Bangladesh
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২৭ দিনে ৯ খুন
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা, ২৯ অক্টোবর ২০২২: কক্সবাজারে উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির বা ক্যাম্পগুলোতে ক্রমে দীর্ঘ হচ্ছে খুনোখুনির তালিকা। চলতি মাসেই ক্যাম্পগুলোতে খুন হয়েছেন ৯ জন। গত ৫ মাসে এ সংখ্যা ঠেকেছে ২৫ জনে। এসব খুনের মামলায় যারা বাদী বা সাক্ষী হয়েছেন, তাদেরই পরবর্তী সময়ে খুন করা হয়েছে বলে দাবি রোহিঙ্গাদের।
আবার খুনের শিকার হওয়া রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতা (মাঝি) ও স্বেচ্ছায় পাহারারত স্বেচ্ছাসেবক। এর ফলে চরম আতঙ্ক নিয়ে সময় পার করছেন সাধারণ রোহিঙ্গারা। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে ক্যাম্পের আশপাশের স্থানীয়দেরও।
খুনের শিকার রোহিঙ্গাদের স্বজন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেওয়া তথ্য মতে, ক্যাম্পে মাদক-অপহরণসহ নানা অপরাধে জড়িতদের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা বা কোনো মামলার সাক্ষী হলেই দুর্বৃত্তদের টার্গেটে পড়ছেন সাধারণ রোহিঙ্গারা। এরপর যাকে তাদের বাধা মনে হচ্ছে, তাকে খুন করে ‘সরিয়ে দেওয়া’ হচ্ছে। আবার এমন অপরাধ করেও পাহাড় বেষ্টিত ক্যাম্প থেকে সহজে আত্মগোপনে চলে যেতে পারছে খুনীরা। এ কারণে খুন করার আগে তাদের তেমন ভাবতেও হচ্ছে না।
"আমাদেরই মাঝে একটি চক্র, অদৃশ্য ইশারায় অপরাধ ঘটাচ্ছে। আমাদেরই নির্যাতন করছে, কথায় কথায় খুন করছে। আমরা পুলিশকে এসব বিষয় জানিয়েছি। যারাই অপরাধীদের বিষয়ে জানিয়েছে, মামলার বাদী হয়েছে, স্বাক্ষী হয়েছে, তাদেরই টার্গেট করে দুর্বৃত্তরা মেরে ফেলছে এ।"
এ অবস্থায় সাধারণ রোহিঙ্গাদের জীবনের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ অভিযান চালানোর দাবি জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা।
সর্বশেষ গত ২৭ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) ভোরে কুতুপালং ১৭ নম্বর ক্যাম্পের সি ব্লকের বাসিন্দা কেফায়েত উল্লাহর ছেলে আয়াত উল্লাহ (৪০) এবং মোহাম্মদ কাসিমের ছেলে ইয়াছিনকে (৩০) গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ভোরে ১৫-২০ জনের একদল দুর্বৃত্ত ক্যাম্পে সশস্ত্র হামলা চালায়। তারা আয়াত উল্লাহ এবং ইয়াছিনকে বাড়ি থেকে বাইরে এনে গুলি করে পালিয়ে যায়। এরপর ঘটনাস্থলেই ইয়াছিন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পথে আয়াত উল্লাহ মারা যান।
এ নিয়ে ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক (এডিআইজি) সৈয়দ হারুনুর রশিদ জানিয়েছেন, কে বা কারা, কেন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কয়েকজনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
২০১৭ সালে মানবিকতার কারণে অনেকের ঘরের উঠানেও রোহিঙ্গাদের ঘর করে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। সেটাই এখন কাল হয়েছে স্থানীয়দের। ক্যাম্পের আশপাশে রয়েছে বিপুল সংখ্যক স্থানীয় পরিবার। রোহিঙ্গা দুর্বৃত্তদের কারণে নিজ দেশে পরবাসীর মতোই সন্ধ্যার পর প্রয়োজনেও ঘর থেকে বের হতে ভয় পান স্থানীয় মানুষ।