Muktijudho

মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাণপুরুষ সিরাজুল আলম খান আর নেই
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা, ৯ জুন ২০২৩: বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাণপুরুষ ও অন্যতম সংগঠক সিরাজুল আলম খান আর নেই। শুক্রবার (৯ জুন) দুপুর সোয়া ২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক জানান, সিরাজুল আলম খান বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে সংক্রমণ, প্রস্রাবে জটিলতা নিয়ে ২০ মে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।
এরআগে কয়েকদিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েও উন্নতি হচ্ছিল না সিরাজুল আলম খানের। সঙ্গে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
ছয় দফার সমর্থনে জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল আলম খান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন এবং ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন তিনি। ষাটের দশকের প্রথমার্ধে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার ‘নিউক্লিয়াস’ গঠিত হয়। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে গিয়ে নিউক্লিয়াস গড়ে তোলার মূল উদ্যোক্তা সিরাজুল আলম খান।
এরপর ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল জাসদ প্রতিষ্ঠা হয়। তিনি কখনও জাসদের নেতৃত্বে আসেননি। তবে জাসদ নেতাদের পরামর্শক হিসেবে তাদের কাছে ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত। তিনি কখনো জনসম্মুখে আসতেন না। আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান তিনি।
সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। ১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন।
তারপর ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৫৮ সালে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন। থাকতেন ফজলুল হক হলে। গণিতে স্নাতক ডিগ্রি নেয়ার পর তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয় ‘কনভোকেশন মুভমেন্টে’ অংশগ্রহণ করার কারণে। প্রতিদিন রাত করে হলে ফিরতেন। ফলে হল থেকেও একবার বহিষ্কৃত হন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করায় তার পক্ষে মাস্টার্স ডিগ্রি নেয়া সম্ভব হয়নি।
১৯৬১ সালে ছাত্রলীগের সহ সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৬৩ সালে সিরাজুল আলম খান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। জাতীয়তাবাদী চেতনাকে বিকশিত করে বাংলাদেশীদের স্বাধীন জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ’৬২ সালে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে যে নিউক্লিয়াস গড়ে উঠে তিনিই ছিলেন তার মূল উদ্যোক্তা।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অধীনস্থ ১১টি সেক্টরের পাশাপাশি ৪টি সেক্টরে বিভক্ত করে বিএলএফ-এর সশস্ত্র সংগ্রামের পরিকল্পনা ও কৌশল ছিল কেবল ভিন্ন ধরনের নয়, অনেক উন্নতমানের এবং বিজ্ঞানসম্মত। বিএলএফ এর চার প্রধান ছিলেন শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক এবং তোফায়েল আহমেদ।