Bangladesh

২৬ মার্চ মৃতপূরীতে পরিণত হয় ঢাকা ২৬ মার্চ
সংগৃহিত ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যার পর ঢাকার রাজপথের চিত্র

২৬ মার্চ মৃতপূরীতে পরিণত হয় ঢাকা

Bangladesh Live News | @banglalivenews | 26 Mar 2023, 10:46 am

বিশেষ প্রতিবেদন, ঢাকা, ২৬ মার্চ ২০২৩: পঞ্চাশের দশক থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সার্বক্ষণিক সঙ্গি ছিলেন মোমিনুল হক খোকা। দীর্ঘদিন বঙ্গবন্ধুর সান্বিধ্যে থাকায় তিনি ছিলেন পূর্বাপর অনেক ঘটনার নীরব সাক্ষী। বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে একাত্তেেরর ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার পর গোটা পরিবারের দায়িত্ব তিনি কাঁধে তুলে নেন। পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে তিনি আগলে রাখেন। এ সময় তিনি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সবাইকে নিয়ে আত্মগোপনে থেকেছেন। মোমিনুল হক খোকার ‘অস্তরাগে স্মৃতি সমুজ্জ্বল : বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবার ও আমি’ শিরোনামে স্মৃতিচারণামূলক গ্রন্থ থেকে ২৫ মার্চ পররবর্তী ঘটনাবলী তুলে ধরা হলো:

২৬ মার্চ সকালেই রেডিওতে বারবার এক অবাঙালি কণ্ঠে বিকৃত উচ্চারণে  ঘোষণা হতে থাকে ‘কারফিউ, কারফিউ, সারা শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে, রাস্তায় কাউকে দেখা গেলে গুলি করা হবে।’ সারা শহর যেন মৃতপূরী, এক অবরুদ্ধ নগরীতে রূপান্তরিত হলো ঢাকা। বঙ্গবন্ধুর কি হলো, গিন্নি বারবার বলছে, ‘একটু চেষ্টা করে দেখ, যেতে পার কী না? মনে করো মিঞাভাইর (বঙ্গবন্ধু) সে রাতের কথাগুলো।’ আমি এক সময়ে ছুটে বের হলাম। কিন্তু বেশি দূর যেতে পারলাম না, পাক সৈনিকদের যত্রতত্র যখন-তখন গুলিবর্ষণ চলছে। এর মধ্যে যাওয়া সম্ভব হলো না, ফিরে এলাম। সকালেই রেডিওতে প্রচার করা হয়েছিল যে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। কিন্তু গত রাত বিভীষিকার মধ্যে কাটিয়ে কারো বুঝতে বাকি ছিল না তিনি কী বলতে যাচ্ছেন।

তিনি তাঁর ভাষণে ঢাকায় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনার ব্যর্থতার জন্য সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে দায়ী করে অসহযোগ আন্দোলনকে রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক কাজ এবং শেখ মুজিবর রহমান ও তার দলকে পাকিস্তানের শত্রু বলে অভিহিত করেন। নিত্যকার অভ্যাসমতো রাত দশটায় বি বি সি’র ইংরেজি সংবাদ শুনি। বি বি সি সংবাদের শুরুতেই প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ভাষণের উল্লেখ করে এবং শেষ করে এই বলে যে জানা গেছে শেখ মুজিবর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা  ঘোষণা করেছেন।

সারা রাত বিনিদ্র অবস্থায় কাটিয়ে  ভোর হবার আগেই বের হয়ে যাই। ঢাকা শহরে তখনও কারফিউ। আমি বাসা থেকে বেরিয়ে মূল সড়ক এড়িয়ে লালমাটিয়ার মধ্য দিয়ে ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার বিভিন্ন বাড়ির দেয়াল টপকে পৌছে যাই আহমেদ ফজলুর রহমান সাহেবের বাসায়। সেখান থেকে আবার লুকিয়ে লুকিয়ে ৩২ নম্বরের পাশের রাস্তায় বাহাউদ্দিন সাহেবের বাসায় পৌছে যাই। তখন  ভোর হয়ে গেছে। বাহাউদ্দিন সাহেবের স্ত্রী সরকারি চাকুরে, আমাকে দেখে চমকে উঠলেন। বল্লেন, ‘খোকা ভাই, গতরাতে দেয়াল টপকে কামাল ও মহীউদ্দিন (বঙ্গবন্ধুর বডিগার্ড) এসেছিল। ওরা আজকে সকালে চলে গেছে, কিন্তু কোথায় গেল তা বলে যায়নি, আর ৩২ নম্বরের কথা তো কিছুই বলতে পারছি না।’

বাহাউদ্দিন সাহেবের ওখান থেকে আবার এ-বাড়ি ও-বাড়ি করে ৩২ নম্বরে পৌছে যাই। ৩২ নম্বর তখন যেন এক বহুদিনের পরিত্যক্ত বাড়ি।  গোটা বাড়ির ওপর দিয়ে যে তাণ্ডব বয়ে গেছে তার স্বাক্ষর ছড়িয়ে আছে সর্বত্র। কোথাও কোনো সাড়াশব্দ নেই। নিঃশব্দে দাড়িয়ে থাকি কিছুক্ষণ। আবার দেয়াল টপকে পৌছে যাই পাশের বাড়ি। বাসার নিচের তলাতে দেখি ভাবী, জামাল ও রাসেল বসে আছে। আমাকে দেখে ভাবী ‘ভাডি, তুই আইছিস’ বলে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। ‘তোর মিঞাভাইকে ওরা নিয়ে গেল, আমরা এখন কোথায় যাব”- ভাবীর কথায় মনে হলো যেন কাল সারা দিন তারা আমারই প্রতীক্ষায় কাটিয়েছে। আমি ভাবীকে প্রবোধ দিলাম, ‘চিন্তা নেই ভাবী, আমি তো আছি। আপনারা আর একটু থাকুন, আমি আমার গাড়িটা নিয়ে আসি।

আমি বাসার বাইরে এসে রাস্তায় দাঁড়িয়েছি, দেখি দূর থেকে একটা গাড়ি আসছে। গাড়িটা হঠাৎ এসে আমার সামনে থামলো। দেখি গাড়ির চালক কামালের বন্ধু তারেক (ব্যারিস্টার আজমল হোসেন, কিউ সি)। আমাকে দেখে বল্ল ‘চাচা, কোথায় যাবেন, চলুন আমি আপনাদেরকে নামিয়ে দেই। ’ভাবী, জামাল ও রাসেলকে নিয়ে আমি তারেকের গাড়িতে ধানমন্ডির দুই নম্বর রোডে আমার আত্মীয় ও বন্ধু মোরশেদ মাহমুদের বাসায় যাই। তারেক আমাদেরকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। মোরশেদ মাহমুদের বাসায় গিয়ে দেখি সবাই বাক্স-প্যাটরা গুছিয়ে বাসা ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমি ভাবীকে বল্লাম, ‘আপনারা একটু বসুন এখানে, আমি জাকী ভাইর বাসা থেকে আমার গাড়িটা নিয়ে আসছি’। ভাবীর তখন অপ্রকৃতিস্থ অবস্থা, থেকে থেকেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছেন আর বলছেন, ‘তোর মিঞাভাইর জন্য চিন্তা করছি না, কামাল (বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে) যে কোথায় গেল?’ জাকী ভাইর বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে এসে ভাবী ও সবাইকে গাড়িতে তুলি। কিন্তু ঠিক করতে পারি না কোথায় যাওয়া যায়।

কারফিউ শিথিল করা হয়েছে বিকেল চারটা পর্যন্ত। ঢাকাবাসী প্রাণভয়ে ছুটছে শহরের বাইরে। চিন্তায় যখন অস্থির, তখন গাড়ির মধ্যেই হঠাৎ করে মনে এলো বন্ধু ক্যাপ্টেন রহমানের কথা। তার বাসা ধানমন্ডি ১৫ নম্বর রোডে। সবাইকে নিয়ে উঠলাম তাঁর বাসায়। এমন সময়ে জাকী ভাইর বাসা থেকে খোঁজ নিয়ে শেখ কামাল এবং আরও কিছু পরে মিঞাভাইর প্রেস সচিব আমিনুল হক বাদশা এসে পৌছে এ বাসাতে। ক্যাপ্টেন রহমান তার স্ত্রীকে তৎক্ষণাৎ সবার নাস্তার আয়োজন করতে বল্লেন, আরো বল্লেন, কাউকে দিয়ে দোকান থেকে একটা ব্লেড নিয়ে আসতে। এরই মধ্যে কামালও এসেছে।

সারা রাত কোন্ বন্ধুর বাসায় কাটিয়েছে। ক্যাপ্টেন রহমান আমাকে ও কামালকে বল্লেন গোফ কামিয়ে ফেলতে। এক ফাকে আমাকে বল্লেন, ‘তুই তো জানিস, আমি সরকারি কর্মকর্তা, তাই আমাকে এক্ষুণি অফিসে পৌছতে হবে। আমি শিপিং-এর এক ভদ্রলোকের সঙ্গে বন্দোবস্ত করে ফেলেছি। কিছুদিনের মধ্যেই সে একটা লঞ্চ ঠিক করে দেবে যাতে করে আমরা সবাই ভারতে চলে যাব।’ এরপর ক্যাপ্টেন রহমান অফিসে রওয়ানা হয়ে গেলেন। (চলবে)

সর্বশেষ শিরোনাম

পবিত্র শবে কদর আজ Sat, Apr 06 2024

অচিরেই পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি শান্ত হবে: কাদের Sat, Apr 06 2024

টাকা লুট আর সক্ষমতা জানান দিতেই কেএনএফের হামলা: র‌্যাব Sat, Apr 06 2024

পরিবারের কাছে ফিরেছেন সোনালী ব্যাংকের অপহৃত সেই ম্যানেজার Sat, Apr 06 2024

উত্তপ্ত বান্দরবান, পরিস্থিতি পরিদর্শনে যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী Fri, Apr 05 2024

বান্দরবানে অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজার উদ্ধার Fri, Apr 05 2024

জনপ্রতিনিধিদের জনগণের সেবা করার মাধ্যমে ভবিষ্যত ভোট নিশ্চিত করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর Fri, Apr 05 2024

বান্দরবানে চলছে যৌথবাহিনীর অভিযান Fri, Apr 05 2024

তারেক রহমান নেতৃত্বে থাকলে বিএনপি এগুতে পারবে না: ওবায়দুল কাদের Fri, Apr 05 2024

মেট্রোরেলে ১ জুলাই থেকে ভ্যাট কার্যকর Thu, Apr 04 2024