Bangladesh
মেয়েকে নয়, বাবুল আক্তারকেই বিশ্বাস করেছিলেন মিতুর বাবা-মা
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা, ১৪ মে ২০২১: সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের পাশের ফ্লাটেই থাকতেন এনজিওকর্মী গায়েত্রী অমর সিংহ। নিজেদের মধ্যে সখ্যতার সুযোগে বাইরে ঘুরতে যেতেন। গায়েত্রী অমর সিংহের বাচ্চা দেখভাল করতেন মাহমুদা খানম মিতু (নিহত) নিজেই!
বাবুল ও গায়েত্রীর ঘনিষ্ঠতা নিজ চোখে দেখার পর ‘দুই বাচ্চাকে নিয়ে নিজের অসহায়ত্বের কথা’ বাবা-মাকে জানিয়েছিলেন মিতু। এত কিছুর পরও বাবুল আক্তারকেই বিশ্বাস করেছিলেন তার বাবা-মাসহ আত্মীয়-স্বজনরা।
নির্মমভাবে মিতুকে হত্যার পর শাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে বাবুল আক্তারের কান্না, আহাজারি, মৃত মিতুর পা ধরে কান্না করা, কবরের সামনে বিলাপের দৃশ্য দেখে মিতুর শত অভিযোগ-অনুযোগ ভুলে গিয়েছিলেন তারা। তবে বিচক্ষণ সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন (মিতুর বাবা) উদ্যোগী হয়ে খোঁজ নেন, ফোন রেকর্ডে থাকা বাবুলের সঙ্গে মুছার রোমহর্ষক কথোপকথন শোনেন। সবকিছু আস্তে আস্তে পরিষ্কার হয় তার কাছে। একপর্যায়ে নিজের মেয়ে মিতু হত্যায় বাবুলকে দোষারোপ করেন বাবা মোশাররফ হোসেন।
বৃহস্পতিবার নিজ বাসায় এমন তথ্যই দেন মিতুর বাবা।
তিনি বলেন, "পারিবারিক কলহ ছিল। মারধরও করা হয়েছে মিতুকে। এরপরও বাবুল আক্তারকে সমর্থন করে গেছি। চট্টগ্রামে বদলি হওয়ার পর নতুন ঝামেলা তৈরি হয়। সেখানে গায়েত্রী অমর সিংহের সঙ্গে তার (বাবুল আক্তার) ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। আপত্তিকর অবস্থাতেও দুজনকে দেখতে পায় মিতু।"
মিতুর বাবা বলেন, "সুদান মিশনে যাবার পর গায়েত্রী বাবুলের ব্যবহৃত ফোনে অনেক ম্যাসেজ পাঠায়। সেসব ম্যাসেজে আবার কিছু হুমকিও ছিল। মিতু আমাকে জানিয়েছিল। বাসাতেও জানিয়েছিল। তবে, আমি বলেছিলাম কোনো হুমকির জবাব দেওয়ার দরকার নেই। জবাব দিলে আবারও হুমকি আসবে।"
সুদান থেকে প্রতি তিন মাস পরপর দেশে ছুটিতে আসত বাবুল আক্তার। কিন্তু সে উঠত ঢাকায়। কখনো মিতু তা জানত, কখনো জানত না। ঢাকায় হোটেলে গায়েত্রীকে নিয়ে থাকত বাবুল। এসব কিছু জেনেও চুপ ছিল মিতু। কোনো কোনো সময় সে বলেছে, বাবুলের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না। বিচ্ছেদের ব্যবস্থা করেন।
পারিবারিক অশান্তি-কলহ চরমে ওঠার পর মিতু একবার ফ্যানে ঝুলে সুইসাইড (আত্মহনন) করতে চেয়েছিল। কখনো সারা রাত বাইরে সিঁড়িতে বসে রাত কাটাত। ছেলে মাহির ও মেয়ে জারার মুখের দিকে তাকিয়ে মুখ বুঝে সহ্য করেছে সে।
মা শাহিদা মোশাররফ বলেন, "সে আমার বড় মেয়ে। ১৬ বছরের সংসারে ওর কপালে সুখ জোটেনি। এটা মা হিসেবে জেনেও চেপে থাকতে হয়েছে, মেয়ের সংসারে স্বার্থে।"