South Asia

ভারতের ওড়িশায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা, অন্তত ২৬১ জনের মৃত্যু
বালেশ্বর, ওড়িশা, ৩ জুন ২০২৩ : শুক্রবার ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ওড়িশায় একটি ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় অন্তত ২৬১ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ৬৫০ জনের বেশি। ট্রেনের ভেতরে এখনও চাপা পরে রয়েছে বেশ কিছু দেহ। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে জানিয়েছে স্থানীয় সময় শুক্রবার (২ জুন) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওড়িশার বালেশ্বর জেলার বাহাঙ্গাবাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় এখনো পর্যন্ত ২৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত বহু।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, কলকাতাগামী বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ট্রেনটি বাহাঙ্গাবাজার এলাকায় লাইনচ্যুত হয়ে পড়েছিল। কলকাতার শালিমার থেকে চেন্নাইগামী করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ওই এলাকা পেরিয়ে যাওয়ার সময় লাইনচ্যুত ট্রেনের বগির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে ভয়াবহ এই দুর্ঘটনা ঘটে। করমন্ডল এক্সপ্রেসের কয়েকটি বগি ঘটনাস্থলে একটি মালবাহী ট্রেনের বগির ওপর আছড়ে পড়ে।
ছবি: সংগৃহিত
দুর্ঘটনা কবলিত করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটির যাত্রীদের বেশিরভাগই পশ্চিমবঙ্গে বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
যদিও কয়েকজন প্রতক্ষ্যদর্শী দাবি করেছেন করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্রথমে একই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালগাড়িকে পিছন থেকে সজোরে ধাক্কা মারে। এতে যাত্রীবাহী ট্রেনটির এঞ্জিন মালগাড়ির উপরে উঠে যায় এবং কয়েকটি অসংরক্ষিত ও সংরক্ষিত স্লীপার বগি লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লাইনে গিয়ে পড়ে।
সেই বগিগুলোকেই ধাক্কা মারে হাওড়াগামী আরেকটি এক্সপ্রেস ট্রেন। তিনটি ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ হবার কারণেই এতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজে নেমেছেন ভারতের ভারতের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রিলিফ ফোর্সে (এনডিআরএফ) ও ওডিশা ডিজাস্টার র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের (ওডিআরএএফ) সদস্যরা। ভারতের বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারকেও উদ্ধারকাজের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তৈরী রয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী ও নৌসেনা।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, এখনো বেশ কিছু দেহ ট্রেনের ভেতরে আটকা পড়ে রয়েছে, যার ফলে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ছবি: সংগৃহিত
আহতদের উদ্ধার করে আশেপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের অনেক মানুষ এবং বাংলাদেশের নাগরিকরা কলকাতা থেকে দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান মূলত করমণ্ডল এক্সপ্রেসেই।
কলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন জানিয়েছে তারা এই দুর্ঘটনার উপর নজর রাখছে।
ডেপুটি হাইকমিশন এই ঘটনায় একটি হটলাইন নম্বরও চালু করেছে: +৯১-৯০৩৮৩৫৩৫৩৩ (হোয়াটসঅ্যাপ)।
দুর্ঘটনার খবরে দুঃখপ্রকাশ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইট করে বলেছেন, “ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনায় আমি মর্মাহত। এই দুঃসময়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। আহত ব্যক্তিরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক। পরিস্থিতি নিয়ে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গেও কথা বলেছি।”
মোদি দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২ লাখ রুপি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি আহতদের ৫০ হাজার রুপি করে সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি ও গুরুতর আহতদের ২ লাখ রুপি দেওয়ার ঘোষণা করেছেন।
ছবি: সংগৃহিত
ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু টুইট করে বলেছেন, “ওড়িশার বালাসোরে দুর্ভাগ্যজনক রেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানির বিষয়টি জানতে পেরে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। শোকাহত পরিবারগুলোর প্রতি আমার সমবেদনা রয়েছে। উদ্ধারকাজের সফলতা ও আহতদের দ্রুত সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছি।”
রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ও ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক আজ (শনিবার) সকালে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যে হেলিকপ্টারে দুর্ঘটনাস্থলের দিকে রওনা দিয়েছেন।
রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন ঘটনার তদন্ত করার জন্য উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষ হলে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।