Column

চট্টগ্রাম অস্ত্র পাচার কান্ড ও পাক যোগসাজস

চট্টগ্রাম অস্ত্র পাচার কান্ড ও পাক যোগসাজস

| | 27 May 2013, 06:41 am
শেষ পর্যন্ত ঝুলি থেকে বেড়ালটা বেরিয়েই পড়ল। বাংলাদেশের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল সিকিওরিটি ইন্টলিজেনসের (এন এস আই) প্রাক্তন ডিরেকটর জেনারেল ব্রিগেডিয়ার(অবঃ) আবদুর রহিম এবং ঐ একই সংস্থার প্রাক্তন ডিরেকটর উইং কম্যান্ডার (অবঃ) শাহাবুদ্দিন আহমেদ ২০০৪ সালের ২রা এপ্রিল চট্টগ্রামে ধরা পড়া বিপুল অস্ত্র শস্ত্র পাচারের ব্যাপারে যে পাকিস্তান জড়িত ছিল, সে ব্যাপারে সম্প্রতি দু’টি পৃথক কিন্তু একই ধরনের বিবৃতি দিয়েছেন। ভুটানে ২০০৩ সালে লুকিয়ে থাকা আলফা জঙ্গীদের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনা বাহিনীর অভিযানের ফলে ঐ সংগঠনের কমে যাওয়া অস্ত্র ভান্ডারকে মজবুত করতেই চট্টগ্রাম দিয়ে অস্ত্র পাঠান হচ্ছিল।

 এন এস আইয়ের দুই প্রাক্তন শীর্ষ কর্তা ফাঁস করে দিয়েছেন যে, দুবাইয়ের এ আর ওয়াই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং পাকিস্তানি ব্যবসায়ী আবদুল রজ্জাক ইয়াকুব ও পাকিস্তানের আই এস আই আটক হওয়া অস্ত্র পাচারের পরিকল্পনার সাথে সরাসরি ভাবে যুক্ত ছিল। এই সমস্ত অস্ত্রের মধ্যে ছিল ১৭৯০ টি রাইফেল, যার মধ্যে ৬৯০ টি ছিল গ্রেনেড লঞ্চার লাগান এ কে ৪৭, ২০০০ টি গ্রেনেড লঞ্চার, ২৫০২০ টি গ্রেনেড, ১৫০ টি রকেট লঞ্চার, ৮৪০ টি রকেট এবং ১১ লক্ষ কার্তুজ। এই সব তথ্যের সাথে এটাও প্রকাশ পেয়েছে যে, অস্ত্র এবং কার্তুজগুলি আলফার ঠিকানায় পাঠান হচ্ছিল, যাতে তারা ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে ভাল করে লড়াই করতে পারে।

 
এন এস আইয়ের এই দুই প্রাক্তন অফিসার জানিয়েছেন যে, সেই সময় ঢাকায় অবস্থিত পাক হাই কমিশনে কর্মরত দুই আই এস আই অফিসার—ব্রিগেডিয়ার মোগিসুদ্দিন এবং কর্নেল শাহেদ মাহমুদ প্রত্যক্ষ ভাবে এই অস্ত্র পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। দুবাইয়ের এ আর ওয়াই গ্রুপ এবং পাক হাই কমিশন এই অস্ত্র এবং গোলা বারুদ কেনার টাকা যুগিয়েছিল। আবদুর রহিম স্বীকার করেছেন, সেই সময় তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশের ভিতরে এবং বাইরেও আই এস আইয়ের উচ্চ পদস্থ কর্তাদের সাথে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছিল। অস্ত্র কেনার চুক্তি চূড়ান্ত করার ব্যাপারে তাঁকে আই এস আইয়ের ডিরেকটরের সাথে এই রকম একটি বৈঠকে বসতে হয়েছিল।
 
ব্রিগেডিয়ার রহিমের বয়ান অনুযায়ী, জাহাজে করে ঐ অস্ত্র চট্টগ্রামে পৌঁছানোর আগে পাকিস্তা্নী নাগরিক এবং এ আর ওয়াই গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেকটর সালমান ইকবাল ঢাকায় এসে শহরে ও তার আশে পাশে এন এস আইয়ের নিরাপদ আশ্রয়ে বসে আই এস আই ও এ আর ওয়াইয়ের অফিসার এবং আলফা নেতা পরেশ বড়ুয়ার সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেন। শুধু জাহাজে করে অস্ত্র পাঠান এবং কিছু বাংলাদেশী অফিসারকে উৎকোচ দেওয়ার জন্যই খরচ করা হয়েছিল দশ লক্ষ মার্কিন ডলার।
 
আমেরিকার কলাম্বিয়া ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের একটি নথি অনুযায়ী, আবদুর রজ্জাক ইয়াকুব দুবাই-কেন্দ্রিক দাতব্য সংস্থা ওয়র্ল্ড মেমন অরগানাইজেশনের (ডব্লু এম ও) চেয়ারম্যান ছিলেন। পাকিস্তান সরকারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এই সংস্থার সঙ্গে অন্যান্য দাতব্য সংস্থা ছাড়াও যোগাযোগ আছে আল কায়দা এবং অ্যাসেম্বলি অফ মুসলিম ওয়র্ল্ডের। কেনিয়ায় ইউ এস মিশনে বোমা বিস্ফোরনের ঘটনায় এই সমস্ত সংগঠনগুলি জড়িত ছিল। খবর অনুযায়ী, আবদুর রজ্জাক ইয়াকুব ইকবাল মিরসি নামে এক ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ। এই ইকবাল মিরসি আবার মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের ডান হাত বলে মনে করা হয়। ওয়াশিংটন পোস্টে ২০০২ সালের ১৭ ই ফেব্রুয়ারি লেখা হয়েছিল যে, আফগানিস্তানে তালিবান রাজ পতনের আগে বিশাল পরিমানে সোনা এবং আমেরিকান ডলার সে দেশ থেকে দুবাইয়ে পাচার করার কাজে এ আর ওয়াই গোষ্ঠি প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত ছিল।
 
অন্যদিকে শাহাবুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, এ আর ওয়াই গ্রুপের সঙ্গে ভারতীয় জঙ্গী সংগঠণ আলফার যোগাযোগ ছিল। শাহাবুদ্দিন নিজেই এ আর ওয়াই অফিসারদের ঢাকা এয়ারপোর্টে ‘রিসিভ’ করেতে গিয়েছিলেন। এন এস আই ঐ সব অফিসারদের ব্যবহারের জন্য বিলাস বহুল গাড়ি শুধু দেয়নি, অতিথিরা ঢাকায় থাকাকালীন তাদের সব রকম খরচ বহন করেছিল। এন এস আইয়ের ডি জি এবং এ আর ওয়াই অফিসারদের মধ্যে বৈঠকে উপস্থিত অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন আলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া, ঢাকায় পাকিস্তানের হাই কমিশনার মাঞ্জার শফিক এবং পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা। বাংলাদেশের বেশ কিছু প্রাক্তন মন্ত্রী এবং এম পিও ছিলেন।
 
বাংলাদেশে আই এস আইয়ের কার্যকলাপ, দুবাই এবং লন্ডনে আই এস আইয়ের ডি জি’র সঙ্গে, ভারতীয় মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে, বাংলাদেশ এবং বিদেশে নিযুক্ত আই এস আই অফিসারদের সঙ্গে এবং আলফার জন্য অস্ত্র সংগ্রহে আই এস আইয়ের হয়ে কাজ করা দুবাইয়ের এ আর ওয়াইয়ের মালিকের সাথে বিভিন্ন সময়ে করা তাঁর বৈঠকগুলির বিস্তৃত বিবরণ শাহাবুদ্দিন দিয়েছেন। তিনি এ’ কথাও প্রকাশ করেছেন, সেই সময় ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানী হাই কমিশনের মাঞ্জার শফিক পরেশ বড়ুয়ার সাথে বৈঠক করা সহ অন্যান্য আই এস আই কাজ কর্মে ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত ছিলেন।  
 
আই এস আইয়ের জন্যেই আলফা, এন এস সি এন (আই/এম) এবং আরও কিছু উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জঙ্গী গোষ্ঠী বাংলাদেশে অবাধে তাদের কাজ কর্ম চালাতে পারছিল। আলফার চিফ কম্যান্ডার পরেশ বড়ুয়া ঢাকায় তাঁর কম্যান্ড হেডকোয়ার্টারস খুলেছিলেন এবং আই এস আই ও বাংলাদেশের গোয়েন্দা বিভাগের নিরাপত্তায় রমরমা ব্য

সর্বশেষ শিরোনাম

বাংলাদেশে পশ্চিমের ‘গণতান্ত্রিক বিতর্কের’ শূন্যতা Tue, Jan 02 2024

হাসিনার ১৫ বছর: আঞ্চলিক সহযোগিতা ও প্রবৃদ্ধির একটি অনুকরণীয় গল্প Thu, Dec 07 2023

বাংলাদেশ: পাকিস্তানের ছায়া থেকে পরিপক্ক গণতান্ত্রিক দেশ Fri, Dec 01 2023

ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম ধর্মতন্ত্র: বাংলাদেশ - এবং পশ্চিম - হুমকির মুখে Thu, Nov 16 2023

সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের সূচক - বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের তুলনা Tue, Jan 17 2023

বাংলাদেশে বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতি - ব্যাপক দুর্নীতি ও উগ্র ইসলামবাদ Sat, Nov 19 2022

বিডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনের বাইরে বাংলাদেশ Wed, Dec 08 2021

Manipulating institutions: The Chinese Way in Bangladesh Sat, Dec 04 2021

শিল্পদ্রব্যের গুনমাণ: কোথায় চীনের বিশ্বাসযোগ্যতা Tue, Sep 15 2020

চিন থেকে সাবধান হওয়ার সময় এখন Mon, Aug 31 2020