World
উইঘুর মুসলিমদের সঙ্গে চীনের আচরণ গণহত্যার কাছাকাছি : যুক্তরাষ্ট্র
ঢাকা, ২৩ অক্টোবর ২০২০: জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলিমদের সঙ্গে চীন যা করছে, তা গণহত্যার কাছাকাছি বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ও’ ব্রায়েন। সংবাদসংস্থা রয়টার্সের খবর, অ্যাসপেন ইনস্টিটিউট নামে একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গত কয়েক বছর ধরে চীনের উত্তর-পশ্চিমের প্রদেশ জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলিমদের উপর রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের বহু তথ্য প্রকাশ পেয়েছে উঠে এসেছে। লাখ লাখ উইঘুর মুসলিম চীন সরকারের তৈরি বন্দীশালায় বন্দী এবং যাতে দেশে উইঘুর মুসলিমরা সংখ্যায় আর না বাড়তে পারে, তার জন্য তাদের জোর করে বন্ধ্যাকরণ থেকে গর্ভপাত পর্যন্ত করা হচ্ছে বলে অনেক সংবাদমাধ্যমের খবর। চীন অবশ্য সবসময়েই এইসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এর আগে প্রায় দু'ডজন মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল যে চীনের প্রত্যন্ত জিনজিয়াং অঞ্চলে প্রধানত উইঘুর মুসলিমদের উপর গণহত্যা চালানো হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, প্রায় দশ লক্ষ মানুষকে আটকে রাখা হয়েছে চীনের বিভিন্ন শিবিরে। একটি খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করে ওই সংগঠনগুলি ইউনাইটেড নেশনস হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের কাছে এ বিষয়ে একটি তদন্ত করার আবেদন করেছিল। স্বাক্ষরকারী প্রতিনিধিদের মধ্যে আছেন আমেরিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা, যাঁদের বক্তব্য, জিনজিয়াংয়ে যে মানবাধিকার বিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার ঘটনা ঘটছে, তার প্রভূত প্রমাণ আছে।
ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক উগ্রপন্থাকে দমন করার নামে চীন সরকার ধর্ম এবং জাতি পরিচয়ের ভিত্তিতে উইঘুর এবং অন্যান্য তুর্কিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক এবং পরিকল্পিত ব্যবস্থা নিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে ওই চিঠিতে। "যে ধরণের অত্যাচার সেখানে চলছে, তার মধ্যে দশ থেকে আঠেরো লক্ষ মানুষকে শিবিরে ইচ্ছেমত আটক রাখা, ব্যাপক মগজধোলাই অভিযান চালানো, মানুষকে গায়েব করে দেওয়া, সাংস্কৃতিক জায়গাগুলিকে ধ্বংস করা, জেলে বন্দী করে রাখা এবং জোর করে বন্ধ্যাকরণ- এ সবই আছে বলে অভিযোগ।
বলা হচ্ছে, জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর বুদ্ধিজীবীরা প্রায়শই রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হচ্ছেন এবং তাঁদের বিনা বিচারে জেলে ভরা হচ্ছে। উদাহরণ, চলচ্চিত্র পরিচালক হারসান হাসান বা অধ্যাপক তাসপোলাত তাইপ। প্রথম জনের ২০ মাসেরও বেশি জেল খাটার পর ৫ সেপ্টেম্বর ১৫ বছর কারাদণ্ড ঘোষিত হলো। আর দ্বিতীয় জন ২০১৭ সাল থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ। বিচ্ছিন্নতাবাদী তকমা সেঁটে দিয়ে এদের বিরুদ্ধে বিচারের প্রহসন চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ।
সংগঠনগুলি বলেছে, জেনোসাইড কনভেনশন অনুযায়ী যা যা ঘটলে একটা দেশে গণহত্যা চলছে বলে বলা যেতে পারে, সেগুলির প্রায় সবকিছুই ঘটছে জিনজিয়াংয়ে। হাজার হাজার মানুষকে মগজ ধোলাইয়ের নামে ভরা হয়েছে তথাকথিত প্রশিক্ষণ শিবিরে। সেখানে নারীদের গায়ের জোরে বন্ধ্যাত্বকরণ চলছে। পুরুষদের দিয়ে বেগার খাটানো হচ্ছে এবং কেড়ে নেওয়া হচ্ছে ইসলাম ধর্ম পালনের সমস্ত অধিকার।
উইঘুরদের মতে, মানুষকে বন্দুকের নলের সামনে বাধ্য করা হচ্ছে চীনের স্তুতি করতে। 'গণহত্যা' শব্দটি না বললেও রাষ্ট্রসংঘও উইঘুরদের সঙ্গে চীনের এই আচরণের নিন্দা করে বাড়াবাড়িতে অংশ নেওয়া কিছু চীনা আধিকারিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে।
সম্প্রতি আমেরিকার কাস্টমস থেকে আটক করা জিনজিয়াং থেকে আসা মানুষের চুল দিয়ে তৈরি বিপুল পরিমাণের কেশজাত সামগ্রীর চালানের কথা উল্লেখ করে ওব্রায়েন অভিযোগ করেছেন, জোর করে উইঘুর মহিলাদের মাথা কামিয়ে ওই সব চুল আমেরিকায় পাঠিয়েছে চীন।
গত জুন মাসে আমেরিকার সেক্রেটারি অফ স্টেট মাইক পম্পিও বলেছিলেন, জিনজিয়াংয়ে মুসলমানদের সঙ্গে জবরদস্তি বন্ধ্যাকরণ এবং গর্ভপাতের ঘটনা ঘটছে বলে যে খবর আসছে, তা তীব্রভাবে পীড়াদায়ক। তিনি জানিয়েছিলেন, চীনের ওই অঞ্চলে যা ঘটছে, তা কী ভাবে বলা যায়, সে সম্পর্কে আমেরিকা চিন্তা-ভাবনা করছে। "যখন আমেরিকা মানবতাবিরোধী অপরাধ অথবা গণহত্যা নিয়ে কিছু বলে, তখন তা বিশাল গুরুত্ব থাকে। সেই কারণে ভাষা ব্যবহারে আমাদের সতর্ক থাকতে হয়," তিনি বলেছেন।
এর অর্থ পরিষ্কার- 'গণহত্যা' শব্দটিই বলতে চাইছে আমেরিকা, কিন্তু নানা কূটনৈতিক বাধ্যবাধকতায় এখনই তা পারছেনা। তথাকথিত কম্যুনিজমের আড়াল থেকে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে চীনের দানবীয় আচরণ নতুন নয়- তিব্বতই তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। কিন্তু উইঘুর মুসলিমদের সঙ্গে যা ঘটে চলছে প্রতিনিয়ত, তা বোধহয় এক নতুন ইতিহাস রচনা করতে চলেছে। এখন দেখার, কী ব্যবস্থা নেয় বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলি।