Column

আমেরিকা-চিনের বাণিজ্যযুদ্ধ পরিণত হয়েছে গণমাধ্যম যুদ্ধে

আমেরিকা-চিনের বাণিজ্যযুদ্ধ পরিণত হয়েছে গণমাধ্যম যুদ্ধে

Bangladesh Live News | @banglalivenews | 03 Mar 2020, 02:28 am
গত ১৮ই ফেব্রুয়ারি শিনহুয়া, সিজিটিএন, চায়না রেডিও ইনটারন্যাশনাল, চায়না ডেইলি এবং দ্য পিপলস ডেইলিকে চিন রাষ্ট্রের চর বলে ঘোষণা করেছে আমেরিকা ।

 মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চিনের প্রভাব এবং সেখানে তার গোয়েন্দা কার্যকলাপ নিয়ে অনেক বছর ধরে চলা বিতর্ক এবং উদ্বেগের পরিণতি হিসেবে দেখা হচ্ছে এই সিদ্ধান্তকে। আমেরিকা মনে করে এই সংস্থাগুলি তাদের দেশে পাঠকদের কাছে, এবং সব থেকে গুরুত্বপূর্ন বিষয়, চিনের কম্যুনিস্ট পার্টির কাছে রিপোর্ট করে। হার্ভার্ডে বিজ্ঞানবিষয়ক গবেষণার ব্যাপারে চিনের গোয়েন্দা কার্যকলাপ এবং ২০১৭ সালে আমেরিকার অন্যতম বৃহত্তম ক্রেডিট রেটিং সোসাইটি ইকুইফ্যাক্সের হ্যাকিঙের ব্যাপারে সম্প্রতি যে রিপোর্ট বেরিয়েছে, তা এই সিদ্ধান্তের পিছনে থাকতে পারে। চিনের টেলিকমুনিকেশন কোম্পানি   হুয়েই এবং তার দু'টি সাবসিডিয়ারি কোম্পানিকেও সম্মিলিতভাবে কালোবাজারি  এবং ব্যবসার গোপন  তথ্য চুরির  ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে আমেরিকা। এই সিদ্ধান্ত সাংবাদিকতা বিষয়ক কাজকর্মকে  ব্যহত না করলেও চিনের স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মীদের নাম, ব্যক্তিগত বিবরণ এবং তাদের আর্থিক লেনদেনের উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে,  এই সব  ব্যক্তি আমেরিকায় কোনও সম্পত্তির মালিক কি না অথবা লিজে কোনও সম্পত্তি ভোগ করছে কি না, তা জানাতে। এই সব সংস্থাগুলিকে 'ফরেন মিশন' বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং  আমেরিকায় অবস্থিত বিদেশি রাষ্ট্রগুলির দূতাবাস এবং কনসুলেটগুলিতে প্রযোজ্য নিয়মগুলি এদের ক্ষেত্রেও বলবত করা হয়েছে।

 

ওয়াশিংটনে  চিনের কিছু সমালোচক অনেকদিন ধরেই চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যমগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার কথা বলছিলেন। এই নতুন বিধিনিষেধগুলিকে প্রবল শক্তিধর প্রতিপক্ষের মোকাবিলা করার জন্য ট্রাম্পের অন্যতম কৌশল হিসেবে বর্ননা করেছেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা। আমেরিকার হিসেব এই যে, চিনের কোনও প্রতিক্রিয়ায় তাদের কোনও ক্ষতি হবেনা, কারণ, চিনেই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ভীষণভাবে অবরুদ্ধ, আর এই পাঁচটি সংস্থাই পিপলস রিপাবলিক অফ চায়নার প্রচারযন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সংবাদমাধ্যমের উপর চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনিপিং -এর নিয়ন্ত্রণ থাকার কারণে ট্রাম্প এদের 'ফরেন মিশন' বলেছেন। আমেরিকার এই ঘোষণা করা হল  দু'দেশের বাণিজ্যযুদ্ধে সাময়িক সন্ধিস্থাপনের জন্য যে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে, তার এবং চিনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের অব্যবহিত পরেই। করোনাভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধরত চিনের উপর নতুন করে চাপ সৃষ্টির অন্যতম পন্থা হিসেবে দেখা হচ্ছে আমেরিকার এই পদক্ষেপকে। 

 

আমেরিকার এই পদক্ষেপের পরের দিনেই চিন দ্রুত  ওয়াল স্ট্রীট জার্নালের তিনজন সাংবাদিকের প্রেস ক্রেডেনশিয়াল বাতিল করে দেয়। এই তিনজন হলেন, জশ চিন, ডেপুটি ব্যুরো চীফ, চাও ডেং, রিপোর্টার (এঁরা দুজনেই আমেরিকান) এবং ফিলিপ ওয়েন, একজন অস্ট্রেলিয়ান রিপোর্টার। "চায়না ইজ দ্য রিয়েল সিক ম্যান অফ এশিয়া" নামে ৩রা ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত একটি লেখার বিতর্কিত শিরোনামের জন্য এই নির্দেশ জারি করা হয়। 'সিক ম্যান অফ এশিয়া' আসলে একটি শব্দবন্ধ, যা চিনের কিং সাম্রাজ্যের দূর্বল অবস্থাকে বর্ননা করতে উনবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপিয়ানরা ব্যবহার করত। এই তিন সাংবাদিককে পাঁচ দিনের মধ্যে চিন ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেক্রেটারি অফ স্টেট মাইক পম্পিও বলেছেন, পরিণত এবং দায়িত্বশীল দেশগুলি ফ্রি প্রেসের অর্থ বোঝে। চিনকে সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাকস্বাধীনতার উপর বিধিনিষেধ জারি করা নয়, পালটা যুক্তির অবতারণা করাই প্রতিক্রিয়া জানানোর সঠিক উপায়। দু'দেশের মধ্যে বানিজ্যযুদ্ধ এভাবেই সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়েছে। তিন সাংবাদিককে দায়ী ঘোষণা করে চিন   ওয়াল স্ট্রীট জার্নালের কাছ থেকে ক্ষমাপ্রার্থনা দাবি করেছে। ইতিমধ্যে, ফরেন করেসপন্ডেন্টস ক্লাব অফ চায়না চিনের এই কাজের নিন্দা করে অভিযোগ করেছে যে, চিনা কর্তৃপক্ষ সে দেশে খবর করতে আসা  সংবাদ প্রতিনিধি এবং রিপোর্টারদের  আরও বেশি করে হেনস্থা করছে, তাদের উপর নজরদারি চালাচ্ছে এবং তাদের ভয় দেখানো হচ্ছে। চিনে সরকার চালিত গ্লোবাল টাইমস বলেছে,  এই দুই যে  দেশ পরস্পরের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, তা ভালো লক্ষণ নয় এবং তা একবিংশ শতাব্দীতে বৃহৎ শক্তিগুলির পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি অশান্ত ভবিষ্যতের ইংগিতবাহী।

 

অগাস্ট, ২০১৯-এ চিন ওয়াল স্ট্রীট জার্নালের একজন রিপোর্টারকে বহিষ্কার করেছিল। প্রেসিডেন্ট শির এক ভ্রাতুষ্পুত্র জুয়া এবং অস্ট্রেলিয়ায় অর্থ পাচারে জড়িত- এই অভিযোগ সংবলিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করার জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। চিনের এই কাজের প্রতিক্রিয়ায় এন বি সি নিউজের জার্নাল এডিটার ম্যাট মারে বলেছিলেন যে, তাঁর সংস্থা কোনও ভীতি অথবা সুবিধার তোয়াক্কা না করে চিন নিয়ে লিখে যাবে এবং সত্য জানানো ছাড়া তাদের অন্য কোনও কর্মসূচী থাকবেনা। সারা বিশ্বে সাংবাদিকেরা চিনে বিদেশি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে  নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার আশংকা করছিলেন। সংবাদমাধ্যমের এক অংশ ক্রেডেনশিয়াল বাতিল করাকে সমালোচনা করে বলেন বর্তমান সময় চিনে যে স্বাস্থ্যসংকট চলছে, যার ফলে চিনের ব্যবসা এবং উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং যার প্রভাব বিশ্ববাজারে ছড়িয়ে পড়েছে,  তাকে পাশ কাটাতেই এই কাজটি করা হয়েছে। বাকি বিশ্বের সঙ্গে চিনের সহাবস্থানযোগ্যতার বিষয়টি জানা আছে। মানসিকতা পরিবর্তন করার জন্য চিনের পক্ষে হয়তো এটাই সময়।

সর্বশেষ শিরোনাম

বাংলাদেশে পশ্চিমের ‘গণতান্ত্রিক বিতর্কের’ শূন্যতা Tue, Jan 02 2024

হাসিনার ১৫ বছর: আঞ্চলিক সহযোগিতা ও প্রবৃদ্ধির একটি অনুকরণীয় গল্প Thu, Dec 07 2023

বাংলাদেশ: পাকিস্তানের ছায়া থেকে পরিপক্ক গণতান্ত্রিক দেশ Fri, Dec 01 2023

ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম ধর্মতন্ত্র: বাংলাদেশ - এবং পশ্চিম - হুমকির মুখে Thu, Nov 16 2023

সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের সূচক - বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের তুলনা Tue, Jan 17 2023

বাংলাদেশে বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতি - ব্যাপক দুর্নীতি ও উগ্র ইসলামবাদ Sat, Nov 19 2022

বিডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনের বাইরে বাংলাদেশ Wed, Dec 08 2021

Manipulating institutions: The Chinese Way in Bangladesh Sat, Dec 04 2021

শিল্পদ্রব্যের গুনমাণ: কোথায় চীনের বিশ্বাসযোগ্যতা Tue, Sep 15 2020

চিন থেকে সাবধান হওয়ার সময় এখন Mon, Aug 31 2020