World
সংখ্যালঘু বন্দিদের প্রত্যঙ্গ কেটে কালোবাজারে বিক্রি করছে চীন: অভিযোগ
বেইজিং, নভেম্বর ১০: উইঘুর মুসলিম এবং অন্যান্য সংখ্যালুঘু মানুষদের উপর জিনজিয়াং প্রদেশে চীন সরকারের লাগাতার মানবতা লঙ্ঘনকারী নির্যাতনের বিষয়টি আবারও নতুন করে প্রচারের আলোয় এল। সম্প্রতি একটি গণমাধ্যম রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, জোর করে নির্যাতিত এইসব উইঘুরদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বের করে নিয়ে কালোবাজারে বিক্রি করে শত শত কোটি ডলার কামাচ্ছে বেজিং। এই সাংঘাতিক অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে এর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠতে পারে আন্তর্জাতিক স্তরে।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের ট্যাবলয়েড পত্রিকা হেরাল্ড সানের খবর, ইউনাইটেড নেশনস হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের একটি সভায় এই রিপোর্টের কথা বলা হয়েছে। এই রিপোর্টে এমন বহু বীভৎস ঘটনার কথা বিশদে বলা হয়েছে, জানানো হয়েছে, কী ভাবে কালোবাজারে একটি সুস্থ লিভারের বিনিময়ে ১,৬০,০০০ ডলার পর্যন্ত দাম পাওয়া যেতে পারে এবং কী ভাবে এর থেকে চীন বছরে অন্তত একশো কোটি ডলারের ব্যবসা করতে পারে।
বন্দিশিবিরে আটক উইঘুর মুসলিমদের পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী তিব্বতি এবং ফালুন গং গোষ্ঠীর বন্দিদের থেকেও জোর করে অঙ্গ সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে ওই প্রতিবেদনে অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
চায়না ট্রাইব্যুনাল নামে একটি প্রেশার গ্রুপের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চীনা সরকার উইঘুর মুসলিম, তিব্বতি এবং ফালুন গং বন্দিদের হৃদপিন্ড, কিডনি, ফুসফুস এবং চামড়া কেটে বিক্রি করছে। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে এমন অভিযোগের কথা প্রথম শোনা যায়, যা নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। চায়না ট্রাইব্যুনালের কথা অনুযায়ী, তাদের সংস্থায় আইনজীবী এবং চিকিৎসাবিদ্যা বিশারদরা আছেন। এই সংস্থাকে অস্ট্রেলিয়ার এন জি ও 'এন্ড ট্রান্সপ্ল্যান্ট অ্যাবিউজ ইন চায়না' সাহায্য করে থাকে।
জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের সামনে বক্তব্য পেশ করার সময় চায়না ট্রাইব্যুনালের আইনজীবী হামিদ সাবি বলেছেন চীন সরকার যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলির বন্দিদের থেকে জোর করে অঙ্গ সংগ্রহ করছে, এর প্রমাণ তাঁদের কাছে আছে।
তিনি বলেছেন, জীবিত অবস্থাতেই ফালুন গং সম্পদায়ের বন্দিদের শরীর থেকে কিডনি, লিভার, হৃদপিন্ড, কর্নিয়া এবং চামড়া কেটে বের করে নেওয়া হয়েছে পণ্য হিসেবে বিক্রি করার জন্য।
দীর্ঘদিন ধরেই চীনের বিরুদ্ধে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের শিনজিয়াং প্রদেশে বসবাসরত উইঘুর মুসলিমদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এ নিয়ে অনেক দিন থেকেই সারা বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন সোচ্চার, এমন কি জাতিসংঘেও এ নিয়ে বার বার উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
চীনের বিভিন্ন বন্দিশিবিরে আনুমানিক ২০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে বন্দি করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের। সেখানে যৌনাঙ্গে ইলেকট্রিক শক, নিষিদ্ধ ওষুধ প্রয়োগ, নারী বন্দিদের ধর্ষণসহ বন্দিদের উপর নানা অত্যাচার করা হয় বলে অভিযোগ আছে।
চল্লিশের দশকে স্বাধীন রাষ্ট্র পূর্ব তুর্কিস্তান দখল করে শিনজিয়াং প্রদেশ নামকরণ করেছিল চীন। তার পর থেকেই সেখানকার বাসিন্দা উইঘুর মুসলিমদের একাংশ চীনের দখলদারির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে।
অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট (এএসপিআই) বলছে, ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ৮০ হাজার উইঘুরকে জিনজিয়াং থেকে চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের কারখানায় পাচার করা হয়েছে। এই উইঘুরদের জোরপূর্বক শ্রমে নিযুক্ত এবং তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করে কোটি কোটি ডলার অর্থ সংগ্রহ করছে চীন। ২০১৯ সালে চীনের একটি আদালতে দেশটিতে প্রায় ৬০ হাজার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন হয়েছে বলে জানানো হয়। তবে এই সংখ্যা দাতাদের তুলনায় অনেক বেশি।