Bangladesh
সহকর্মীদের ঈদ পালনের সুযোগ দিয়ে স্বাস্থ্যসেবায় অমুসলিমরা
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা, ২২ জুলাই ২০২১: ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ। মুসলমানদের ঈদ থেকে শুরু করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা আর খ্রিস্টানদের বড়দিন এবং বৌদ্ধদের বুদ্ধ পূর্ণিমার উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে যায় দেশের সবার মাঝে। এবারের ঈদুল আজহাতেও সে আমেজের কমতি হয়নি। অন্যবারের মতো মুসলিম সহকর্মীদের পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উদযাপনের সুযোগ দিয়ে এবারও রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত অন্য ধর্মাবলম্বী চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা। নিজেদের পরিবার-পরিজন ছেড়ে তারা রোগীদের সঙ্গে ভাগাভাগি করছেন ঈদ আনন্দ।
রাজধানীর কোভিড ডেডিকেটেড কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত ডা. দীপঙ্কর রায় তার সহকর্মী ডা. মারুফ হাসানকে পরিবার-স্বজনদের সঙ্গে ঈদ পালনের সুযোগ করে দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে ডা. দীপঙ্কর বলেন, আমি নিজে থেকেই তাকে বলেছি, আজ ডিউটিতে না এসে রোস্টার অনুযায়ী অন্যদিন দায়িত্ব পালন করতে। কারণ, আমাদের পূজাসহ বিভিন্ন সময়ে তিনি আমাকে সহযোগিতা করেন। তাই ঈদে তাকে সুযোগ করে দেওয়া আমার দায়িত্ব।
তিনি বলেন, করোনার কারণে ডা. মারুফ গত দুই ঈদ বাসায় করতে পারেননি। আমরা একসঙ্গে ডিউটি করেছি। তাই এ ঈদের ডিউটির দায়িত্বটা আমিই নিয়েছি। হাসপাতাল এমন এক জায়গা, যেখানে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হলে সেটি আর বন্ধ হয় না। ক্রমাগত রোগী আসতে থাকলে, কর্মরত চিকিৎসকদেরও দায়িত্ব পালন করে যেতে হয়। হোক সেটা ঈদ বা পূজা। সেক্ষেত্রে কাউকে না কাউকে তো সেবায় এগিয়ে আসতে হবে।
দীর্ঘদিন পর পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটানোর সুযোগ পেয়ে খুশি ডা. মারুফ হাসান অভিও। সহকর্মীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ডা. দীপঙ্কর আমার সঙ্গে ডিউটি চেঞ্জ করে নিয়েছেন। আমি মঙ্গলবারও নাইট ডিউটি করেছি। আর আজ বুধবার ঈদ হওয়ায় তিনি আমাকে বললেন, ‘পরিবারের সঙ্গেই থাকুন, আজকের দিন আমি দেখছি’। এটি ধর্মীয় সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। আর এটি কেবল বাংলাদেশেই সম্ভব।
শুধু ডা. দীপঙ্করই নন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের মতো অন্যান্য হাসপাতালেও এমন সম্প্রীতি দেখা গেছে। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. প্রজ্ঞা পারমিতা অঙ্কুর এবারের ঈদে রোগীদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন। তিনি বলেন, আমরা দুজন সনাতন ধর্মাবলম্বী সহকর্মী ঈদে দায়িত্ব পালন করছি। এ নিয়ে চারটি ঈদ হাসপাতালেই করছি। রোগীদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করছি। ভালোই লাগছে।
ডা. প্রজ্ঞা বলেন, করোনার কারণে হাসপাতালের পরিবেশ খুবই ভয়াবহ। সরাসরি রোগীদের কাছে আমাদের যেতে হচ্ছে, চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। তারপরও ভালো লাগছে। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ও আনন্দের সময়টা রোগীদের সঙ্গে থাকতে পারছি, চিকিৎসা দিতে পারছি।