Bangladesh

এশিয়ার ‘আয়রন লেডি’ শেখ হাসিনা : দ্য ইকোনমিস্ট
ঢাকা, ২৬ মে ২০২৩ : বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকা নারী সরকারপ্রধান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনকি নারী ও পুরুষ সরকারপ্রধানদের মধ্যেও তিনি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যদের একজন। দেড় দশক ধরে টানা ক্ষমতায় থাকা বাংলাদেশের এই সরকারপ্রধান ১৭ কোটি মানুষের দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার ক্ষমতার মেয়াদের বেশিরভাগ সময়ে দেশের গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ রয়েছে।
৭৫ বছর বয়সী প্রধানমন্ত্রী তার দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সবমিলিয়ে মোট চারবার তার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন হয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে পরপর তিনটি নির্বাচনে জয়লাভ করেছে দলটি। যা ইন্দিরা গান্ধী বা মার্গারেট থ্যাচারের ক্ষমতার সময়কালের চেয়েও বেশি। আগামী বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওই নির্বাচনেও তিনি জয়ী হবেন বলে আশা করছেন।
সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্দার্ন ভার্জিনিয়ার হোটেল স্যুটে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছে ব্রিটেনের বিখ্যাত সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট। সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ নিয়ে তার স্বপ্ন ও উচ্চাশার বিষয়ে জানতে চায় ব্রিটিশ সাময়িকী। বুধবার (২৪ মে) ‘এশিয়ার লৌহ মানবী শেখ হাসিনা’ শিরোনামে সেই সাক্ষাৎকার এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের বিশ্লেষণ প্রকাশ করে দ্য ইকোনমিস্ট।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি এই দেশকে একটি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশ করতে চাই।’ তারপর ভয়াবহ ইতিহাসের কথা উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আপনি কী ভাবতে পারেন, তারা আমার বাবাকে হত্যা করেছে।’
ইকোনমিস্ট লিখেছে, তার বাবা ও বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কাছ থেকে দেশটির রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা লাভের চার বছর পর ১৯৭৫ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন। তার ১৭ জন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কেও হত্যা করা হয়। সেই সময় শেখ হাসিনা ইউরোপে থাকায় বেঁচে যান।
‘তারা আমার দুই ভাই, আমার মা, আরেক ভাইকে হত্যা করেছে মাত্র দশ বছর বয়সী! আমার দুই বোন জামাই (কাজিন), আমার একমাত্র চাচা, একজন প্রতিবন্ধী, তাকেও হত্যা করেছে’। এসব কথা বলার সময় তার চোখ অশ্রুতে ভিজে যায়।
তার উপদেষ্টারা এই সাক্ষাৎকারগ্রহণকারী ইকোনমিস্টের প্রতিবেদককে সেই দীর্ঘকাল আগের ট্র্যাজেডি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করতে বলেছিলেন। প্রতিবেদক সেটি জিজ্ঞেস না করলেও শেখ হাসিনা তা তুলে ধরেন। কোনও রাজনীতিকই সমালোচনা পছন্দ করেন না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের অন্যান্য সব সরকারের চেয়ে ব্যতিক্রম বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।
দুর্নীতির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি তার বাবার স্থলাভিষিক্ত হওয়া সামরিক সরকারকে দায়ী করেন। একই সঙ্গে তার সরকারের সদস্যদের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে একটি প্রকল্পের অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ার ঘটনায় বিশ্বব্যাংককে অভিযুক্ত করেন। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির যে অভিযোগ তুলেছিল, সেটির কোনও অস্তিত্ব ছিল না বলেও দাবি করেন তিনি।
দুর্নীতির বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, হয়তো নিচের স্তরে আছে। তবে আজকাল তেমন নেই। তারা দুর্নীতির সাহস করলেও আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।