Finance
অশান্ত ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর অর্থনীতি
ঢাকা, অগাস্ট ৮: ইউক্রেন যুদ্ধ ভারতীয় উপমহাদেশে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করেছে।
পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা বেলআউটের জন্য 'ব্রেটন উডস' প্রতিষ্ঠানে ছুটেছে। এখন বাংলাদেশও ঋণ চাইছে। কলম্বোর পর ইসলামাবাদও একই পথ অনুসরণ করেছে। ইসলামাবাদ দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে কারণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে।
মিয়ানমার, মালদ্বীপ এমনকি নেপালের অর্থনৈতিক অবস্থাও ভয়াবহ। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া শীঘ্রই আইএমএফ থেকে ঋণ পাওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়ে উদ্যোগকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ জন্য তিনি মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শেরম্যানের সহায়তা চেয়েছেন। বলেন, তার দেশ ঋণগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকির মুখে পড়েছে। তাই, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ১৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলারের সাহায্য রিলিজ করার জন্য আইএমএফকে পেতে তিনি শেরম্যানের সাহায্য চেয়েছিলেন।
অন্যদিকে, কলম্বোকে আরও ত্রাণ দেওয়ার আগে বিশ্বব্যাংক তাদের কাছ থেকে নীতি কাঠামোর জন্য অপেক্ষা করছে। এ সময় ঢাকা আইএমএফের কাছে ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ চেয়েছে। ভারতের অনলাইন হিন্দুস্তান টাইমস-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। সাংবাদিক শিশির গুপ্তের লেখা প্রতিবেদনে 'ব্রেটন উডস' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উইকিপিডিয়া বলছে, ব্রেটন উডস হচ্ছে আর্থিক ব্যবস্থাপনার একটি ব্যবস্থা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, পশ্চিম ইউরোপীয় দেশ, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপান এর অধীনে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আইন প্রতিষ্ঠা করে। এর আগে, ১৯৪৪ সালে ব্রেটন উডস চুক্তি হয়েছিল।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পাঁচ মাস পরও যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। উল্টো আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েছে মস্কো। তারা ইউক্রেনের সরকার উৎখাতের আহ্বান জানিয়েছে।
ইতোমধ্যে পূর্ব ইউক্রেনের অনেক জায়গায় রাশিয়া তাদের অবস্থান সুসংহত করেছে। এদিকে, রাশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নে গ্যাস সরবরাহ ২০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে এমনিতেই শীত অনুভব করছেন তারা। অন্যদিকে পশ্চিমাদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা মস্কোর ওপর কোনো রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক উত্তাপ দেখায় না। এর মানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে।
এর ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধি এবং খাদ্য ঘাটতি অব্যাহত থাকবে। এতে অর্থনৈতিক সংকট আরও বাড়বে। সংক্ষেপে, ভারতের প্রতিবেশী অর্থনৈতিক সংকট, যেমন শ্রীলঙ্কায় দেখা যায়, রাজনৈতিক বিস্ফোরণে পরিণত হতে পারে।
পাকিস্তানের পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তার সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শেরম্যানের সাহায্য চেয়েছেন। তিনি ওয়েন্ডি শেরম্যানকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ আই.এম.এফ থেকে বাদ দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। কারণ, ইসলামাবাদ ঋণখেলাপি হয়ে উঠছে। বিশেষ করে মার্কিন ডলারের দাম বাড়ায় তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে জেনারেল বাজওয়া মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্বে লবিং করার জন্য ডেকেছিলেন। কারণ, আইএমএফ পাকিস্তানি নেতাদের উদ্যোগকে এতটা গুরুত্বের সঙ্গে নিতে পারে না। যেহেতু পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নিয়াজির মার্কিন নেতৃত্বের কাছে সাহায্য চাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না, তাই ওয়াশিংটনের কাছে সাহায্য চাওয়া ছাড়া ইসলামাবাদের কোনো উপায় ছিল না।
অন্যদিকে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী চীনও তাদের সাহায্য করার মতো অবস্থায় নেই। পাকিস্তান তার বৈদেশিক ঋণের অন্তত ২৫ শতাংশ নিয়েছে চীন থেকে।
চীন সম্পর্কে গুপ্তা বলেছিলেন যে তারা ভারতীয় উপমহাদেশকে একটি নতুন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে পরিণত করতে চায়। চীনের আরেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু শ্রীলঙ্কা। বিশ্বব্যাংক তাদের পুনঃঅর্থায়ন করতে অস্বীকার করেছে যতক্ষণ না তারা একটি ব্যাপক সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি কাঠামো প্রদান করে। ফলে সেখানকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।
এক বিবৃতিতে বিশ্বব্যাংক বলেছে, সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি কাঠামোতে আমূল সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে, যা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর জোর দেবে। এটি এই অর্থনৈতিক সংকটের মূল কারণগুলিও চিহ্নিত করবে যাতে শ্রীলঙ্কার পুনরুদ্ধার স্থিতিস্থাপক এবং অংশগ্রহণমূলক হয়। তবে ঢাকার পরিস্থিতি তেমন খারাপ নয়। কিন্তু ব্যাংক থেকে এক ডলারের সরকারি ক্রয়মূল্য এবং কালোবাজার থেকে এক ডলারের ক্রয়মূল্যের মধ্যে পার্থক্য ১০ শতাংশ। এতে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে।
ডলার কার্যত পাকিস্তানি ও শ্রীলঙ্কান রুপিকে 'চূর্ণ' করেছে। বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রা তার অবস্থান ধরে রেখেছে।
এ অবস্থায় খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আইএমএফের কাছে সাড়ে চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ চেয়েছে ঢাকা। যদিও ভারতীয় এবং নেপালি রুপি নেপালের পরিস্থিতিকে হাতের বাইরে যেতে দেবে না, তার রাজনৈতিক নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছে যে কেন আর্থিকভাবে বিচক্ষণ হওয়া এবং চীন থেকে ঋণ নিয়ে গর্ব না করা গুরুত্বপূর্ণ।
সামরিক জান্তার অধীনে মিয়ানমারেও একই অবস্থা। তারাও অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে। বর্তমান মন্দায় টিকতে পারছে না মালদ্বীপ।