Column

বাংলাদেশের ইসলামি উগ্রবাদ

বাংলাদেশের ইসলামি উগ্রবাদ

| | 27 May 2013, 11:07 am
বি রমন: ঢাকার উত্তাল শাহবাগ আন্দোলন, যাকে \\\'বাংলাদেশ স্প্রিং\\\' নামে অভিহিত করা হচ্ছে, তা ২০১০ সালে মিশরে ঘটে যাওয়া তাহ্‌রির স্কোয়ার আন্দোলনেরই মত। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের এক অভ্যুত্থানের সাক্ষী হয়ে থাকছে শাহবাগ, যেখান থেকে দাবি উঠেছে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়কার যুদ্ধাপরাধীদের প্রাণদণ্ডের। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ট্রাইব্যুনালের বিচারের আওতায় থাকা এই সব যুদ্ধাপরাধীদের অধিকাংশই জামাত-এ-ইসলামির নেতাস্থানীয় ব্যক্তি। অভিযোগ, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-আন্দোলনের বিরোধিতা করে এরা পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল এবং স্বাধীনতার দাবিকে সমর্থন করার জন্য সুপরিচিত বুদ্ধিজীবী সহ অসংখ্য সাধারন মানুষকে পাইকারি হারে হত্যা করেছিল।

 তাহ্‌রির স্কোয়ার আন্দোলনের মতই এ\'বছর ফেব্রুয়ারি মাসের পাঁচ তারিখে শুরু হওয়া শাহবাগ আন্দোলনেরও নামকরণ হয়েছে ঢাকা শহরের একটি অঞ্চলের নামে। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামাতের একজন নামকরা নেতার মৃত্যুদন্ড না হওয়ায় সাধারন মানুষ, বিশেষত তরুণ সমাজের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া তীব্র ক্রোধ থেকে এই আন্দোলনের জন্ম এবং ক্রমে সোশাল মিডিয়া নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তা শক্তিশালী হয়। তবে তাহ্‌রির স্কোয়ার আন্দোলন যেখানে ছিল হোসনি মুবারক সরকারের একনায়কতন্ত্রী শাসনের বিরুদ্ধে, ইসলামি উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে নয়,সেখানে শাহবাগের আন্দোলনের অভিমুখ  জামাত এবং অন্যান্য উগ্র ইসলামি দলের বিরুদ্ধে, যারা বাংলাদেশের উদার সমাজকে প্রভাবিত করতে চেয়েছিল।

 

যেখানে মিশরের ক্ষেত্রে তাহ্‌রির স্কোয়ার আন্দোলনের শেষ সুফল ভোগ করেছে ইসলামি দলগুলি, সেখানে শাহবাগ আন্দোলন যদি তার গতি ধরে রাখতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত সফল হয়, তাহলে তা পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগ থাকা ইসলামি উগ্রপন্থীদের উপর বাংলাদেশের উদার রাজনৈতিক শক্তির জয়কে চিহ্নিত করবে। 

 

শাহবাগ আন্দোলনের স্বতস্ফূর্ততা ও যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদন্ড এবং জামাত সহ অন্যান্য উগ্র ইসলামি দলগুলিকে নিষিদ্ধ করার যে দাবিতে তরুণরা অনড়, তা এমনকি জামাত এবং তাদের রাজনৈতিক মিত্র বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির চরম বিরোধী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের মত মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলিকেও বিস্মিত করেছে। এর কারন, মূল ধারার দলগুলি ইসলামি উগ্র শক্তির বিরুদ্ধে তরুণদের ঘৃণার গভীরতা মাপতে ব্যর্থ হয়েছিল। একই সঙ্গে এই গণ অভ্যুত্থান থেকে তাদের রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টাও ব্যর্থ করে দিয়েছে আন্দোলনরত তরুণরা, যারা কোনও রাজনৈতিক দলকেই সঙ্গে নিয়ে চলতে চায়না। 

 

 উগ্র ইসলামিদের বিরুদ্ধে এবং তাদের হাতে পূর্বতন পূর্ব পাকিস্তানে যারা খুন হয়েছিলেন তাদের জন্য ন্যায়বিচারের দাবি তুলে আলোকপ্রাপ্ত তরুণ সমাজ যে আন্দোলন গড়ে তুলেছে তাতে বাংলাদেশ ও ভারত সহ সারা পৃথিবীর সনাতন উদারপন্থীদের খুশি হওয়ার যথেষ্ট কারন যদিও আছে, তবুও এই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত কী রূপ নেবে অথবা বাংলাদেশকে কোন পথে নিয়ে যাবে, তা কিন্তু এখনও অনিশ্চিত। 

 

আন্দোলনের সাফল্য কামনা করেও এমন আশা না করাই উচিত যে, এর ফলে ১৯৭১-এর সংগ্রামের পরেও বেঁচে থাকা জামাত সহ অন্যান্য চরমপন্থী ইসলামি শক্তি কবরে চলে যাবে। এখনও পর্যন্ত এই আন্দোলন কিন্তু বুদ্ধিজীবী ও শ্রমজীবী মানুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এই শ্রেনীর মানুষদের মধ্যে জামাত কোনওদিনই প্রিয় ছিলনা। 

জামাতের সমর্থনভিত্তি প্রধানত বাংলাদেশের গ্রামীন এলাকার কৃষক সমাজকে ঘিরে। সেই সব গ্রামাঞ্চলের তরুণরা জামাতের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছে বলে কোনও খবর নেই। এমন নয়, কেবলমাত্র স্বল্প শিক্ষিত, দরিদ্র কৃষকরাই জামাতের সমর্থক, হরকত-উল-জিহাদি-আল-ইসলামির মত কট্টর জিহাদি সংগঠণ, ্যারা ৯/১১-পূর্ব সময়ে আফগান মুজাহিদিন, আল কায়দা এবং তালিবানদের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে আফগানিস্তানে লড়েছিল, তারাও এই দলের পিছনে আছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় ফিরে আসার পরে বাংলাদেশের গোয়েন্দা বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতায় এই সব জিহাদি সংগঠণগুলি অবশ্যই দূর্বল হয়ে পড়েছে, কিন্তু মোটেই তারা বাংলাদেশ থেকে উৎখাত হয়ে যায়নি। শাহবাগের আন্দোলনকারী তরুণদের বিরুদ্ধে এই মূহুর্তে পালটা আঘাত করার মত অবস্থায় না থাকলেও বাংলাদেশে ইসলামি উগ্রপন্থার প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে জামাত কিন্তু তার গ্রামের সমর্থক এবং সেলগুলিকে সংহত করার উপরে মনযোগ দেবে। শাহবাগ-আন্দোলনের তরুণ সংগঠকদের \'ইসলাম বিরোধী\' এবং ্\'নাস্তিক\' বলে প্রচার করে জামাত ইতিমধ্যেই জনমানসে এই আন্দোলনকে হেয় করতে  চেষ্টা করছে। 

 

আন্দোলনের বিরুদ্ধে তাদের কৌশলের অঙ্গ হিসেবে জামাত তাদের লক্ষ্য হিসেবে সংখ্যালঘু হিন্দুদের বেছে নিয়ে একটা নজর ঘোরান অশান্তি  সৃষ্টির চেষ্টাও করবে। তবে জামাত যে শাহবাগ আন্দোলনকে ক্লান্ত করে দেওয়ার এবং  বাংলাদেশের সমাজে মেরুকরণের নতুন জায়গা তৈরি করার চেষ্টা করবে, সে বিষয়ে নিশ্চয়ই শেখ হাসিনার সরকার এবং তাঁর গোয়েন্দা সংস্থাগুলি ভালভাবেই জানে। আশার ব্যাপার যে, বাংলাদেশের  নিরাপত্তাবাহিনী  দৃঢ়প্রতিজ্ঞভাবে গ্রামাঞ্চলে জামাত এবং অন্যান্য উগ্রপন্থী শক্তিগুলির মোকাবিলা করছে। এর থেকে বোঝা যায় যে, জামাত ও তার মিত্ররা এখনও পর্যন্ত নিরাপত্তাবাহিনীর মধ্যে সে ভাবে অনুপ্রবেশ করতে পারেনি

সর্বশেষ শিরোনাম

বাংলাদেশে পশ্চিমের ‘গণতান্ত্রিক বিতর্কের’ শূন্যতা Tue, Jan 02 2024

হাসিনার ১৫ বছর: আঞ্চলিক সহযোগিতা ও প্রবৃদ্ধির একটি অনুকরণীয় গল্প Thu, Dec 07 2023

বাংলাদেশ: পাকিস্তানের ছায়া থেকে পরিপক্ক গণতান্ত্রিক দেশ Fri, Dec 01 2023

ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম ধর্মতন্ত্র: বাংলাদেশ - এবং পশ্চিম - হুমকির মুখে Thu, Nov 16 2023

সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের সূচক - বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের তুলনা Tue, Jan 17 2023

বাংলাদেশে বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতি - ব্যাপক দুর্নীতি ও উগ্র ইসলামবাদ Sat, Nov 19 2022

বিডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনের বাইরে বাংলাদেশ Wed, Dec 08 2021

Manipulating institutions: The Chinese Way in Bangladesh Sat, Dec 04 2021

শিল্পদ্রব্যের গুনমাণ: কোথায় চীনের বিশ্বাসযোগ্যতা Tue, Sep 15 2020

চিন থেকে সাবধান হওয়ার সময় এখন Mon, Aug 31 2020