South Asia
![পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র, জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণার জন্য বিশিষ্টজনদের দাবি পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র, জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণার জন্য বিশিষ্টজনদের দাবি](https://www.bangladeshlivenews.com/news_pic/2020/7375866793be0a15e6b6ad3d53a0d2dd.jpg)
পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র, জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণার জন্য বিশিষ্টজনদের দাবি
ঢাকা, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০: মুম্বাইয়ে জঙ্গী হামলার ১২তম বার্ষিকী স্মরণে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ও জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণার দাবি উঠেছে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত এই ওয়েবিনারে মানবাধিকার কর্মী-সহ বিভিন্ন পেশার বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, উপমহাদেশে ইসলামের নামে জঙ্গী সন্ত্রাসের জনক এবং পৃষ্ঠপোষক পাকিস্তান এবং জামায়াত সেই সন্ত্রাসের অন্যতম অংশীদার।
তাঁদের বক্তব্য, সময় এসেছে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রবল জনমত সৃষ্টি করে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র এবং জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত করা দরকার। তা যদি না করা হয়, তাহলে ইসলামের নামে জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাসী হামলার ভূত উপমহাদেশ-সহ পৃথিবীর ঘাড় থেকে নামবেনা।
‘উপমহাদেশে ইসলামের নামে জঙ্গী সন্ত্রাসের গডফাদার পাকিস্তান' শীর্ষক এই ওয়েবিনারে সংগঠনের সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক (উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি); শিক্ষাবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবাল (কেন্দ্রীয় সদস্য, নির্মূল কমিটি); অধ্যাপক মেজবাহ কামাল (কেন্দ্রীয় সদস্য, নির্মূল কমিটি); ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ (কেন্দ্রীয় সদস্য, নির্মূল কমিটি); ডাঃ মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল (সাধারণ সম্পাদক, নির্মূল কমিটি চিকিৎসা সহায়ক কমিটি); লেখক মারুফ রসুল (সহযোগী সম্পাদক, জাগরণ); সাহিত্যিক ও সাংবাদিক দিব্যেন্দু দ্বীপ (সহকারী সম্পাদক, জাগরণ); গবেষক তাপস দাস (নির্বাহী সদস্য, ইন্দো বাংলাদেশ ফোরাম ফর সেকুলার হিউম্যানিজম ভারত); মুক্তিযোদ্ধা আক্তার এম জামান (সভাপতি, নির্মূল কমিটি সুইডেন); সমাজকর্মী হাসনাত ফারুক শিমুল রবিন (সহসভাপতি, নির্মূল কমিটি অস্ট্রেলিয়া); মানবাধিকারকর্মী আনসার আহমদ উল্লাহ (সাধারণ সম্পাদক, নির্মূল কমিটির সর্ব ইউরোপীয় কমিটি); মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চক্রবর্তী (আহ্বায়ক, নির্মূল কমিটি সিলেট); ডাঃ মফিজুল ইসলাম মান্টু (সভাপতি, নির্মূল কমিটি রংপুর); সংস্কৃতিকর্মী জ্যোতি আহমেদ (সভাপতি, নির্মূল কমিটি কুড়িগ্রাম); এ্যাডভোকেট দীপক ঘোষ (সভাপতি, নির্মূল কমিটি মানিকগঞ্জ); ও কাজী মুকুল (কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, নির্মূল কমিটি)।
শাহরিয়ার কবির বলেন, 'এক যুগ পার হলেও পাকিস্তান মুম্বাই আক্রমণের নেপথ্য নায়কদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা তো নেয়ইনি, বরং তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে।'
'ভারতের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রামাণ্য নথিপত্র দেওয়া হলেও পাকিস্তানী সরকার কোনও পদক্ষেপই করেনি। মুম্বাই হামলা নিয়ে ইসলামাবাদের আচরণ প্রমাণ করছে মুম্বাইয়ের ২৬/১১ হামলার পিছনে ছিল পাকিস্তানের সরকারী মদত।'
২০০৮ সালের ২৬শে নভেম্বর থেকে চার দিন ধরে মোট ১৪টি ঘটনায় পাকিস্তান থেকে আগত জঙ্গী সংগঠন লশকর-এ-তৈবার দশ জঙ্গী গুলি চালিয়ে এবং বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মুম্বাই শহরের বিভিন্ন জায়গায় অন্তত ১৭৪ জন মানুষকে হত্যা করেছিল। আহত হয়েছিলেন ৩০০ জন।
এই হামলা যে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মদতেই হয়েছিল, সেটা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও আজ স্পষ্ট। তাই হামলার মূল চক্রী, লস্কর-এ-তৈয়বা (এলইটি)-র প্রধান হাফিজ সঈদ ও তার সঙ্গীদের আড়াল করতে ব্যস্ত ইসলামাবাদ।
বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ড থেকে আরম্ভ করে গত চল্লিশ বছরে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী এবং পাকিস্তানের আইএসআইয়ের যোগাযোগের কথা উল্লেখ করে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘এখন সময় এসেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবল জনমত সৃষ্টি করার, যাতে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র এবং জামায়াতে ইসলামীকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত করা হয়।'
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, 'জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা এখন সময়ের দাবি। কিন্তু চীনের কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না।'
'পাকিস্তান চীনের অস্ত্র বিক্রির বিশাল বাজার, ফলে চীন সবসময় ভেটো দিয়ে পাকিস্তানকে রক্ষা করে। পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ায় তথা পৃথিবীতে জঙ্গীবাদী সন্ত্রাস রফতানি করছে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা থেকে শুরু করে বাংলাদেশে প্রতিটি জঙ্গী হামলার সঙ্গে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইএসআই মদদপুষ্ট জামায়াত ইসলামী জড়িত।’
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, 'এদেশে জঙ্গী কারা, জঙ্গীদের কারা মদদ দেয় তা আমরা জানি। ধর্ম তাদের হাতিয়ার, ‘নাস্তিকতা’ তাদের একটি অজুহাত। কাউকে নাস্তিক আখ্যা দিতে পারলে কাজটা তাদের জন্য অনেক সহজ হয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যারা কথা বলবে, আমাদের বাঙালী সংস্কৃতির পক্ষে যারা কথা বলবে তারা তাদের শত্রু। ফলে তরুণ প্রজন্মকে আমাদের বোঝাতে হবে যে, পাকিস্তান একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র, যারা পবিত্র ইসলাম ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ’৭১-এ এদেশে গণহত্যা চালিয়েছিল। ওরা এখন একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আমাদের দেশটা যেন ওদের মতো না হয়ে যায়।'
নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক সমাজকর্মী কাজী মুকুল বলেন, 'শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে নির্মূল কমিটি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে তখনই মাঠে নেমেছিল যখন মৌলবাদীদের ভয়ে কোন রাজনৈতিক দল মাঠে নামতে সাহস করছিল না। সুতরাং আবারও আমাদের সরব হতে হবে।'