South Asia
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত : পাকিস্তানের রিপোর্ট
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা, ১৮ জুন ২০২২: ভারতের উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদ কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারি অধ্যাপক এবং বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক রাজনৈতিক গবেষক ড. আবান্তিকা কুমারী পাকিস্তানের ‘দ্য গ্লোবাল ভিলেজ স্পেস’ পত্রিকায় গত ১৫ জুন ২০২২ লিখেছেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজমান। এখানে সকল ধর্মের মানুষ একত্রিত হয়ে আদিকাল থেকেই যার যার ধর্ম পালন করে আসছে। মুসলমানরা মোট জনসংখ্যার ৯০% হলেও হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টানরাও শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করছে। বাংলাদেশের জনগণের জন্য এটি অবশ্যই দক্ষিণ এশিয়ায় গর্বের বিষয়।
বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষ বসবাস করে, যারা বহু-ধর্মীয়, বহু-জাতিক এবং বহুভাষিক। বাংলাদেশের সংবিধান সকল নাগরিককে স্বাধীনভাবে এবং শান্তিপূর্ণভাবে তাদের নির্বাচিত ধর্ম পালনের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দিয়েছে। সম্ভাব্য অনুমান অনুসারে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যার প্রায় ১২%। এর মধ্যে হিন্দুরা জনসংখ্যার ১০%, বৌদ্ধরা ১%, খ্রিস্টানরা ০.৫০% এবং জাতিগত সংখ্যালঘুরা ১% এরও কম।
ড. আবান্তিকা তার নিবন্ধে লিখেছেন, বিভিন্ন ধর্মের মানুষ কীভাবে একসাথে বসবাস করতে পারে, সহযোগিতা করতে পারে তার বাস্তব উদাহরণ বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যে দেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্প্রীতি এবং সহনশীলতার মূল্য দেয়া হয়। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ধর্মীয় গোষ্ঠী এবং জাতিগত গোষ্ঠীর বিভিন্ন বৈচিত্র্য দ্বারা গঠিত। এই ধরনের সম্প্রদায় এবং গোষ্ঠীগুলো সম্প্রীতিতে বাস করে। তাদের পার্থক্যকে দূরে রেখে ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিকে আলিঙ্গন করতে এবং সম্মান করতে শেখে যা বাংলাদেশের সমতায় অবদান রেখেছে।
তিনি লিখেছেন, অটুট সামাজিক ও ধর্মীয় শান্তির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এই দেশটি তাদের মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি নির্বিশেষে সবার মধ্যে সহনশীলতা এবং শ্রদ্ধার সমৃদ্ধ সংস্কৃতির কারণে সামাজিক সম্প্রীতির উদাহরণ। তাদের উদার মনোভাব জাতির সমন্বয়ে অবদান রেখেছে।
শেখ হাসিনা সরকার সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়েছে এবং ঢাকার বিখ্যাত ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পূর্বে হারিয়ে যাওয়া সম্পত্তি পুনরূদ্ধারে সহায়তা করেছে। সারা বিশ্বের বৌদ্ধ তীর্থযাত্রীদের সেবা করার জন্য বাংলাদেশ নেপালের লুম্বিনিতে একটি বৌদ্ধ তীর্থস্থানও নির্মাণ করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশাসন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের সকল মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা এবং গুরুদোয়ারা পরিচালনা করে।
কেউ কি কল্পনা করতে পারে একটি মুসলিম দেশ নেপালে (ধর্মীয়ভাবে হিন্দু দেশ) একটি বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ করছে? সম্প্রতি নির্মিত এই বিহার বিশ্বের সকল দেশের জন্য একটি সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে যে, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বের জন্য রোল মডেল। বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ হিসেবে বজায় রাখতে আগ্রহী।
উদাহরণ স্বরূপ, মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের ভিন্ন ধর্মের দুই ব্যক্তি- একজন হিন্দু এবং একজন মুসলমান একে অপরের ধর্মের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছেন। বাগেরহাট জেলায় একজন হিন্দু একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য সম্পত্তি দান করেছেন এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের ৯ জন মুসলমান নেতা তাদের জমির একটি অংশ শ্মশান হিসাবে ব্যবহারের জন্য দান করেছেন।
এ সব কারণে বাংলাদেশকে বিশ্বের চ্যাম্পিয়ন এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রোল মডেল হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আন্তঃসাম্প্রদায়িক শান্তিও আস্থা নিয়ে এখানে বসবাস করে আসছে। বিশ্ব বাংলাদেশের আন্তঃসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা জানে এবং প্রশংসা করে। বাংলাদেশীরা ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ নীতি মেনে চলে; সকল ধর্মের প্রতি সকলের সমান শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে।’