Bangladesh
বাংলাদেশে মোদি বিরোধিতায় লাভ যাদের
ঢাকা, মে ১: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর দু'দেশের ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক আরও সমৃদ্ধ করল, আরও গতি পেল তাদের এক সাথে পথ চলা। কিন্তু দুর্ভাগ্যের যে, মোদির সফরকালে কিছু অবাঞ্ছিত ঘটনাও ঘটে গেল, যা অকস্মাৎ এবং দুই প্রতিবেশী দেশের সৌহার্দ্যপূর্ন সম্পর্কের বিপ্রতীপ। এখন প্রয়োজন, এই ঘটনার পিছনে থাকা অশুভ শক্তিকে চিহ্নিত করে সতর্ক থাকা।
নরেন্দ্র মোদি যখন ঢাকায় গেলেন তখন বেশ কিছু মৌলবাদী সংগঠন তাঁকে সাম্প্রদায়কতার জনক আখ্যা দিয়ে ‘গো ব্যাক মোদি’ স্লোগান তুলল। এদের অভিযোগ, যে নরেন্দ্র মোদির সরকারের আমলে ভারতের মুসলমানেরা 'নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন', তাঁকে কেন বাংলাদেশ সরকার অতিথির মর্যাদা দিচ্ছে।
এই সংগঠনগুলি একই ধরণের বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং অন্যান্য জায়গায়।
বেশ কিছু মৌলবাদী সংগঠন বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় একইভাবে মোদির বিরোধিতা করেছে। এরা কিন্তু কোনও ভাবেই বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের প্রতিনিধি নয়।
যেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ককে আর্থিক এবং অন্যান্য ব্যাপারে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন, বাংলাদেশ যখন ধর্মনিরপেক্ষতার পথে হাঁটছে এবং যখন দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে মানুষকে পারস্পরিক সমৃদ্ধির পথে নিয়ে চলেছে, তখন কেন এই বিরোধিতা? কারা আছে এর পিছনে এবং কী তাদের উদ্দেশ্য?
সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই কার্যকলাপে মদদ দিয়েছে পাকিস্তান। অথচ এই মুহূর্তে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার আহ্বান জানাচ্ছেন। এমনকি কাশ্মীর নিয়েও একটা নরম মনোভাব পাকিস্তান দেখাচ্ছে। কিন্তু এই শান্তি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি পাকিস্তান সম্ভবত একটি দুমুখী রননীতি নিয়ে চলতে চাইছে।
তা হলো, বাংলাদেশে ভারতবিরোধী কার্যকলাপ বাড়িয়ে, ভারতে অশান্তি এবং অস্থিরতার সৃষ্টি করে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শিরঃপীড়া ঘটানো।
পাকিস্তান সম্ভবত ভেবেছে এ ভাবে চাপে রাখা গেলে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সময় কিছু সুবিধা আদায় করা যাবে। তবে পাকিস্তানের এই কৌশলের পিছনেও কিন্তু একটি মাথা কাজ করছে, এবং তা হল চীনের।
চীন যেমন মায়ানমারে তার প্রভাব ফেলেছে, তেমনই ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে চাপে রেখেছে শ্রীলঙ্কাকে। আবার তার মদদে নেপালের অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে সৃষ্টি হয়েছে প্রবল অশান্তি। এইভাবে ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করলে তা নিঃসন্দেহে ভারতের পক্ষে অস্বস্তিকর। বাকি ছিল ভারতের অন্যতম পরম মিত্র বাংলাদেশ। সেখানে ভারতবিরোধী গন্ডগোল পাকাতে পারলে ভারতেও তার প্রতিক্রিয়া হওয়া স্বাভাবিক এবং তাহলে সেই অশান্তির সুযোগে কূটনৈতিক ভাবে লাভবান হবে পাকিস্তান-চীন অক্ষশক্তি।
এই লাভ তাদের যাতে না হয়, তার জন্য নরেন্দ্র মোদি অনেক বেশি দায়ী করছেন ই চীন-পাকিস্তান অক্ষকে। এর আগে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মতো বাংলাদেশের বন্ধু, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি যখন গেছেন, তখনো এইসব সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বিরোধিতা করেছে। যখন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং গেছেন তখনো এই ধরনের প্রতীকী কালো পতাকা তারা দেখিয়েছে।
তবে আগে খালেদা জিয়ার সরকারের সময় এই সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো মদদ পেয়েছে। কেননা জামায়াত ছিল খালেদা সরকারের অঙ্গ। কিন্তু শেখ হাসিনা নানা কৌশলে এই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীগুলোর মোকাবিলা করে যাচ্ছেন এবং কখনোই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে বিপদগ্রস্ত করেননি।
তাঁর এমত দূরদর্শীতার ফলেই প্রথম দুটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে যৌথভাবে সেতু নির্মাণ হলো। যৌথভাবে রেললাইনের যোগাযোগ তৈরি হচ্ছে। স্থলসীমান্ত চুক্তি হয়ে গেছে। এমনকি তিস্তা চুক্তি যাতে রূপায়ণ হয় তার চেষ্টায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বদ্ধপরিকর। এই জটিল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ককে আরো সচেতনভাবে উন্নততর করার দায়িত্ব দু'দেশের সরকারের সঙ্গে সাধারণ মানুষেরও।