Bangladesh

বিএনপির আদর্শের অসামঞ্জস্যতা এবং সরকার পরিচালনার অক্ষমতা বিএনপি
সংগৃহিত

বিএনপির আদর্শের অসামঞ্জস্যতা এবং সরকার পরিচালনার অক্ষমতা

Bangladesh Live News | @banglalivenews | 06 May 2022, 09:04 am

ঢাকা, মে ৬: আগামী বছরের শেষদিকে কিংবা ২০২৪ এর শুরুতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে। কেননা, যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন তাদেরকেই নিতে হবে ২০২৬ সালে দেশের উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উত্তীর্ণ হওয়ার গুরুদায়িত্ব। অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রেক্ষাপটেও এ নির্বাচনের একটি বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তাদের ক্ষমতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা।

অন্যদিকে, বিএনপির লক্ষ্য ১২ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে পুণরায় ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করা। কিন্তু, ক্ষমতায় আসলেই কি বিএনপির লক্ষ্য পূরণ হবে? নাকি সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে? রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিএনপি কেবলই আওয়ামীলীগের সমালোচনার একটি ফোরাম মাত্র। এটি এখনো একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক দল হয়ে উঠতে পারেনি। আওয়ামী সমালোচনা করে দলটি টিকে আছে। তবে আসলেই কি তাই? এবং যদি তাই হয়, তাহলে সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে এর প্রভাব কি? এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর খুজতে হলে আমাদের দেখতে হবে বিএনপির আদর্শ, উন্নয়নের ধারণা এবং বর্তমান রাজনীতিতে তার কতখানি সামঞ্জস্য রয়েছে।

বিএনপির রাজনৈতিক আদর্শ ও ইসলামের ব্যবহার

জন্মলগ্ন থেকেই আওয়ামী বিরোধীতা বিএনপির রাজনীতির একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া, ভোটার আকৃষ্ট করতে দলটি শুরু থেকেই ইসলামের ব্যবহার শুরু করে। মাহমুদ আলী তার আন্ডারস্ট্যান্ডিং বাংলাদেশ (২০১০) গবেষণা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, বিএনপির ইসলামের প্রতি ঝোঁকের মূল কারণ আওয়ামী সেক্যুলারিজম বা অসাম্প্রদায়িকতার বিপরীতে ভোটার আকৃষ্ট করা। অর্থাৎ, ভোট নিশ্চিত করতে গিয়ে বিএনপি সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে জড়িয়ে গিয়েছে। যদিও দলটি নিজেদের মধ্য-ডানপন্থী দল হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, কিন্তু ইসলামের রাজনৈতিক ব্যবহারের কারণে তার সখ্যতা গড়ে উঠেছে কট্টরপন্থী দলগুলোর সাথে। বেশ লম্বা সময় ধরে দলটি নিষিদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি হিসেবে পরিচিত জামাত ইসলামীর সাথে জোট গঠন করে আছে। পারতপক্ষে, নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই বিএনপি জামাতের পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা পালন করছে। একই সাথে ২০১৩ সালে, হেফাজতে ইসলামের ধ্বংসযজ্ঞের প্রতি বিএনপি নৈতিক সমর্থন প্রদান করে। এছাড়া, সমালোচিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে দেশত্যাগেও বাধ্য করে বিএনপি সরকার। অধ্যাপক আলী রিয়াজ মনে করেন, তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে জনতাকে উস্কে দেয়ার পেছনে বিএনপি-জামাতই কলকাঠি নেড়েছিল। ফলশ্রুতিতে, একই সময়ে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজমের নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। তার রচিত “ইসলামিক মিলিটেন্সি ইন বাংলাদেশ (২০০৮)”  বইয়ে এই তর্কটি পাওয়া যায়।

ইসলামের রাজনৈতিক ব্যবহার ছাড়াও, বিএনপির আদর্শিক মতবাদেও বিভাজনের রাজনীতি প্রতীয়মান। গবেষক মুবাশ্বার হাসানের বই ইসলাম এন্ড পলিটিক্স ইন বাংলাদেশ (২০২০) এ লেখক বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, বিএনপির মূলমন্ত্রে বিভাজন বিদ্যমান। বিএনপির জাতীয়তাবাদ বাঙ্গালীকে দু’ভাবে ভাগ করে, বাংলাদেশী বাঙ্গালী এবং পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালী। বিএনপির মতে এই তফাতের কারণ ভাষার আঞ্চলিকতা এবং ধর্মীয় পরিচয়। অর্থাৎ, বিএনপির আদর্শ বাঙ্গালীকে বিভাজিত করে। অথচ, হওয়ার কথা ছিল ঠিক উল্টো। বিশ্বে বাঙ্গালীদের একমাত্র স্বাধীন দেশ বাংলাদেশ। তাই, বিশ্বের বাঙ্গালীদের কেন্দ্রবিন্দু বা গ্লোবাল হাব হওয়া উচিত ছিল ঢাকার। বিশ্বব্যাপী বাঙ্গালী জাতিসত্ত্বার নেতৃত্বে থাকার কথা বাংলাদেশের। সেখানে বিভাজনের এই আদর্শ একদমই অপ্রাসঙ্গিক এবং বেমানান।

এছাড়াও, বিএনপির দেশ-কেন্দ্রিক জাতীয়তাবাদের ধারণা, ইসলামের রাজনৈতিক ব্যবহার এবং অর্থনীতিতে বৃহৎ পূঁজির উপর নির্ভরশীলতা এর রাজনৈতিক আদর্শকে একটি জগাখিচুড়ির জায়গায় পৌছে দিয়েছে।

বিএনপির উন্নয়নের ধারণাঃ ভিশন-২০৩০

বিএনপির অতীতে দুটি পূর্ণাঙ্গ মেয়াদের সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। অথচ, এখন পর্যন্ত দলটি উন্নয়ন এবং সরকার পরিচালনার সুস্পষ্ট কৌশল এবং রোডম্যাপ প্রণয়নে ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপির ব্যর্থতার গ্লানী আরো বাড়িয়ে দিয়েছে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামীলীগের অর্জন। এখন পর্যন্ত বিএনপির ঘোষণায় একমাত্র উন্নয়নের রোডম্যাপ ভিশন-২০৩০। ২০১৭ সালে, একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা দলটি প্রকাশ করে। কিন্তু, ভিশন ২০৩০ পড়ে তেমন কোন নতুনত্ব পাওয়া যায় না। ভিশনের অধিকাংশ ধারাই বাংলাদেশে প্রচলিত রাজনীতিতে প্রায় সকল দলের কমন বিষয়গুলি দিয়েই তৈরি। অধিকাংশই অস্পষ্ট এবং ‘লেপা-মোছা’ প্রকৃতির। ভিশনে কোন নির্দিষ্ট কৌশল ও রোডম্যাপের ও উল্লেখ নেই। অনেক ক্ষেত্রে ভিশন আর বাস্তবতার মিল ও পায় না। যেমনঃ ভিশন-২০৩০ সকল মত, চেতনা এবং ধর্মকে সমান মর্যাদা দিতে একটি “রেইনবো নেশন” গঠনের কথা বলে। অথচ বাস্তবে, বিএনপির জোট গঠন করে জামাতের মত একটি কট্টর এবং বিভক্তির রাজনীতিতে বিশ্বাসকারী নিষিদ্ধ দলের সাথে। কট্টরবাদীদের সাথে জোট করে বহুত্ববাদকে কিভাবে দলটি রক্ষা করে তা বেশ ভাবনার বিষয় বটে!

আবার সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিএনপির ভিশন-২০৩০ বেশ সেকেলে। এর অধিকাংশ ধারাই অনেক পুরনো এবং ইতোমধ্যে সমাধান হয়ে গেছে। আবার, এতে ক্ষমতায়নের জায়গায়ও বেশ দুর্বল। উদাহরণস্বরুপ উল্লেখ করা যেতে পারে, ভিশন-২০৩০ এ স্বামী পরিত্যাক্ত নারীদের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। অথচ ইতোমধ্যে এসকল নারী আইন ও আদালতের আশ্রয় পেয়ে গিয়েছে। বিশ্বে যখন নারীবাদের ৫ম ধারা চলমান, তখন ক্ষমতায়নের জায়গায় কেবল ‘নিরাপত্তাপ্রদান’ এর পন্থা নেয়া বেশ সেকেলেই! অধিকাংশ সাধারণ ধারা আর অস্পষ্ট অঙ্গীকারের ভীড়ে বিএনপির ভিশন ২০৩০ এর একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, শিক্ষায় জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দের অঙ্গীকার। নিঃসন্দেহে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়।

উন্নয়নের দিক দিয়েও বিএনপি এখন বেশ পিছিয়ে। উন্নয়ন বাংলাদেশের রাজনীতিকে একটি শক্তিশালী ডিস্কোর্স। আওয়ামীলীগ সরকার গত ১২ বছরে তুমুল সমালোচনার মধ্যেও কেবল উন্নয়নের মডেল এবং কৌশলের কারণেই ক্ষমতায় টিকে গিয়েছে। অন্যদিকে, আওয়ামীলীগের উন্নয়নের কোন বিকল্প বিএনপি এখনো জাতিকে দিতে পারেনি। এসময়, উন্নয়নের সমালোচনা সে ধার করেছে ক্রিটিকাল স্কলার বা সমালোচনা তাত্ত্বিকদের কাছ থেকে।

ক্ষয়িষ্ণু শক্তির প্রাসঙ্গিকতার লড়াই

বিএনপির শেষ শাসনকাল ছিল ২০০১-২০০৬। এসময় তারা পরিচিতি পেয়েছে কেবল লাগামবিহীন দুর্নীতি, জঙ্গীবাদের উত্থান এবং প্রতিহিংসার রাজনীতির জন্যে। পরবর্তীতে, এর অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয় বিদেশে পালিয়েছেন না হয় জেলে বিচারাধীন রয়েছেন। এছাড়া, বর্ষীয়ান অনেক নেতাই মারা গিয়েছেন। শীর্ষনেতাদের এমন কার্যকলাপ ও পরিণতির জন্য গেলো ১২ বছরে বিএনপির শক্তি উত্তরোত্তর হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া, গ্রেনেড হামলা, দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হওয়া রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে দূর্বল করে দিয়েছে।

অন্যদিকে, ভুল ও চরমপন্থী কৌশল এবং ২০১৪ এর নির্বাচনের পর চালানো আগুন-সন্ত্রাস বিএনপিকে সাধারণ মানুষ থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। আগুন-সন্ত্রাস নীতি জনগণকে সরাসরি ভুক্তভোগী বানিয়েছিল তখন।

ফলে সব মিলিয়ে, ১২ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি যেন তার অতীত অভিজ্ঞতা ভুলে গিয়েছে এবং ক্ষয়িষ্ণু শক্তিতে পরিণত হয়েছে। একি সাথে, বিশ্বায়নের এই যুগে বৈশ্বিক পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে না পারায় বিএনপি প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে।

অতএব, নির্বাচনের এখনো প্রায় দেড় থেকে দু’বছর সময় বাকি। এখনো বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার পরিচালনা এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষমতা অর্জন করে নি। বিএনপির উচিত হবে বাকি সময়টুকু কাজে লাগিয়ে তার আদর্শিক বিভ্রান্তিগুলো নিয়ে কাজ করা। নিষিদ্ধ জামাতের সঙ্গ ত্যাগ করা এবং উন্নয়নে আওয়ামীলীগের বিকল্প পরিকল্পনা প্রদান করা। সরকার পরিচালনার সক্ষমতা ব্যতীত নির্বাচনে উতরে গেলেও তা হবে বিএনপির জন্য হিতে বিপরীত। সর্বোপরি, চরমপন্থী-ত্রাসনীতি ত্যাগ করে একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলা। আওয়ামী সমালোচনার উপর ভর করে আর কতদিন!

সর্বশেষ শিরোনাম

পবিত্র শবে কদর আজ Sat, Apr 06 2024

অচিরেই পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি শান্ত হবে: কাদের Sat, Apr 06 2024

টাকা লুট আর সক্ষমতা জানান দিতেই কেএনএফের হামলা: র‌্যাব Sat, Apr 06 2024

পরিবারের কাছে ফিরেছেন সোনালী ব্যাংকের অপহৃত সেই ম্যানেজার Sat, Apr 06 2024

উত্তপ্ত বান্দরবান, পরিস্থিতি পরিদর্শনে যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী Fri, Apr 05 2024

বান্দরবানে অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজার উদ্ধার Fri, Apr 05 2024

জনপ্রতিনিধিদের জনগণের সেবা করার মাধ্যমে ভবিষ্যত ভোট নিশ্চিত করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর Fri, Apr 05 2024

বান্দরবানে চলছে যৌথবাহিনীর অভিযান Fri, Apr 05 2024

তারেক রহমান নেতৃত্বে থাকলে বিএনপি এগুতে পারবে না: ওবায়দুল কাদের Fri, Apr 05 2024

মেট্রোরেলে ১ জুলাই থেকে ভ্যাট কার্যকর Thu, Apr 04 2024