South Asia
পাকিস্তানের চরম অর্থনৈতিক দুর্দশা ঘুম কেড়েছে ইমরান খানের
ইসলামাবাদ, নভেম্বর ১৭: চরম অর্থনৈতিক মন্দা এবং তার পিছনে সম্ভাব্য মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা বিপুল চাপে ফেলেছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে। পেট্রোলের দামকে ছাপিয়ে যাওয়া চিনির মূল্য, যা সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির একটি নমুনামাত্র, অনতিকালে পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম মুদ্রাস্ফীতিকে ডেকে আনতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা।
ক্ষমতায় আসার আগে দেশ থেকে দুর্নীতি উপড়ে ফেলে নতুন, সমৃদ্ধ পাকিস্তান উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন ইমরান খান। এক কোটি কর্মসংস্থানেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সম্প্রতি সৌদি আরব সফরের পর তার বদলে রিয়াধের থেকে তিন বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক সহায়তার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি।
জাতির উদ্দেশ্যে একটি ভাষণে বিরোধী দলগুলিকে তাদের অতীতের ভুলের জন্য বিঁধে ইমরান আন্তর্জাতিক বাজারে মুদ্রাস্ফীতিকে পাকিস্তানের জনগণের দুর্দশার জন্য দায়ী করেছেন। এই অবস্থা সামাল দিতে অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যদ্রব্যে ভর্তুকির জন্য তিনি একটি ১২০ বিলিয়ন রুপির প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন।
অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ খুর্রম হুসেইন বলেছেন, সরকারের এই প্যাকেজ মানুষের দুর্দশা সামলাতে "সমুদ্রের মধ্যে এক ফোঁটা জল।"
"এর পর থেকে ইমরান খানের উপর চাপ আরও বাড়বে, কারণ প্যাকেজ ঘোষণার পরেই জ্বালানি এবং চিনির মত বেশ কিছু জিনিষের দাম আরও বেড়ে গেছে," তিনি বলেছেন।
হুসেইন বলেন, এই মুদ্রাস্ফীতি ঘটছে এমন একটা সময়ে, যখন কর্মহীনতা শিখরে পৌঁছচ্ছে এবং মজুরি একই জায়গায় আটকে থাকছে। সুতরাং তা সাধারণ মানুষের উপর পিঠভাঙা বোঝার মত চেপে বসেছে।
পাকিস্তানের অর্থনীতির বেহাল দশার মধ্যেই বেড়েছে বৈদেশিক ঋণের বোঝা এবং আমেরিকার মত রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে কূটনৈতিক দূরত্ব। এরই মধ্যে সন্ত্রাসবাদীদের রমরমা দেশে অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
পাকিস্তানের বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে ইউরোপীয় ফাউন্ডেশন ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান এখন ভয়াবহ নগদ অর্থ সংকটে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সম্প্রতি জানিয়েছে, দেশটির এক্সটার্নাল ফাইন্যান্সিং রিকুয়ারমেন্ট আশঙ্কাজনকভাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৩.৬ বিলিয়ন ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছবে।
এর মধ্যে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক শীর্ষ দশ বিদেশি ঋণ গৃহীতা দেশের মধ্যে পাকিস্তানকে অন্তর্ভুক্ত করে দেশটির দুর্দশাগ্রস্ত অর্থনীতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। পাকিস্তানের স্টেট ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩৯.৯ ট্রিলিয়ন রুপি, যা ইমরানের ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম তিন বছরে ছিলো ১৪.৯ ট্রিলিয়ন রুপি। এছাড়া পাকিস্তানের বর্তমান মুদ্রাস্ফীতির হার দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশে পৌঁছেছে। গেল সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৭.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
অর্থনীতির এমন চরম দুঃসময়ে একদা-ত্রাতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও ইমরান খান সরকারের সম্পর্ক খারাপের দিকে গেছে, বিশেষত আফগানিস্তান ইস্যুতে। চীনের দিক থেকেও স্বস্তিতে নেই ইমরান খান সরকার। এর অন্যতম কারণ সম্প্রতি চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরে কাজ করা চীনা নাগরিকদের উপর হামলা ও হত্যাকাণ্ড দুই দেশের সম্পর্কে বিরুপ প্রভাব ফেলেছে।
এ ছাড়া পাকিস্তানের অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলিতে চীনের একক আধিপত্য নিয়ে দেশটির ব্যবসায়ীরা চাপ সৃষ্টি করছে সরকারের উপর। তাই সব মিলিয়ে বেনজির বেহাল দশা এখন পাকিস্তানের তথা ইমরান খান সরকারের।