World
দক্ষিণ এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে চীন
বেইজিং, আগস্ট ৩: শি জিনপিঙয়ের আমলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অতি আগ্রাসী পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে চলা চীনের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টা অনেক দিন ধরেই দেখছে সারা পৃথিবী। চীনের চংগিং শহরে চায়না-সাউথ এশিয়া কান্ট্রিজ পভার্টি অ্যালেভিয়েশন সেই তালিকায় সাম্প্রতিক সংযোজন। ভারত, ভূটান ও মালদ্বীপ ছাড়া সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কোঅপারেশনের (সার্ক) বাকি পাঁচটি দেশই যোগ দিয়েছে এই সংগঠনে।
এই বছরের এপ্রিলের শেষের দিকে দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশের বিদেশ মন্ত্রী এবং চীনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র মধ্যে কোভিড- ১৯ অতিমারি নিয়ে একটি ভার্চুয়াল মিটিঙ চলাকালীন এই ধরণের একটি কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনার কথা আলোচনা করা হয় বলে জানা গেছে। তবে কী ভাবে এই কেন্দ্র কাজ করবে, তার বাজেট কত হবে অথবা কী ভাবে এবং কোন পরিসরে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে কাজ করা হবে, সে সম্পর্কে চীন এখনও কিছু জানায়নি।
"মূলত এটি একটি মঞ্চ, যেখানে যোগদানকারী দেশগুলি দারিদ্র্য দূর করার ব্যাপারে চীনের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে পারে এবং তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতাও ব্যক্ত করতে পারে," চীন সরকারের জয়েন্ট সেক্রেটারি পদমর্যাদার এক আধিকারিক এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন।
তবে কূটনীতিক এবং নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ করা হল এমন এক সময়, যখন সার্কের কাজকর্ম থেমে আছে। অর্থাৎ সার্কের বিকল্প হিসেবে এই নতুন সংগঠন তৈরি করে দক্ষিণ এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তারের এক নতুন চাল চালল চীন।
এই ব্যাপারটি স্পষ্ট করেই সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন বৈদেশিক সম্পর্কের ব্যাপারে নেপালের দুই প্রধানমন্ত্রীর প্রাক্তন পরামর্শদাতা এবং একদা জেনিভায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত দীনেশ ভট্টরাই, "দক্ষিণ এশিয়ায় দারিদ্র্য দূর করাই যদি লক্ষ্য হয়, তাহলে ভারতকে এর বাইরে রাখা হল কেন? সেখানে তো গরীব মানুষের সংখ্যা সব থেকে বেশি, যা সাব- সাহারা অঞ্চলের গরিব মানুষদের সমসংখ্যক। আমি এর পিছনে ভূ-কৌশলগত উদ্দেশ্য দেখতে পারছি।"
ভট্টরাইয়ের মতে, যেহেতু সার্ক এখন নিষ্ক্রিয়, তাই তাকে পরিত্যাগ করে নতুন ছাতার তলায় দক্ষিণ এশিয় দেশগুলিকে আনার একটা সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে চীন।
একই কথা বলেছেন নিহার নায়েক, দিল্লির মনোহর পারিক্কার ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালিসিসের রিসার্চ ফেলো। "চীন দক্ষিণ এশিয়াকে নিশানা করেছে। তারা সার্কের পালটা কিছু করতে চায়, তাই এই ধরণের একটি উদ্যোগের নাম করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইছে," তাঁর বক্তব্য।
পাকিস্তান বরাবরই চীনের বন্ধু। যেকোনো উদ্যোগে তারা ইসলামাবাদকে পাশে পাবে- এটা ধরে নেয়াই যায়। কিন্তু যেভাবে চীন প্রথমে আফগানিস্তান এবং পরে বাংলাদেশকে নিশানায় রেখেছে- সেটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ওই দুই দেশের পরেই নেপালের পালা আসবে বলে মনে করে ওই বিশ্লেষক।
নেপালের সাবেক উপদেষ্টা ভট্টারাই অবশ্য মনে করেন- সার্কের আজকের অবস্থান চীনের এই নতুন উদ্যোগে গতি এনেছে। তবে চীনের মুখ্য উদ্দেশ্যে আমেরিকাকে মোকাবিলা। তাই তাদের নেতৃত্বাধীন দক্ষিণ এশীয় ব্লকটি ওয়াশিংটন নেতৃত্বাধীন কোয়াডের বিকল্প হিসেবেও কাজ করতে পারে।