Bangladesh
আজ রূপপুরে পরমাণু জ্বালানি হস্তান্তর : ৬২ বছরের অপেক্ষার অবসান
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা, ৫ অক্টোবর ২০২৩ : আজ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (আরএনপিপি) পারমাণবিক জ্বালানি হস্তান্তর অনুষ্ঠান (গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান) ঈশ্বরদীর প্ল্যান্ট সাইটে অনুষ্ঠিত হবে।
এতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভার্চুয়ালি যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। একটি সরকারী সূত্রে জানানো হয়েছে, দুই নেতার ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পারমাণবিক জ্বালানির সনদ ও মডেল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে যোগদান করার কথা রয়েছে।
এর মাধ্যম ৬২ বছরের অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। বাংলাদেশে পারমাণবিক মর্যাদার শুরুটা ১৯৬১ সালে। সেসময় পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে পদ্মা নদী তীরবর্তী পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। পরে নানা সীমাবদ্ধতায় সেটি বন্ধ হয়ে যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। ধীরে ধীরে প্রকল্পের কাজ এগোতে শুরু করলেও পঁচাত্তর-পরবর্তীকালে তা আবারও স্থবির হয়ে পড়ে। এভাবেই নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অবশেষে ছয় দশকের অপেক্ষার অবসান হচ্ছে। রাশিয়ার ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে ইউরেনিয়াম জ্বালানির যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প দেশের রাজনৈতিক বিভিন্ন কালপর্বে বারবার বাধার মুখে পড়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার দুই দশক পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে আবারও প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নিউক্লিয়ার অ্যাকশন প্ল্যান নেয়। এর এক যুগ পর ২০০৮ সালে নতুন করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ শুরু হয়। এরপর বর্তমান সরকারের টানা তিন মেয়াদে প্রায় ১৫ বছরে প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, পারমাণবিক শক্তি কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জানা গেছে, পাকিস্তান আমলে ১৯৬১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরের বছর ১৯৬২ সালে বর্তমান বাংলাদেশের পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থানার রূপপুরে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের স্থান নির্ধারিত হয়। এরপর নানা সমীক্ষার মাধ্যমে সম্ভাব্যতা যাচাই করে ২৯২ একর জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। এরমধ্যে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের জন্য ২৬০ একর এবং আবাসিক এলাকার জন্য বরাদ্দ ছিল ৩২ একর জমি। সাত বছরে ভূমি উন্নয়ন, অফিস, রেস্ট হাউজ, বৈদ্যুতিক উপ-কেন্দ্র ও কিছু আবাসিক ইউনিটের নির্মাণকাজ আংশিক সম্পন্ন হলেও ১৯৬৯ সালে প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত বাতিল করে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার।
স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালে পুনরায় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে বঙ্গবন্ধুর সরকার। তবে ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তা আবারও বন্ধ হয়ে যায়।