South Asia
সন্ত্রাসবাদঃ এফএটিএফের কালো তালিকাভুক্ত হতে পারে পাকিস্তান
গত সোমবার, অর্থাৎ ২১শে ফেব্রুয়ারি থেকে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে শুরু হয়েছে ফিনানশিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (এফএটিএফ) ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং প্লেনারি বৈঠক। চলবে মার্চের ৪ তারিখ অবধি। চার বছর ধরে এফএটিএফের ধূসর তালিকায় থাকা পাকিস্তানের ভাগ্য এবার বিশেষ ভাবে নির্ভরশীল এই বৈঠকের উপর।
বিশ্লেষকদের ধারণা, বৈঠকে বিশ্বব্যাপী জঙ্গী কার্যকলাপে অর্থ সরবরাহ ও অর্থ পাচার পর্যালোচনায় অসহযোগীতার কারণে পাকিস্তানকে এবার কালো তালিকাভুক্ত করা হতে পারে।
দু'হাজার আঠেরো সাল থেকেই এফএটিএফ'র ধূসর তালিকায় রয়েছে পাকিস্তান।
সারা বিশ্বে জঙ্গীবাদে অর্থ সরবরাহ ও অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে যে কর্তব্যগুলি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল অংশগ্রহণকারী দেশগুলিকে, সেগুলির মধ্যে দু'টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না করায় ২০২১ সালেও পাকিস্তানকে ধূসর তালিকায় রেখে দেওয়া হয়। অথচ এফএটিএফ যেখানে পাকিস্তানকে আরও তৎপর হতে, আরও পদক্ষেপ করতে বলেছিল, সেখানে ধূসর তালিকাভূক্ত হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পাকিস্তানে তিনজন গুরুত্বপূর্ন লশকর-এ-তৈবা নেতার বিরুদ্ধে আনা মামলা বানচাল হয়ে যায়।
ধূসর তালিকায় থাকার ফলে পাকিস্তানের আমদানি, রফতানি, রেমিটেন্স ও আন্তর্জাতিক অনুদানের পরিমাণ কমেছে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে পাকিস্তানের ক্ষতি হয়েছে ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবার কালো তালিকাভুক্ত হলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
এফএটিএফের ধূসর তালিকাভুক্ত দেশগুলিকে সন্ত্রাসীদের তহবিল জোগানো, অর্থ পাচার এবং অন্যান্য জঘন্য কাজকর্মের মুক্তাঞ্চল বলে ধরে নেওয়া হয়। রাষ্ট্রসংঘের প্রস্তাবে বলা হয়েছে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মে তহবিল জোগানো এক বিশেষ অপরাধ। সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে পাকিস্তান কোনও উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারেনি বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
গতমাসে রাষ্ট্রসংঘে ভারতের রাষ্ট্রদূত টি এস তিরুমূর্তি গত মাসে বলেছেন, মাথার উপর চড়া দাম ধার্য করা এবং রাষ্ট্রসঙ্ঘের ঘোষিত সন্ত্রাসবাদীদের 'পাঁচ তারা' খাতির করে পাকিস্তান।
অনেক বিশ্লেষকের মতে পাকিস্তান ধরেই নিয়েছে যে, হাফিজ সইদ, যার বিরুদ্ধে অসংখ্য মারাত্মক অভিযোগ রয়েছে এবং যার সন্ধান দেওয়ার জন্য দশ লক্ষ আমেরিকান ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে, তাকে শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদীদের তহবিল জোগানোর মামলায় দোষী প্রমাণ করে শাস্তি দিতে পারলেই দেশকে ধূসর তালিকা থেকে বের করে আনা যাবে।
উল্লেখযোগ্য যে্ সইদকে মুম্বাইয়ের ২৬/১১ সন্ত্রাসী হানার জন্য এখনও বিচার করা হয়নি। ষড়যন্ত্রে তার আর এক সঙ্গী, ২০০১ সালে ভারতীয় সংসদ আক্রমণের পান্ডা মাসুদ আজহার অবাধে পাকিস্তানের রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। এই দুই ব্যক্তিকেই অল্প সময়ের জন্য আটকে রাখা হয়েছিল।
দু'হাজার কুড়ি সালের অক্টোবর মাসে এফএটিএফের প্রেসিডেন্ট ডঃ মার্কাস প্লেয়ার সংবাদসংস্থা এএনআইকে বলেছিলেন, করণীয় মোট ৩৪ টি অ্যাকশন প্ল্যানের মধ্যে পাকিস্তান সরকার ৩০টি সম্পূর্নভাবে অথবা অনেকটাই রূপায়িত করেছে। কিন্তু রাষ্ট্রসঙ্ঘ দ্বারা নির্দিষ্ট সন্ত্রাসবাদী দলগুলির শীর্ষ নেতা এবং কমান্ডারদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা এবং তাদের বিচারের ব্যবস্থা করার মত অতি গুরুত্বপূর্ন অন্তত দু'টি ব্যাপারে এখনও কিছু করা হয়নি।