Bangladesh
জুয়ায় নি:স্ব যুবকের হাতে মা-ছেলে খুন!
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা, ১২ জুলাই ২০২২: নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার গোবান্দি এলাকায় নম্র-ভদ্র হিসেবেই পরিচিত সাদিকুর সাদি (২৪)। কারো সঙ্গে কখনো বিবাদ-ঝগড়াও করেনি। সেই সাদিই হঠাৎ পরিকল্পনা ছাড়াই খুন করে নিরীহ দুজনকে।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বলছে, আইপিএল ঘিরে জুয়া খেলে নিজের সব টাকা খুইয়েছে। ধার করে আরো ৭০ হাজার টাকা ঢালে জুয়ায়। কিন্তু জুয়ায় ভাগ্যে ফেরেনি সাদির। ধারের চাপে বিপর্যন্ত সাদি পাশের বাড়ির ভাবির কাছে ১০ হাজার টাকা ধার চায়ে। টাকা না পেয়ে স্বর্ণালঙ্কারের লোভে ভাবি রাজিয়া সুলতানা কাকুলি ও তার ৮ বছরের শিশু সন্তান তালহাকে গলাকেটে হত্যা করে।
গত ২ জুলাই রাতে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানাধীন গোবান্দি এলাকার নিজ বাসায় কাকুলি ও তার শিশু সন্তান তালহাকে খুনের ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার তদন্তে ঘরের পাশে একটি সুপারি গাছে লাগা মাটি দেখে ক্লুলেস এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরে গত শনিবার (৯ জুলাই) নিজ বাসা থেকে সাদিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রোববার (১০ জুলাই) হত্যাকাণ্ডে নিজের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি দেয় সাদি।
সোমবার (১১ জুলাই) রাজধানীর ধানমন্ডি পিবিআই প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার।
হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় পিবিআই সদস্যরা দেখতে পান কাকুলির ঘরের পেছনে একটি সুপারি গাছে মাটি লেগে আছে। দেখে মনে হচ্ছে কেউ বেয়ে উঠেছে, তবে সেই গাছে সুপারি নেই। আবার গাছ বেয়ে ওই ঘরে প্রবেশের সুযোগও নেই। তবে গাছে উঠে ঘরের বাথরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে ভেতরে দেখা যায়।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কিংবা ঘটনার সময় গাছ বেয়ে কেউ উঠে গেছে ধারণা থেকেই খোঁজ করতে থাকেন পিবিআইর তদন্ত সংশ্লিষ্ট সদস্যরা। একপর্যায়ে জানা যায়, বাড়ির পেছনে ফ্রি ওয়াইফাই সংযোগ থাকায় কাকুলির ভাসুরের ছেলে অজিদ কাজীসহ (১৬) কয়েকজন সেখানে বসে ভিডিও গেমস খেলে।
অজিদ কাজীকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে জানায়, ২ জুলাই রাতে সে ওই ঘরের পেছনে বসে অনলাইনে গেমস খেলছিল। আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ কাকুলির ছেলে ভিকটিম তালহার চিৎকার শোনা যায়। এরপরই বাথরুমে কাউকে হাত ধুতে শোনা যায়। এরপর অজিদ কৌতুহলবশত সুপারি গাছ বেয়ে উপরে উঠে ভেন্টিলেটর দিয়ে ঘরের ভেতরে হাত ধোয়া অবস্থায় সাদিকে দেখতে পায়। এরপর সাদিকে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে দেখে অজিদ। সে ভাবে তার কাকি কাকুলির সঙ্গে সাদির অবৈধ সম্পর্ক আছে এবং বিষয়টি চেপে যায়। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে সাদিকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।