World
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ফেডারেল মুসলিম নারী-বিচারক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নুসরাত
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা, ১৬ জুন ২০২৩: যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মুসলিম নারী ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নুসরাত জাহান চৌধুরীকে ফেডারেল বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিউইয়র্কে ফেডারেল বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট বৃহস্পতিবার ১৫ জুন ৪৪ বছর বয়সী নুসরাত জাহানের নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করার পক্ষে ভোট দিয়েছে। নিউইয়র্কের ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্টের জেলা আদালতের ফেডারেল বিচারক হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন নুসরাত।
এ নিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার ও মুসলিম অ্যাডভোকেসি গ্রুপগুলো। নুসরাত চৌধুরীকে ফেডারেল বেঞ্চে নিয়োগে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ভোট অনেক কারণেই ঐতিহাসিক। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্রুপ মুসলিম অ্যাডভোকেসির নির্বাহী পরিচালক ওমর ফারাহ এক সংবাদ বিবৃতিতে বলেন, আমাদের আইনি ব্যবস্থায় সব মানুষের সঙ্গে যেন ন্যায্য আচরণ করা হয়, তা নিশ্চিত করতে নুসরাত চৌধুরী নিজের কর্মজীবন উৎসর্গ করেছেন।
আইনজীবীরা বলেছেন, নুসরাতের এই স্বীকৃতি মার্কিন আইন ব্যবস্থায় মুসলিম প্রতিনিধিত্বের জন্য একটি মাইলফলক। কখনো কখনো দেশটির মুসলিম সম্প্রদায়কে বৈষম্য এবং নাগরিক স্বাধীনতা লঙ্ঘনের শিকার হতে দেখা যায়।
নুসরাত চৌধুরী এর আগে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের (এসিএলইউ) ইলিনয় শাখার আইনি পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এটি একটি বিশিষ্ট মার্কিন নাগরিক স্বাধীনতা সংস্থা, যেখানে তিনি ফৌজদারি বিচার, পুলিশিং এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর সরকারি নজরদারির মতো বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করেছেন।
ডেমোক্র্যাটিক সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা চাক শুমার নুসরাত চৌধুরীর মনোনয়ন নিশ্চিতে সহায়তা করেছিলেন। তিনি বলেন, সিনেট ডেমোক্র্যাটরা ফেডারেল বেঞ্চে ২১ জন এশিয়ান আমেরিকান বিচারককে অনুমোদন দিয়েছে।
নুসরাত জাহান চৌধুরী বাংলাদেশের ফেনী জেলার মেয়ে। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রেই। তবে নাড়ির টান ভোলেননি তিনি। তাই মাঝেমধ্যেই ছুটে আসেন পৈতৃক ভূমিতে। নুসরাতের পৈতৃক নিবাস ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার দক্ষিণ আলীপুর গ্রামে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার এই আইনজীবীকে বিচারক মনোনয়ন দিয়েছেন। এ পদে তিনি দ্বিতীয় বাংলাদেশি-আমেরিকান ও প্রথম মুসলিম আমেরিকান নারী।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে কয়েকটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর নিউইয়র্ক পুলিশের নজরদারি চ্যালেঞ্জ করাসহ অসংখ্য নাগরিক অধিকারের মামলায় লড়েছেন নুসরাত। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ল স্ট্কুল, প্রিন্সটন স্কুল অব পাবলিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স এবং কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন।
নুসরাতের বাবা ডা. নুরের রহমান চৌধুরী স্কলারশিপ নিয়ে ১৯৫৬ সালে ইংল্যান্ড পড়তে যান। পরে ১৯৬০ সাল থেকে আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তিনি নিউরোজলিস্ট ছিলেন। আমেরিকাতেই জন্মগ্রহণ করেন নুসরাত। ২০১১ সালে তার বাবা আমেরিকায় মৃত্যুবরণ করেন।
২০১৬ সালের নভেম্বরে নিউইয়র্ক টাইমসে নুসরাত ও তার স্বামীকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, প্রেম করেই মাইকেল আলেকজান্ডার আর্লিকে বিয়ে করেন নুসরাত।