Column

যুদ্ধাপরাধ বিচারে হস্তক্ষেপঃ চাই বিরুদ্ধ প্রচার

যুদ্ধাপরাধ বিচারে হস্তক্ষেপঃ চাই বিরুদ্ধ প্রচার

| | 27 May 2013, 06:58 am
চরম ত্যাগ আর অনেক রক্তের বিনিময়ে পাকিস্তানের থাবা থেকে মুক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছিল। স্বাধীনতার পর গত ৪১ বছরে এই বিচার ব্যবস্থা নিয়ে এতদিন কোনও প্রশ্ন ওঠেনি।

 কিন্তু সম্প্রতি, দেশের এবং বিদেশের এক শ্রেনীর চক্রী এই বিচার ব্যবস্থা পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিযোগ তুলে গলা তুলে সমালোচনা শুরু করেছে।এই সব মানুষদের সমালোচনার মূল লক্ষ্য উনিশশো একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের সময়ে স্বাধীনতা-বিরোধীদের যুদ্ধাপরাধের বিচার, যা এখন চলছে।  

 

যুদ্ধাপরাধ বিচার-বিরোধী আওয়াজ প্রথমে শোনা যায় গত ডিসেম্বর মাসে, যখন পাকিস্তানে একটি মঞ্চ তৈরি করে সেখানকার সামরিক-রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে গুলাম আজমের মুক্তির জন্য সক্রিয় হওয়ার দাবি জানিয়ে একটি সভা করা হয়। ওই সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তারা অভিযোগ করেন যে, পাকিস্তানের ভৌগোলিক অখন্ডতা রক্ষায় সর্বস্ব পণ করা গুলাম আজম এবং তাঁর বহু সহযোগী এখন যুদ্ধাপরাধ-বিচারের মুখোমুখি। পাকিস্তান সরকারের প্রবল সমালোচনা করে তাঁরা এও বলেন যে,যুদ্ধাপরাধ-বিচারে হস্তক্ষেপ না করে ্নীরব থাকা \'লজ্জাজনক এবং গর্হিত\' কাজ। 
 
সাউথ এশিয়ান নিউজ এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পি এম এল (এন)-এর এক নেতা বলেছেন, পাকিস্তানের মানুষ এ\'ব্যাপারে সর্বসম্মত যে, সে দেশের সরকারের উচিৎ বাংলাদেশের উপর প্রভাব খাটিয়ে এবং চাপ সৃষ্টি করে গুলাম আজম ও তাঁর সঙ্গীদের জেল থেকে ছাড়িয়ে আনা। তিনি আরও বলেন, এ\' ব্যাপারে অরগানাইজেশন অফ ইসলামিক কনফারেন্সের (ও আই সি) সাহায্য নিয়ে বন্দী যুদ্ধাপরাধীদের ধর্মীয় নেতা হিসেবে দেখিয়ে ছাড়িয়ে আনতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে \'ভারতের চক্রান্ত\' বলে ব্যাখ্যা করে ওই নেতা আবার স্বাধীনতা-বিরোধী জামাত নেতাদের জঘণ্য যুদ্ধাপরাধগুলিকে পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষা করার উদ্দেশ্যে \'প্রশংসনীয় প্রয়াস\' বলে বর্ণনা করেন। 
 
আই এস আই-এর প্রাক্তন ডিরেকটর জেনারেল লেঃ জেনারেল হামিদ গুল আবার বলেছেন, ভারতের চাপেই নাকি গুলাম আজম এবং তাঁর  সাঙ্গপাঙ্গদের বিচার হচ্ছে। 
 
এ\'দিকে বাংলাদেশ সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি  করতে তুরস্কে গত মাসে একটি মিটিং ডাকা হয়। সেখানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ বিচার আসলে ইসলামকে মুছে দেওয়ার একটা চক্রান্ত। বক্তাদের পক্ষ  থেকে একটি চিঠিতে বিচার বন্ধ করার জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্টের হস্তক্ষপের আর্জি জানান হয়।এর পরে শুধু যে সে দেশের প্রেসিডেন্ট গুলাম আজম ও তাঁর সঙ্গীদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়ে আবেদন জানান তাই নয়, সেই দেশের রাজনৈতিক নেতাদের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের ওয়ার ক্রাইমস ট্রায়ালের উপর প্রভাব খাটাতেও উদ্যোগী হয়। 
 
কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়ার জন্য যে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা নয়। এ-ও নয় যে, ভারতের চাপে অথবা ভারতকে তুষ্ট করতে এটা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের উপর অমানুষিক অত্যাচার, গণ হত্যা এবং দু\'লক্ষের উপর মহিলাকে ধর্ষণ সহ ওই সময়ের সব রকম জঘন্য অপরাধের প্রতিকারের উদ্দেশ্যেই এই বিচার। কোনও মহল থেকে  নিরপেক্ষতা নিয়ে যাতে প্রশ্ন না উঠতে পারে তার জন্য যথাযথ আইন এবং স্বচ্ছতার মাধ্যমেই এই বিচার করা হচ্ছে।
 
সময় এসেছে এই বিচারের গোটা পদ্ধতি আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরে যুদ্ধাপরাধের ব্যাপারে দেশের মানুষকে ন্যায়বিচার দেওয়ার যে প্রচেষ্টা সরকার করছে, তার জোরদার প্রচার চালান। একই সঙ্গে এই বিচারকে \'রাজনৈতিক প্রতিহিংসা\' বলে জামাত যে প্রচার করছে, তার বিরুদ্ধ-প্রচারও করা দরকার। বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসনীয় এই প্রচেষ্টাকে দেশের অধিকাংশ মানুষই স্বাগত জানিয়েছে। এ\'ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা অথবা কোনও রাজনৈতিক অভিসন্ধির কোনও প্রশ্নই ওঠেনা, কেননা সম্পূর্ন স্বচ্ছ ভাবেই এই বিচার হচ্ছে।চার দশক আগে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় জামাত নেতারা কী ধরনের জঘন্য অপরাধ করেছিল, আর ন্যায়ের স্বার্থে কী ভাবে অত্যন্ত স্বচ্ছ উপায়ে তাদের বিচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে, সে কথাই এখন বিশ্বকে জানানো দরকার।

সর্বশেষ শিরোনাম

বাংলাদেশে পশ্চিমের ‘গণতান্ত্রিক বিতর্কের’ শূন্যতা Tue, Jan 02 2024

হাসিনার ১৫ বছর: আঞ্চলিক সহযোগিতা ও প্রবৃদ্ধির একটি অনুকরণীয় গল্প Thu, Dec 07 2023

বাংলাদেশ: পাকিস্তানের ছায়া থেকে পরিপক্ক গণতান্ত্রিক দেশ Fri, Dec 01 2023

ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম ধর্মতন্ত্র: বাংলাদেশ - এবং পশ্চিম - হুমকির মুখে Thu, Nov 16 2023

সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের সূচক - বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের তুলনা Tue, Jan 17 2023

বাংলাদেশে বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতি - ব্যাপক দুর্নীতি ও উগ্র ইসলামবাদ Sat, Nov 19 2022

বিডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনের বাইরে বাংলাদেশ Wed, Dec 08 2021

Manipulating institutions: The Chinese Way in Bangladesh Sat, Dec 04 2021

শিল্পদ্রব্যের গুনমাণ: কোথায় চীনের বিশ্বাসযোগ্যতা Tue, Sep 15 2020

চিন থেকে সাবধান হওয়ার সময় এখন Mon, Aug 31 2020