Bangladesh
রুশ ভাষায় কথা বলে বাংলার গ্রামের মানুষ
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা, ২৫ অক্টোবর ২০২১: শুনতেও অবাক লাগে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকার মানুশ রুশ ভাষায় কথা বলে। বাস্তবে তেমনিটই ঘটছে। পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থানার প্রত্যন্ত গ্রাম রূপপুরে গরে উঠছে বাংলাদেশের প্রথম পারমানবিক কেন্দ্র। এই কেন্দ্র নির্মাণকে উপলক্ষ কওে কয়েক বছর ধরে এখানে বসবাস কয়েক হাজার খানেক রুশ নাগরিক। তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষপত্র কিনতে হাজির হয় স্থানীয় বাজারে। তাদের কাছে পণ বিক্রির সুবিধার্থে স্থানীয় মানুষ দ্রুত শিখে নিচ্ছেন রুশ ভাষা। রাশিয়ানরাও বিদেশীদের তাদের ভাষায় কথা বলতে শুনে আপ্লুত।
বাস্তবে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের কল্যাণে এই এলাকার দৃশ্যপট পুরোটাই পাল্টে গেছে। এলাকার-বিপণিবিতান, বিদ্যালয়, সুউচ্চ ভবন, আন্তর্জাতিক মানের হোটেল-রেস্টুরেস্ট, রিসোর্ট এখন মুখরিত। এখানকার কাঁচা বাজারগুলোতেও রাশিয়ানদের ছোঁয়া লেগেছে। দোকানের সাইনবোর্ডে ইংরেজির পাশাপাশি রাশিয়ান ভাষাও লেখা রয়েছে। ফল ও সবজি বিক্রেতারাও রাশিয়ান ভাষা শিখেছেন। তারা রাশিয়ান ভাষায় কথা বলছেন। তাদের মতে, রাশিয়ানদের সঙ্গে মালামাল ক্রয়-বিক্রয় করতে করতে তাদের ভাষা শিখেছেন।
শুধু রূপপুর নয়, পার্শ্ববর্তী পাকশী, সাহাপুর ও ঈশ্বরদী শহরেও পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। পাল্টে গেছে জীবনচিত্র। পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতুর পাশেই নদীতীরে চলছে এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের সবচেয়ে মেঘা প্রকল্পের কাজ।
রূপপুর প্রকল্পে কাজের সুযোগ পেয়েছেন কয়েক হাজার বেকার যুবক। তাদের ভাগ্য যেমন বদলে গেছে, তেমনি বদলে গেছে সামাজিক চিত্রও। বেড়েছে জমির দাম।
রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস জানান, এই প্রকল্পে কমবেশি ২০ হাজার প্রকৌশলী-শ্রমিক সর্বদা কাজ করছেন। রাশিয়া, বেলারুশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় দুই হাজার বিদেশি শ্রমিক ও কর্মকর্তারা দিনরাত পরিশ্রম করছেন। বাকিরা এ দেশের।
এর বাইরে চারপাশে গড়ে ওঠা হোটেল, রিসোর্ট, বিপণিবিতানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও কর্মসংস্থান হয়েছে হাজারো কর্মহীন মানুষের। বিদেশি নাগরিকদের কেনাকাটাসহ দৈনন্দিন নানা প্রয়োজন মেটাতে পাকশী, সাহাপুর, রূপপুর ও ঈশ্বরদী শহরে গড়ে উঠেছে একাধিক বিপণিবিতান, আধুনিক শপিংমল, সুপার শপ, রিসোর্ট ও তারকা হোটেল। উন্নতমানের হাসপাতালও নির্মাণ করা হয়েছে।
এলাকার রিসোর্টগুলো ঘুরে দেখা গেছে, অনেক রুশ নাগরিক অবসর সময় কাটাচ্ছেন। স্থানীয় স্বপ্নদ্বীপ, পাকশী রিসোর্ট, হার্ডিঞ্জ সেতুতে শুক্রবার ও শনিবার ছিল রাশিয়ানদের পদচারণায় মুখর। এখানে রুশ ভাষায় সব কিছু লেখা রয়েছে। পোশাক-আসবাবপত্রের দাম ও মান সবই আমরা রাশিয়ান ভাষায়। ইংরেজি না বোঝায় প্রথম দিকে বিড়ম্বনার সম্মখীন হলেও এখন আর সমস্যা হয় না। এখানে যারা ব্যবসা করছেন বা করবেন সবাইকে রাশিয়ান ভাষা শিখতে ও জানতে হবে। কাঁচামাল বিক্রেতারাও রাশিয়ান ভাষা শিখছে।