Column

বাংলাদেশ থেকে উপড়ে ফেলতে হবে জামাতকে

বাংলাদেশ থেকে উপড়ে ফেলতে হবে জামাতকে

Bangladesh Live News | @banglalivenews | 28 Feb 2020, 02:03 am
উনিশশো একাত্তর সালে স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পরে নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়া জামাত-এ-ইসলা্মকে বাংলাদেশের প্রথম সামরিক শাসক এবং বি এন পি -র প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জেনারেল জিয়াউর রহমান পরবর্তীকালে ক্ষমতা দখল এবং নিজের অবস্থানকে দৃঢ় করার জন্য ইতিহাসের আস্তাকুঁড় থেকে আবার তুলে আনেন। সেই সময় দেশে প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে রোখার জন্য জামাতকে পুনর্বাসন দিয়ে অকৃপনভাবে রাজনৈতিক জায়গা করে দেন তিনি।

বাংলাদেশের (তখনকার পূর্ব পাকিস্তান) স্বাধীনতার লড়াইকে ব্যর্থ করতে জামাতের সহায়ক শক্তিগুলি যেমন, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল বদর এবং আল শামস দেশজুড়ে এক সন্ত্রাসের রাজত্ব নামিয়ে এনেছিল। এই ব্যাপারে তারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ পেত। একাত্তরের যুদ্ধের সময় এই জামাতের লোকেরা শত সহস্র স্বাধীনতা সংগ্রামীকে হত্যা করেছে, ধর্ষণ করেছে হাজার হাজার নারীকে এবং এবং জোর করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করেছে বিশাল সংখ্যক হিন্দুকে। 

 

  একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং তার জন্য মানুষের জান- কবুল লড়াইয়ের তীব্র বিরোধিতা করা বহু পাকিস্তানপন্থী ব্যক্তি এবং জামাত নেতাদের  জেনারেল জিয়াউর রহমান   প্রধানমন্ত্রী এবং ক্যাবিনেট মন্ত্রীর পদে বসান।  ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে শক্ত জায়গা করে দেওয়ার জন্য তিনি দেশের সংবিধানের মূল চারটি নীতির একটি-'ধর্মনিরপেক্ষতা'কে বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন। তৎকালীন জামাত-প্রধান, গুলাম আজম, যিনি স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই পাকিস্তানে গা ঢাকা দিয়েছিলেন, তাঁকেও তিনি ফিরিয়ে আনেন। তাঁর প্রয়াত স্বামীর রাজনৈতিক নীতিকে অনুসরণ করেই খালেদা জিয়াও দেশ শাসন করার সময় জামাতকে রাজনৈতিক অংশীদার হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

 

পাকিস্তান সরকারের মতই জামাতও তার কৃতকর্মের জন্য এখনও বাংলাদেশের মানুষের  কাছে ক্ষমা চায়নি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে গৃহযুদ্ধ আখ্যা দিয়ে এরা কোনও রকম যুদ্ধাপরাধে নিজেদের ভূমিকার কথা অস্বীকার করে। 

 

জিয়াউর রহমানের বদান্যতায় পুনর্বাসন পাওয়ার পর থেকে জামাত ক্রমে ক্রমে বিপুল সাংগঠনিক এবং আর্থিক ক্ষমতা অর্জন করেছে এবং তা সম্ভব হয়েছে ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত টানা দু'দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা সামরিক শাসক এবং বিএনপি-র প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সমর্থন এবং প্রশ্রয়ের ফলে। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে এই দলটি ব্যাংক থেকে ইনস্যুরেন্স কোম্পানি এবং গণমাধ্যম সহ বহু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়ে বসেছে।

 

বাংলাদেশ বিরোধী ভূমিকার জন্য স্বাধীনতার পরেই জামাতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল এবং ১৯৭৫ অবধি তাই ছিল। এর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর ক্ষমতায় আসা সরকারগুলি জামাতকে আবার উঠে দাঁড়াবার সুযোগ করে দেয়। কোলাবরেটর্স অ্যাক্ট অসিদ্ধ ঘোষিত হয় এবং মুক্তি দেওয়া হয় যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ২৩,০০০ ব্যক্তিকে। এ সবই করেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। এমন কি যুদ্ধাপরাধী হিসেবে যারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছে, তাদেরও মুক্তি দেওয়া হয়। 

 

বাংলাদেশ ইকনমিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এবং ঢাকা বিশ্ববি্দ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক আবুল বরকতের  হিসেব অনুযায়ী, অর্থনৈতিক সংস্থা, পরিবহন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং এন জি ও সহ বহুধাবিস্তৃত অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে শুধুমাত্র ২০০ সালেই জামাতের লাভের পরিমাণ ছিল ২৭৮ মিলিয়ন  ডলার। "যেখানে দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ৫-৬ শতাংশ, জামাত-নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতির বার্ষিক বৃদ্ধির হার সেখানে বার্ষিক ৬-৮ শতাংশ," তিনি বলেছেন।

 

  অনেক বছর ধরে জামাত অধ্যবসায়ের সঙ্গে বিপুল তহবিল গড়ে তুলেছে।  যে সম্পত্তি তারা অর্জন করেছে তার থেকে রীতিমত ভাল আয় হয় এই দলের। জামাত-নিয়ন্ত্রিত ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ, দেশের মধ্যে সর্ববৃহত্তম আর্থিক সংস্থা, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম তিনটি ব্যাংকের মধ্যে অন্যতম। 

 

বর্তমানে দেশে যে যুদ্ধাপরাধ বিচার চলছে, তাতে  যদি ঠিকমত এবং দ্রুত বিচার হয়, তাহলে জামাতের শীর্ষস্থানীয় সব নেতাকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হবে। এই পরিস্থিতির সুযোগে দলের অনেক তরুণ প্রজন্মের নেতা, বিশেষত যারা স্বাধীনতার পরে জন্মগ্রহণ করেছে এবং যুদ্ধাপরাধে জড়িত নয়, নেতৃত্ব তাদের হাতে নেবার পরিকল্পনা করছে।

 

তবে যদি  দলের  নাম এবং নেতৃত্বে পরিবর্তন ঘটে, তবুও  জামাত চরিত্রগত দিক দিয়ে মৌলবাদী দল হয়েই থাকবে এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন করার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের ইসলামিকরণের কাজ সক্রিয়ভাবে  চালিয়ে যাবে। আগের মতই প্রগতিশীল এবং ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলি এদের সব থেকে বড় শত্রু হয়ে থাকবে । আগের মতি এরা পাকিস্তানের বশংবদ হয়ে থাকবে। সব থেকে বড় কথা, আই এস আই -এর সংগে এদের যোগাযোগ থেকে বোঝা যায় যে এই দলের প্রধান কর্মসূচী একই থাকবে- বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হরণ করা  এবং দেশকে পাকিস্তানের দাস রাষ্ট্রে পরিণত করা।

 

বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন জামাতের নির্বাচনী অংশগ্রহণের অধিকার হরণ করলেও স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় জঘন্য অপরাধে জড়িত থাকার জন্য দলটির দলটিকে এখনও আইনি পথে অভিযুক্ত করা হয়নি। জামাতের প্রাক্তন আমির গুলাম আজমের বিরুদ্ধে রায় দেবার সময় আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের পরামর্শ ছিল, সরকার যেন   স্বাধীনতাবিরোধী দল এবং ব্যক্তিদের সরকারি, বেসরকারি এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলির শীর্ষ  পদে থাকা নিষিদ্ধ করে।

 

  ট্রাইব্যুনাল আরও বলেছিল, "এমন কোনও প্রমাণ নেই যাতে মনে করা যেতে পারে যে ১৯৭১ -এর স্বাধীনতা সংগ্রামের যারা বিরোধিতা করেছিল,তারা এমন কি এখনও  তিরিশ লক্ষ শহিদের প্রতি সম্মান জানিয়ে তাদের সেই মনোভাবের পরিবর্তন ঘটাবে।"

 

যুদ্ধাপরাধ আদালত এখন পর্যন্ত ৪১ টি অপরাধের ক্ষেত্রে রায়দান করেছে। এর পরে সুপ্রিম কোর্ট দশটি আপীল খারিজ করে দিয়েছে এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার পরে ছ'জন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি হয়েছে।  সর্বশেষ ঘটনাটিতে গত অক্টোবর মাসের ৩১ তারিখে যুদ্ধাপরাধে যুক্ত থাকার দায়ে সুপ্রিম কোর্ট জামাতের প্রাক্তন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে।

 

একাত্তর সালে পাকিস্তানের অঙ্গচ্ছেদ এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্মলাভ জামাতকে এখনও অসম্মানের যন্ত্রণা দেয় এবং সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে দলটি যে কোনও কিছু করতে পারে।

 

যে সব মানুষ স্বাধীনতার আদর্শকে সম্মান করেন এবং স্বাধীনতাসংগ্রামীদের আত্মত্যাগকে স্বীকৃতি দেন, যে সব নারী যৌন নির্যাতন ভোগ করেছেন এবং যারা ঘর বাড়ি ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন,এম তাঁরা সবাই জামাত এবং তার ছাত্রশাখা ইসলামি ছাত্র শিবিরের সম্পূর্ন উচ্ছেদ দেখতে চান। সেই উচ্ছেদ হোক এমন ভাবে, যাতে এদের কোনও চিহ্নই যেন আর না থাকে স্বাধীন বাংলাদেশে। বাংলাদেশকে অশুভ শক্তির হাত থকে মুক্ত করতে  এদের নিয়ন্ত্রানাধীন সমস্ত প্রতিষ্ঠান, তহবিলের উৎস এবং সমর্থনভিত্তিকে চিহ্নিত করে চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া দরকার । 

সর্বশেষ শিরোনাম

বাংলাদেশে পশ্চিমের ‘গণতান্ত্রিক বিতর্কের’ শূন্যতা Tue, Jan 02 2024

হাসিনার ১৫ বছর: আঞ্চলিক সহযোগিতা ও প্রবৃদ্ধির একটি অনুকরণীয় গল্প Thu, Dec 07 2023

বাংলাদেশ: পাকিস্তানের ছায়া থেকে পরিপক্ক গণতান্ত্রিক দেশ Fri, Dec 01 2023

ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম ধর্মতন্ত্র: বাংলাদেশ - এবং পশ্চিম - হুমকির মুখে Thu, Nov 16 2023

সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের সূচক - বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের তুলনা Tue, Jan 17 2023

বাংলাদেশে বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতি - ব্যাপক দুর্নীতি ও উগ্র ইসলামবাদ Sat, Nov 19 2022

বিডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনের বাইরে বাংলাদেশ Wed, Dec 08 2021

Manipulating institutions: The Chinese Way in Bangladesh Sat, Dec 04 2021

শিল্পদ্রব্যের গুনমাণ: কোথায় চীনের বিশ্বাসযোগ্যতা Tue, Sep 15 2020

চিন থেকে সাবধান হওয়ার সময় এখন Mon, Aug 31 2020