South Asia
ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিদায়ী বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত
নয়াদিল্লী, সেপ্টেম্বর ১৪: বাংলাদেশের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে বিদায়ী রাষ্ট্রদূত সাক্ষাৎ করেন।
রাষ্ট্রপতির বিদায়ী সফরে দিল্লিতে একজন হাইকমিশনার বা রাষ্ট্রদূতের সাথে তার সাক্ষাত একটি বিরল পদক্ষেপ, এবং কর্মকর্তারা এটিকে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব এবং মৈত্রীর অভিজ্ঞতা হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে একটি চমৎকার কফি বইয়ের সংকলন প্রকাশ করেছে। রাষ্ট্রদূত ইমরান ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে মূল্যবান বইয়ের একটি কপিও হস্তান্তর করেন।
ভারতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান তার সাড়ে তিন বছরের মেয়াদ শেষে বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দিল্লি ছেড়ে আমেরিকায় যাচ্ছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে ওয়াশিংটন ডিসিতে যোগ দেবেন।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের দিল্লি সামাল দেন। আগামী সপ্তাহেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন সফরের বিভিন্ন দিক সামলাতে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে হবে।
১৯ সেপ্টেম্বর লন্ডনে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যে যোগদানের পর শেখ হাসিনা নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হবেন - যেখানে তিনি প্রতি বছরের মতো জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে (ইউএনজিএ) যোগ দেবেন এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার উদ্দেশ্যে ভারত ত্যাগের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বিশ্বস্ত রাষ্ট্রদূতকে বলেন, আমি আমেরিকায় পৌঁছানোর আগেই আপনি সেখানে পৌঁছে যাবেন, আপনার জন্য অনেক কাজ অপেক্ষা করছে। ফলে হুট করে দিল্লি থেকে ছুটে যেতে হয় মহম্মদ ইমরানকে।
আবার, কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রধানমন্ত্রীর দুটি ভিভিআইপি সফর পরিচালনা করা, তাও বিশ্বের বিপরীত প্রান্তের দুটি ভিন্ন দেশে - এমনকি একজন বাংলাদেশি কূটনীতিকের জন্যও একটি অত্যন্ত বিরল এবং চ্যালেঞ্জিং অভিজ্ঞতা।
মুহম্মদ ইমরান যখন ২০২০ সালের জানুয়ারিতে দিল্লিতে হাই কমিশনারের দায়িত্ব নেন। কয়েক দিনের মধ্যেই কোভিড মহামারী শুরু হয়। তিনি দিল্লি ছেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে কোভিড প্রায় বেরিয়ে আসার পথে। কিন্তু এরই মধ্যে তিনি মহামারীর দুর্যোগ সত্ত্বেও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিরাট ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন।
ভ্যাকসিন আমদানি থেকে শুরু করে পেঁয়াজের সরবরাহ ঠিক রাখা, রেল ও জাহাজে পণ্য চলাচল শুরু করা বা লকডাউনে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করা – বিদায়ী রাষ্ট্রদূতকে তার মেয়াদে এমন অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। তার আমলেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং (তৎকালীন) রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ ২০২১ সালে একই ক্যালেন্ডার বছরে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন, যা আগে কখনও ঘটেনি।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রাঙ্গণে এক অনানুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে দিল্লিতে কর্মরত দেশ-বিদেশের কূটনীতিকরা মুহম্মদ ইমরানকে বিদায় জানানোর সময় তার পেশাদারিত্ব ও কূটনৈতিক দক্ষতার কথাও জানান। দিল্লির কূটনৈতিক কর্পস তাকে একটি শংসাপত্রও প্রদান করে।
ওই বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও বাংলাদেশ-মিয়ানমার ডেস্কের প্রধান স্মিতা পন্তও উপস্থিত ছিলেন। স্মিতা পন্ত তার বক্তৃতায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতির জন্য মুহাম্মদ ইমরান কীভাবে কঠোর পরিশ্রম করেছেন তার বিভিন্ন উদাহরণ দেন। একই সঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন, “এই কয়েক বছরে হাইকমিশনার ইমরান যেভাবে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করেছেন, যত লোকের সঙ্গে তার দেখা হয়েছে- সত্যি বলতে, এত বছর এ দেশে থাকার পরও আমি এত কিছু করতে পারিনি!"