Column

খালেদা জিয়ার প্রবন্ধ ও কয়েকটি প্রশ্ন

খালেদা জিয়ার প্রবন্ধ ও কয়েকটি প্রশ্ন

| | 27 May 2013, 06:57 am
গত ৩১ শে জানুয়ারি ওয়াশিংটন টাইমসে বি এন পি নেত্রী খালেদা জিয়ার নাম দিয়ে একটি প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। প্রবন্ধটি খালেদা জিয়া নিজেও লিখে থাকতে পারেন, আবার অন্য কেউ তাঁর হয়ে লিখে দিতেও পারে। ঘটনা যাই হোক, প্রবন্ধটির বক্তব্যের দায়িত্ব তিনি অস্বীকার করতে পারেননা। দু\'বার দেশের প্রধান মন্ত্রী থাকা এবং বর্তমানে বিরোধী দল নেত্রীর ভূমিকা পালন করা খালেদা জিয়া প্রবন্ধটিতে যা লিখেছেন, তাতে সংসদের ভিতরে- বাইরে প্রতিবাদ ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সমাজের বিভিন্ন অংশ এবং বিভিন্ন পেশার মানুষের পক্ষ থেকে এমন কি প্রবন্ধটিকে দেশদ্রোহমূলক আখ্যা দিয়ে তাঁর শাস্তির দাবিও তুলেছেন। সংসদে একই অভিযোগ তুলে বেশ কিছু সদস্য বলেছেন, যদি বি এন পি নেত্রী বাংলাদেশেকে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে মনে করেন, তা হলে তাঁর উচিৎ প্রবন্ধটিতে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ চাওয়ার জন্য জনগনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। কেন তাঁর প্রবন্ধটির কারনে এত শোরগোল ?

 প্রবন্ধের শুরুর দিকেই খালেদা জিয়া লিখছেন যে, মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্র সেই সব মুষ্টিমেয় দেশের একটি যারা বাংলাদেশের মানুষের আত্ম নিয়ন্ত্রণের সংগ্রামকে সমর্থন জানিয়েছিল। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে এই যে, ১৯৭১ সালে আমেরিকা পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা করেছিল। শুধু তাই নয়, সেই সময় আমেরিকা মুক্তি যুদ্ধ দমন করতে বঙ্গোপসাগরে তাদের সপ্তম নৌবহর পাঠানোর হুমকিও দিয়েছিল, যদিও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়ে ওঠেনি। এমন কি, স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি জানানো প্রথম ৫০টি দেশের মধ্যেও আমেরিকা ছিলনা। 

 
বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে সাম্প্রতিক কালে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির পরোক্ষ উল্লেখ করে খালেদা জিয়া প্রবন্ধটিতে বলছেন, বাংলাদেশের আর্থিক আনুগত্য (ইকনমিক অ্যালেজিয়েনস) বদল হয়ে অন্য দেশগুলির কাছে বাঁধা পড়ছে এবং তার ফলে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অবমাননা হচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমেরিকা নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে আছে বলে তিনি অনুযোগ করেছেন। মানুষের কাছে এটা দূর্বোধ্য কী ভাবে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অবমাননা হচ্ছে আর কী ভাবেই বা একটি সার্বভৌম দেশ কি করবে না করবে, সে ব্যাপারে মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্র খবরদারি করতে পারে অথবা তাদের আদৌ কিছু বলার থাকতে পারে। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটা সরকার অন্য কোন দেশের সাথে চুক্তি করবে, সেটা কি আমেরিকা ঠিক করে দিতে পারে? আসলে হস্তক্ষেপ চাওয়ার উদ্দেশ্য,খালেদা জিয়া চাইছেন আমেরিকা যাতে বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর চাপ সৃষ্টি করে। বাংলাদেশ গারমেন্ট এক্সপোরটারস অরগানাইজেশন এবং তৈরি পোষাক কারখানার মালিকরা খালেদা জিয়ার এই মন্তব্যে চূড়ান্ত হতাশ। তাঁদের প্রশ্ন, কী ভাবে একজন দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেত্রী, ্যিনি দু\'বার দেশের প্রধান মন্ত্রী ছিলেন, এমন কথা বলতে পারেন। আর, আমেরিকা যে বাংলাদেশের ব্যাপারে নাক গলাবার জন্য মুখিয়েই আছে, সে তো ঢাকায় আমেরিকার রাষ্ট্রদূতের আচরণ থেকেই বোঝা ্যায়। 
 
তাঁর প্রবন্ধে খালেদা জিয়া গ্রামীন ব্যাংক এবং সেখানকার প্রধান প্রোফেসর মুহাম্মাদ ইউনুসের অপসারনের কথা লিখেছেন। এখানে এটা বলা দরকার যে, গ্রামীন ব্যাংক কোনও আন্তর্জাতিক ব্যাংক নয়। বাংলাদেশের সংসদে পাশ হওয়া একটি আইন অনুসারেই এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সুতরাং সেই ব্যাংক যাতে সেই আইন মোতাবেক চলে, তা সুনিশ্চিত করা  দেশের সরকারের দায়িত্ব। গ্রামীন ব্যাংকের অথবা প্রোফেসর ইউনুসের অপসারনের ব্যাপারে মার্কিণ হস্তক্ষেপ প্রোফেসর ইউনুস নিজেও নিশ্চয়ই চাইবেননা। খালেদা জিয়া শুধু বলুন, কী ভাবে গ্রামীন ব্যাংকের ব্যাপার  বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সুরক্ষার সঙ্গে যুক্ত, যার জন্য তিনি মার্কিণ হস্তক্ষেপ চাইছেন। বাংলাদেশে গণতন্ত্র কি এতটাই রসাতলে গেছে যে আমেরিকার হস্তক্ষেপ প্রয়োজন ?

সর্বশেষ শিরোনাম

বাংলাদেশে পশ্চিমের ‘গণতান্ত্রিক বিতর্কের’ শূন্যতা Tue, Jan 02 2024

হাসিনার ১৫ বছর: আঞ্চলিক সহযোগিতা ও প্রবৃদ্ধির একটি অনুকরণীয় গল্প Thu, Dec 07 2023

বাংলাদেশ: পাকিস্তানের ছায়া থেকে পরিপক্ক গণতান্ত্রিক দেশ Fri, Dec 01 2023

ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম ধর্মতন্ত্র: বাংলাদেশ - এবং পশ্চিম - হুমকির মুখে Thu, Nov 16 2023

সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের সূচক - বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের তুলনা Tue, Jan 17 2023

বাংলাদেশে বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতি - ব্যাপক দুর্নীতি ও উগ্র ইসলামবাদ Sat, Nov 19 2022

বিডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনের বাইরে বাংলাদেশ Wed, Dec 08 2021

Manipulating institutions: The Chinese Way in Bangladesh Sat, Dec 04 2021

শিল্পদ্রব্যের গুনমাণ: কোথায় চীনের বিশ্বাসযোগ্যতা Tue, Sep 15 2020

চিন থেকে সাবধান হওয়ার সময় এখন Mon, Aug 31 2020