Bangladesh
কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদে তিন মাসে মিললো ৪ কোটি টাকা
ঢাকা, ২ অক্টোবর ২০২২ : কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার রেকর্ড ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ টাকা পাওয়া গেছে।
এছাড়া সোনার গহনা ও বেশ কিছু বিদেশী মুদ্রা পাওয়া গেছে, যার মূল্য কয়েক লাখ টাকা। মসজিদের আটটি দানবাক্স ৩ মাস ১ দিন পর শনিবার (১ অক্টোবর) সকাল পৌনে ৯টায় খুলে ১৫টি বস্তা ভর্তি করে আনা হয়। এরপর দিনভর ওই টাকা গণনা করা হয়। কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শামীম আলম সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে গণমাধ্যমকে এ কথা জানান।
মসজিদ পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল পৌনে ৯টায় জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের আটটি দানবাক্স খোলা হয়। দানবাক্সগুলো খুলে টাকাগুলো প্রথমে ১৫টি বস্তায় ভরে গণনার জন্য আনা হয়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে টাকা গণনার কাজ শেষ হয়।
মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, মসজিদ ও কমপ্লেক্সের খরচ চালিয়ে দানের বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এ থেকে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেওয়া হয়। অসহায় ও জটিল রোগে আক্রান্তদের সহায়তাও করা হয় এ ফান্ড থেকে।
এর আগে গত ২ জুলাই দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছিল। তখন সেখানে জমা পড়েছিল ১৬ বস্তা টাকা। তা গণনা করে ওই সময় তিন কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ৪১৫ টাকা পাওয়া যায়। এছাড়া জমা পড়েছিল বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা ও রুপা।
জনশ্রুতি রয়েছে, এক সময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝপথে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে। মুসলিম-হিন্দু নির্বিশেষে সব ধর্মের লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়। ওই পাগল সাধকের দেহাবসানের পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী।
ওই সাধকের দেহাবসানের পর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে এলাকা এমনকি দেশের দূর-দূরান্তের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে সেখানে। মানত কিংবা দান খয়রাত করলে মনের বাসনা পূরণ হয়- এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সের হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ মানত নিয়ে আসেন এই মসজিদে। তারা নগদ টাকা-পয়সা, স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কারের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগিও দান করেন। বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার এ মসজিদে মানত নিয়ে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের ঢল নামে। আগতদের মধ্যে মুসলিমদের অধিকাংশই জুমার নামাজ আদায় করেন মসজিদে। এ ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরেরও অধিক সময়ের বলে জানা যায়।