Column

পাক বিদেশ মন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর ঃ দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে

পাক বিদেশ মন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর ঃ দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে

| | 27 May 2013, 06:36 am
সম্প্রতি পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন। রাজধানী ঢাকায় তাঁর সফরের মেয়াদ ছিল মাত্র পাঁচ ঘন্টা। কিন্তু এরই মধ্যে তাঁকে এমন একটি বাস্তবের মুখোমুখি হতে হল, এতদিন পাকিস্তান যা লুকিয়ে রাখতে চেয়েছে, বাংলাদেশ চায়নি। তাঁকে বিস্মিত করে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রী দীপু মনি পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ১৯৭১ সালের গ্ণ হত্যার প্রসঙ্গ তুলে জানিয়ে দেন, এ\'ব্যাপারে বাংলাদেশ এখনো ইসলামাবাদের কাছ থেকে সরকারী ভাবে ক্ষমা প্রার্থনার অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি এ\'কথাও বলেন যে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালিদের হত্যা করে উচিৎ \'শিক্ষা\' দেবার যে সরকারি নীতির ফলে ঐ অপরাধ ঘটান হয়েছিল, সে ব্যাপারে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে শুধু মাত্র দুঃখ প্রকাশে বাংলাদেশ সন্তুষ্ট হবেনা।

 স্বাভাবিক বাবেই এই পরিস্থিতিতে শ্রীমতি খার পাশ কাটাবার চেষ্টা করে ভারতীয় নেতাদের সাথে কথা বলার সময় যা বলে থাকেন, তাই বলেন। অর্থাৎ, "অতীত ভুলে আসুন, আমরা পিছনের দিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাই।" ঠিক একই কথা তিনি প্রাক্তন ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রী এস এম কৃষ্ণর সঙ্গে বৈঠকের সময় বলেছিলেন। কৃষ্ণ হয়ত ধৈর্য্যশীল শ্রোতা ছিলেন, কিন্তু দীপু মনি তা নন। তাই তিনি বার বার এ\' কথাই জানান যে, পাকিস্তানের ক্ষমা প্রার্থনার উপরেই দুই দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ভর করবে। খারের \'এগিয়ে চলার\'র আহ্বান যে বস্তুত অসার, তা বাংলাদেশী মন্ত্রী সম্ভবত বুঝতে পেরেছিলেন।

 
 মজার ব্যাপার, মাত্রই কয়েক মাস আগে পাক-আফগানিস্তান সীমান্ত অঞ্চলে পাকিস্তান-অন্তর্গত সালাহ্‌ চৌকির উপর আমেরিকান \'ড্রোন\' আক্রমণের জন্য ওয়াশিংটনের কাছ থেকে ক্ষমা দাবী করে পাকিস্তান শোরগোল ফেলে দিয়েছিল।এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন পাক সৈন্যর প্রান গিয়েছিল। তবে তার জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এবং সে দেশের অন্যান্যরা শুধুর মাত্র দুঃখ প্রকাশের বেশী আর কিছু করননি। কিন্তু পাকিস্তান জানিয়ে দিয়েছে, তারা \'সরকারি ভাবে ক্ষমা প্রার্থনা\' ছাড়া অন্য কিছু অন্য কিছু মেনে নেবেনা। শেষে অবশ্য আমেরিকার সেক্রেটারি অফ স্টেট হিলারি ক্লিন্টন একধরনের ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন, যদিও \'ক্ষমা\' শব্দটি বলা হয়নি। ্নিজেদের তৈরি করা বেয়াড়া পরিস্থিতি থেকে বেরোতে মরিয়া এবং অর্থ সমস্যা-পীড়িত পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত সেই \'ক্ষমা\' মেনে নিয়ে এমন প্রচার করতে থাকে যে, শুধু বিদেশে নয়, দেশের ভিতরেও তা অনেকের কৌতুকের কারন হয়ে দাঁড়ায়। 
 
দীপু মনি জানতেন যে পাকিস্তানের নেতারা সব সময় \'সব ভুলে এগিয়ে চলার\'র কথা বলেন, তাঁরাই আবার তথাকথিত কাশ্মীর বিতর্কে উল্টো কাজ করেন। সাম্প্রতিক কালের কৃত্রিম \'ভারত-পাক বন্ধুত্বের\' সময় যিনি যাই বলুননা কেন, এটা ঘটনা যে, পাকিস্তান সব সময়ই এ\' ব্যাপারে পরিষ্কার যে, তারা কাশ্মীর ভুলবেনা, যদি এই না ভুলে যাওয়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতি বন্ধ করে দেয়, তাও না। সে যাই হোক, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে \'সরকারি ক্ষমা\'র দাবী অত্যন্ত শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে। সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খানের আদেশে তখনকার পূর্ব বঙ্গে ্যে ধরনের গণ হত্যা ঘটান হয়েছিল, অ্যাডলফ হিটলারের জার্মানিতে ইহুদি নিধন ছাড়া,  তুলনীয় খুব কম ঘটনার কথা সাম্প্রতিক ইতিহাসে পাওয়া যাবে।
 
যদিও পাকিস্তানি সেনারাই বাঙ্গালিদের উপর অকথ্য অত্যাচার করেছিল, পশ্চিম পাকিস্তানের অসামরিক মানুষও কিন্তু সমান ভাবে সেই পাইকারি হত্যা-পরিকল্পনার উৎসাহী সমর্থক ছিল। এর কারন নিহিত ছিল দেশের বাংলাভাষী মানুষদের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানিদের ঘৃণার মধ্যে। বাঙ্গালিদের দেখা হত শারীরিক এবং মানসিক ভাবে এক নিম্ন স্তরের জাতি হিসেবে। এ ছাড়া, তাদের প্রকৃত মুসলমান বলেও মনে করা হতনা। 
 
ঊনিশশো সত্তরের সাধারন নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলে এক তরফা ভাবে জিতেছিল। জন সংখ্যা বেশী হওয়ার ফলে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বেশী সংখ্যায় সদস্য পার্লামেন্টে নির্বাচিত হন এবং স্বাভাবিক ভাবেই, আওয়ামী লীগ দেশ শাসনের দাবিদার হয়। কিন্তু পাঞ্জাবী সামরিক বাহিনী এবং জুলফিকার আলি ভুট্টো নামে এক ব্যক্তির নেতৃত্বে পশ্চিম পাকিস্তানিরা তা মানবে কেন ? তারা তো পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালিরা, যারা তাদের মত করে ভারত আর হিন্দুদের ঘৃনা করতে পারেনা, তাদের \'বাঁদর, \'মুরগি\', ইত্যাদি নামে ডেকে এসেছে এতদিন। 
 
যখন ভাষার প্রতি অবজ্ঞা ,অবহেলার ফলে েইতোমধ্যেই জেগে ওঠা বাঙ্গালি জাতীয়তাবোধ তার প্রভাব রাখতে শুরু করল, তখন সামরিক শাসকরা নির্মম ভাবে সেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেন। তাঁর প্রিয় মহিলা এবং স্কচ হুইস্কির বোতল নিয়ে সাধারন ভাবে মেতে থাকা জেনারেল ইয়াহিয়া খান তাঁর লোকদের পূর্ব পাকিস্তানে বিদ্রোহের যে কোন প্রতিরোধ নির্দয় ভাবে গুঁড়িয়ে দিতে নির্দেশ দিলেন। পুরুষ, মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ, অশক্ত, কেউই \'দেশপ্রেমিক\' পাকিস্তানিদের বুলেট থেকে যেন রেহাই না পায়, এই ছিল তাঁর আদেশ।
 
অতএব পাকিস্তানি সৈন্যরা নামল এক হত্যা লীলায়। কাদের নিশানা করা হবে সে বিষয়ে তাদের বিশেষ চিন্তা করার ছিলনা। তবে অনেক ক্ষেত্রেই তাদের সাহায্যকারী স্থানীয় ধর্মীয় গোঁড়ারা \'দেশদ্রোহী\' আর হিন্দুদের চিনিয়ে দিয়েছিল। গোয়ায় জন্মানো পাকিস্তানি সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাস, যিনি করাচ

সর্বশেষ শিরোনাম

বাংলাদেশে পশ্চিমের ‘গণতান্ত্রিক বিতর্কের’ শূন্যতা Tue, Jan 02 2024

হাসিনার ১৫ বছর: আঞ্চলিক সহযোগিতা ও প্রবৃদ্ধির একটি অনুকরণীয় গল্প Thu, Dec 07 2023

বাংলাদেশ: পাকিস্তানের ছায়া থেকে পরিপক্ক গণতান্ত্রিক দেশ Fri, Dec 01 2023

ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম ধর্মতন্ত্র: বাংলাদেশ - এবং পশ্চিম - হুমকির মুখে Thu, Nov 16 2023

সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের সূচক - বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের তুলনা Tue, Jan 17 2023

বাংলাদেশে বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতি - ব্যাপক দুর্নীতি ও উগ্র ইসলামবাদ Sat, Nov 19 2022

বিডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনের বাইরে বাংলাদেশ Wed, Dec 08 2021

Manipulating institutions: The Chinese Way in Bangladesh Sat, Dec 04 2021

শিল্পদ্রব্যের গুনমাণ: কোথায় চীনের বিশ্বাসযোগ্যতা Tue, Sep 15 2020

চিন থেকে সাবধান হওয়ার সময় এখন Mon, Aug 31 2020