Bangladesh
চিরায়ত রূপ ছেড়ে হঠাৎ বিধ্বংসী তিস্তা
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা, ৮ এপ্রিল ২০২২: ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের গেট খুলে দেওয়ায় ও উজানে ভারী বৃষ্টিপাতে ফসল ডুবে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে হাজারো কৃষকের। প্রতি বছর মার্চ ও এপ্রিল মাসজুড়ে তিস্তার নদী হয়ে যায় ধু ধু বালুচর। প্রখর রোদে বালুময় তিস্তা হেঁটে পাড় হন চরাঞ্চলবাসী। প্রায় ৩৫ বছর পর এই প্রথম সেই চিত্র পাল্টে গেছে।
অসময়ে ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের গেট খুলে দেওয়ায় ও উজানে ভারী বৃষ্টিপাতে তিস্তার পানি হু হু করে বাড়ছে। এতে ডুবে গেছে কয়েক হাজার বিঘা জমির মরিচ-পেঁয়াজ, রসুন, ভুট্টা, গম ও মিষ্টিকুমড়া ক্ষেত। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিস্তাপাড়ের লাখো কৃষক।
এপ্রিল মাসে তিস্তার এরকম বন্যায় হতবাক চরাঞ্চলের কৃষক। এসময় তিস্তার বুকে যে চাষাবাদ হয় তা দিয়ে তাদের চলে ১২ মাস। অসময়ের এ বন্যায় তিস্তার চরে কৃষকরা নিঃস্ব হয়ে গেছেন। বাকি দিনগুলো পরিবার-পরিজন নিয়ে কীভাবে কাটাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হাজারো কৃষক। অন্যদিকে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তাপাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি ছিল ৫১ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ১১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিস্তা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ব্যারাজের ১১টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। মার্চের শেষ সপ্তাহে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে মাত্র তিন হাজার কিউসেক পানি ছিল। এক সপ্তাহের ব্যবধানে তা বেড়ে বৃহস্পতিবার দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার কিউসেকে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘গতকালের (বুধবার) চেয়ে তিস্তার পানি কিছুটা কমেছে। গত সাতদিনে তিস্তায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা এলাকার পাটচাষি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রতি বছর শুকিয়ে যাওয়া তিস্তা নদীতে পাটচাষ করি। এবারো করছি। কিন্তু হঠাৎ নদীর পানি বাড়ায় সব ডুবে গেছে।’
হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের দোয়ানী গ্রামের কৃষক আয়নুল হক বলেন, ‘সাতদিন ধরে ভারত থেকে পানি প্রবেশ করায় এলাকায় অনেক কৃষকের বোরো ধান, পেঁয়াজ, গমক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। চরে আমার দুই বিঘা পেঁয়াজক্ষেত নষ্ট হয়েছে।’