তাদের মতলব বুঝতে পেরে অস্ত্র জমা না দিয়ে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বাধা দেওয়ার জন্য সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করেন।
১৯ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যদের সতর্কতা ও রাস্তায় আন্দোলনকারীদের দেখে অস্ত্র জমা নেওয়ার আশা ত্যাগ করে ঢাকায় ফিরছিলেন। এ সময় ছাত্র-জনতা জয়দেবপুরের রেলক্রসিং এলাকা ও চান্দনা চৌরাস্তায় তাদের বাধা দেন। এ সময় পাকিস্তনি বাহিনী গুলি ছুড়লে ছাত্র-জনতা সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন হুরমত, নিয়ামত, কানু মিয়া ও মনু খলিফা। আহত হন আরও অনেকে।
এরই ধারাবাহিকতায় শুরুহয় সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রাম। তখন স্লোগান ওঠে ‘জয়দেবপুরের পথ ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’। পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে ওটাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধ।