Column
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে উত্তেজনা এবং মৃত্যু
বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে রয়েছে ৪,০৯৬ কিমি সীমান্ত, যা বিশ্বের দীর্ঘতম আন্তর্জাতিক সীমান্তগুলির মধ্যে অন্যতম। সীমান্তে গোলাগুলি চলার ফলে কিছু ভারতীয় নাগরিকও নিহত হন বলে খবর। অক্টোবর, ২০১৯- এ বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বি জি বি) -এর গুলিতে এক বি এস এফ সেনার মৃত্যু বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের নিরাপত্তাহীনতার কথাই জানায়।
অক্টোবর, ২০১৯-এ কয়েকজন বি এস এফ আধিকারিক বাংলাদেশে একটি ফ্ল্যাগ মিটিং-এ অংশগ্রহণ করতে গিয়েছিলেন। পদ্মায় মাছ ধরার সময় বি জি বি -র হাতে আটক হওয়া কয়েকজন ভারতীয় মৎস্যজীবীর মুক্তির ব্যবস্থা করা ছিল আলোচ্য বিষয়। সেই সময় ওই অঞ্চলে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। বি জি বি দাবি করেছিল, ভারতীয় মৎস্যজীবীরা বাংলাদেশের ভিতরে গিয়ে মাছ ধরছিল এবং তা এমন এক সময়, যখন সেখানে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা চলছিল। অপরপক্ষে বি এস এফ ফ্ল্যাগ মিটিং চলার সময় বাড়াবাড়ি করা এবং গুলি চালনার জন্য বি জি বিকে অভিযুক্ত করে। বি জি বির দাবি ছিল যে, তারা আত্মরক্ষার্থে গুলি চালিয়েছে।
ভারত থেকে বাংলাদেশে পশু, খাদ্যদ্রব্য, ওষুধ এবং মাদক পাচার করার জন্য পথ হিসেবে সীমান্তকে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা সীমান্ত পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করে। এই সীমান্তে মাঝে মাঝেই বি জি বি এ এবং বি এস এফ -এর মধ্যে ছোটখাটো সংঘর্ষ ঘটেছে। বাংলাদেশের মধ্যে ঢুকে হানা দেওয়া এবং সীমান্তের ও পার থেকে অসামরিক লোকজনদের উপর যথেচ্ছ গুলিচালনার জন্য বাংলাদেশ প্রায়ই বি এস এফ কে অভিযুক্ত করেছে। এ সব হয়েছে বাংলাদেশ থেকে ব্যাপক হারে অবৈধ অনুপ্রবেশের পালটা হিসেবে। পাচার, অনুপ্রবেশ, গরু পাচার এবং মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের মত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে বহু কনফারেন্স হয়েছে।
সাধারণ অসামরিক মানুষেরা প্রায়শই সীমান্তের দুদিক থেকে গুলিচালনার শিকার হন। ২০০৫ সালের ১৬ই এপ্রিল তারিখে বাংলাদেশ এবং ভারতের সীমান্ত রক্ষীদের মধ্যে গুলি বিনিময়ের ফলে দু'জন বি এস এফ কর্মী এবং দু'জন অসামরিক বাংলাদেশি নিহত হন। বি জি বি দাবি করে একজন ভারতীয় বি এস এফ সেনা এবং একজন বি এস এফ অফিসারের দেহ বাংলাদেশের ভিতরে পড়েছিল। ২০১২ সালের ২১শে জানুয়ারি চারজন বি জি বি কর্মী ভারতের মধ্যে ঢুকে একজন ভারতীয় নাগরিককে হত্যা করে। ওই চারজন সেনা নিহত ভারতীয় নাগরিকের দেহটিকে বাংলাদেশের ভিতরে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করায় তাদের বাধা দেয় গুলির আওয়াজ শুনে সেখানে জড়ো হওয়া স্থানীয় ভারতীয়রা।
বি জি বি দাবি করেছে যে, প্রায় ১০০ ভারতীয় অসামরিক ব্যক্তিকে সংগে নিয়ে বি এস এফ-এর একটি প্ল্যাটুন বাংলাদেশের হীরাপুর গ্রামে ঢুকে লুটপাট চালালে বি জি বি গুলি চালায়। গুলি বিনিময়ের ফলে দু'জন বি জি বি সেনা নিহত এবং একজন বি এস এফ জওয়ান আহত হয়। কিন্তু ভারতীয় সেনা অফিসারদের বক্তব্য, বি জি বি- র হাতে এর আগে অপহৃত হওয়া এক ভারতীয় গ্রামবাসীর মুক্তির জন্য ফ্ল্যাগ মিটিং করার অনুরোধ নিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা না করে বি জি বি একজন বি এস এফ কর্মীকে অপহরণ করে হত্যা করে।
যেখানে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক বর্তমান, সেখানে এই ধরনের ঘটনাগুলি বিরাট আঘাত। ঔপনিবেশিক শাসনের উত্তরাধিকার হিসেবে পাওয়া এই সীমান্তে প্রাকৃতিক বিভাজন নেই। পাহাড়, নদী, কৃষিজমি, বসতিপূর্ন শহর-গ্রামের মত জটিল জায়গার মধ্য দিয়ে গেছে এই সীমান্ত। এর ফলে এই সীমান্ত বহুলাংশে ছিদ্রময়, অর্থাৎ ব্যাপক নজরদারির ঊর্দ্ধে এবং তা সীমান্ত ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি চ্যালেঞ্জ।