World
বিশ্বের সব থেকে বড় সাংবাদিক নিপীড়ক শি জিনপিংয়ের চীন সরকারঃ প্রতিবেদন
বেজিং, ডিসেম্বর ২৪: চীন ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাংবাদিক নিপীড়ক’। সংবাদমাধ্যম দমনের ব্যাপারে সে দেশের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আমলে যে দুঃস্বপ্নময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা মাওয়ের জমানাকে মনে পড়িয়ে দেয়, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার (আরএসএফ) নতুন এক প্রতিবেদনে এ কথা বলেছে।
বলা হয়েছে, চীনে বর্তমানে অন্তত ১২৭ জন সাংবাদিক কারাগারে বন্দি আছেন। এই দেশের সরকার বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ‘নিপীড়নের ভয়ঙ্কর কর্মসূচি’ চালাচ্ছে। চীন অবশ্য সাংবাদিকদের গ্রেপ্তারের স্বপক্ষে দাবি করে যে, এই সব ব্যক্তিরা বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে উসকানি দিয়েছেন।
প্রতিবেদনটি জানাচ্ছে, করোনা পরিস্থিতির সময় এই নিপীড়ন আরও বেড়েছে। করোনা নিয়ে প্রতিবেদন করায় উহানের অন্তত ১০ জন সাংবাদিক ও অনলাইন কমেন্টেটরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন সাবেক আইনজীবী ঝ্যাং ঝান। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে করোনা প্রাদুর্ভাবের সময় উহানের জীবন নিয়ে স্থানীয় এক বাসিন্দার অনলাইন পোস্ট পড়ে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন।
আরএসএফ ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স-২০২১ এ চীনকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৭৭ নম্বরে রেখেছে, যা উত্তর কোরিয়া থেকে মাত্র দু' ধাপ উপরে।
এই প্রতিবেদনে বিশদ ভাবে তুলে ধরা হয়েছে কী ভাবে চীনে সাংবাদিকদের সঙ্গে সরকারি আচরণের অতি অবনতি এবং তথ্যের উপর নিয়ন্ত্রণের ঘটনা ঘটছে। যে পরিস্থিতি এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে, তাতে "স্বাধীন ভাবে তথ্য সংগ্রহ করা একটি অপরাধ এবং সেই তথ্য প্রকাশ করা আরও বড় অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।"
"যে বিষয় নিয়েই হোক না কেন, সরকারি ভাষ্য যারা মানবেনা, তাদের জাতীয় ঐক্য ক্ষুন্নকারী বলে অভিযুক্ত হতে হবে।"
আরএসএফের সেক্রেটারি জেনারেল ক্রিস্টোফার ডেলওয়া্রকে উদ্ধৃত করে 'দ্য গার্ডিয়ান' বলেছে, ২০১৩ সালে শি ক্ষমতায় আসার আগে পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার উন্নতি হচ্ছিল, কিন্তু তিনি এসে এ সবই শেষ করে দিয়ে এমন একটি সংস্কৃতি তৈরি করেছেন, যাতে মনে হচ্ছে মাওয়ের সেই যুগই ফিরে এসেছে।
৪২ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে আরএসএফ এটাও দেখিয়েছে, চীনা কর্তৃপক্ষ কী ভাবে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ স্লোগানকে ব্যবহার করে জিনজিয়াং নিয়ে প্রতিবেদন করা উইঘুর সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করেছে।
চীনের বিরুদ্ধে সংখ্যাগরিষ্ঠ উইঘুর অঞ্চলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়।
কোন কোন কৌশলে সাংবাদিকদের ওপর দেশটি নিপীড়ন চালায় তাও প্রতিবেদনে তালিকা করে দেখানো হয়েছে। যেমন- সাংবাদিকদের আক্রমণ করতে� বিদেশে থাকা কূটনৈতিক মিশনকে ব্যবহার করা, সংবাদমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরা, বিভিন্ন বিষয়ের উপর নজরদারি আরোপ, জোর করে স্থানীয় সাংবাদিকদের কমিউনিস্ট পার্টির আদর্শ পড়ানো, মুঠোফোনে প্রোপাগান্ডা অ্যাপ ডাউনলোড করানো এবং সাংবাদিকদের বহিষ্কার বা ভয় দেখানো।
স্থানীয় এবং বিদেশি সাংবাদিকদের হয়রাণি এবং ভীতিপ্রদর্শন লক্ষ্যনীয় ভাবে বেড়ে গেছে বলে আরএসএফ এবং বেইজিং ফরেন করেসপন্ডেন্টস ক্লাব জানিয়েছে। এই ধরণের ঘটনা এই বছরের গোড়ার দিকে হেনানের বিধ্বংসী বন্যার সময় বিশেষ ভাবে ঘটেছে। জানা গেছে, বন্যার পর সাংবাদিকদের উপর ব্যক্তিগত ভাবে নজরদারি চালানোর জন্য হেনানের প্রাদেশিক সরকার টেন্ডার ডেকেছিল।
আমেরিকার সংবাদমা্ধ্যমের হয়ে চীনে কাজ করা অন্তত ১৮ জন বিদেশি সাংবাদিককে ২০২০ সালে বহিষ্কার করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে বিবিসি-র জন সুডওয়ার্থ এবং অস্ট্রেলিয়ার বিল বার্টলস এবং মাইক স্মিথ রয়েছেন। জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে অস্ট্রেলিয়ার সিজিটিএনের অ্যাংকর চেং লেইয়ের গ্রেপ্তারির ব্যাপারে অনুসন্ধান চালাচ্ছিলেন এঁরা। উহানের লকডাউনে সময় প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য বেশ কিছু নাগরিক সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। 'মি টু' ঘটনাবলী নিয়ে কাজ করার জন্য নিশানা করা হয়েছিল আরও বেশ কিছু সাংবাদিককে।
২০২০ এবং ২০২১ সালের আগে পর্যন্ত হংকংয়ের সংবাদমাধ্যম স্বাধীন ভাবে চীনের মূল ভূখন্ডের খবরদারির বাইরেই কাজ করতে পারছিল। কিন্ত আরএসএফ জানাচ্ছে, সেখানেও আর সেই পরিস্থিতি নেই বরং অতি দ্রুত তার ক্রমাবনতি হচ্ছে।
প্রতিবেদনে অ্যাপল ডেইলির জিমি লাইয়ের মত সংবাদমাধ্যমের মালিকদের গ্রেপ্তার করে জেলে ভরা, সংবাদমাধ্যমের দপ্তরের উপর হানা দেওয়া এবং রিপোর্টারদের সঙ্গে পুলিশের হিংস্র আচরণের কোনও বিহিত না হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বেইজিংয়ের শাসককুল যাতে আর দমন নীতি না নিয়ে চলে এবং তথ্যের অধিকারের প্রত্যাশী চীনের জনগণের পাশে যাতে দাঁড়ানো যায়, তার জন্য� বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলির কাছে আবেদন জানিয়েছে আরএসএফ।