World
উইঘুর দাসশ্রমিকদের তৈরি কাপড় বিশ্ববাজারে সরবরাহ করছে চীন
ঢাকা, ১১ ডিসেম্বর ২০২০: সংখ্যালঘু উইঘুর সম্প্রদায়ের লোকজনকে জোর করে শ্রম শিবিরে আটকে রাখছে চীন সরকার। শ্রমদাস হিসেবে ব্যবহার করা এই মুসলমান উইঘুর শ্রমিকদের উৎপাদিত পণ্যগুলি, বিশেষ করে সুতির কাপড় সরবরাহ করা হচ্ছে বিশ্বের বাজারে।
শত শত বছর ধরে তুর্কি মুসলিম সংখ্যাগুরু হিসেবে ওই অঞ্চলে পরিচিত উইঘুরদের ভাষাও নিজস্ব। আগে ওই এলাকাকে চীনের পশ্চিমাঞ্চল কিংবা উইঘুর সংখ্যালঘু এলাকা বলা হলেও চীন সরকার এর নাম দিয়েছে জিনজিয়াং।
উইঘুরদের সন্তান জন্ম দেওয়ার হার, তাদের ধর্মপালন এবং ভাষা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে চীন সরকার।
প্রতি বছর ১০ লাখের বেশি উইঘুরকে ধরে নিয়ে গিয়ে জোর করে কাজ করতেও বাধ্য করা হচ্ছে বলে প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিশ্বের বহু মানবাধিকার সংগঠন এবং সংস্থা।
চীন বিশ্বের অন্যতম সর্ববৃহৎ তুলো উৎপাদনকারী দেশ।
সারা বিশ্বে উৎপাদিত তুলোর ২২ শতাংশই আসে চীন থেকে, যার বেশিটাই চাষ হয় জিনজিয়াং প্রদেশে।
বলা হচ্ছে, জিনজিয়াংয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ তুর্কিভাষী উইঘুরদের জোর করে কাপড় বানানোর কাজে লাগানো হচ্ছে। আর এই নির্যাতিত উইঘুরদের হাতের তৈরি বস্ত্র বিক্রি হওয়ার জন্য প্রত্যক্ষ অথবা অপ্রত্যক্ষভাবে চলে যাচ্ছে বিভিন্ন বিখ্যাত বহুজাতিক পোষাক কোম্পানির কাছে।
ওয়াল স্ট্রীট জার্নালের করা একটি তদন্তমূলক প্রতিবেদনে এরকম বেশ কয়েকটি বিখ্যাত নামের উল্লেখ আছে, যেমন এইচ অ্যান্ড এম, এস্প্রিট, অ্যাডিডাস, ইত্যাদি। এ ছাড়াও আছে গ্যাপ, সি অ্যান্ড এ, মুজি, টমি হিলফিগার এবং কেলভিন ক্লেইনের মত ব্র্যান্ডগুলি।
"বস্ত্রশিল্পের ক্ষেত্রে যদি চীনের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকে, তাহলে উৎপীড়ন করে আদায় করা শ্রমের বিনিময়ে পাওয়া জিনিষ আপনাকে সরবরাহ করা হচ্ছেনা, সে বিষয়ে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেননা," বলেছেন অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউটের গবেষক ন্যাথান রুজার।
কী হচ্ছে জিনজিয়াংয়ে?
রাষ্ট্রসঙ্ঘের বিশেষজ্ঞ এবং মানবাধিকার কর্মীদের বক্তব্য, দশ লক্ষেরও বেশি উইঘুর এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতির মানুষদের বিশাল বিশাল শ্রমশিবিরে আটকে রেখেছে চীন সরকার। এইসব মানুষ, যাদের মাতৃভাষা অন্য কিছু, তাদের জোর করে শেখানো হচ্ছে ম্যান্ডারিন চাইনিজ এবং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রতি আনুগত্যের শপথ নেওয়ানো হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এইসব মানুষদের বাধ্য করা হচ্ছে তাদের নিজেদের ধর্মবিশ্বাস ত্যাগ করতে।
চীন অবশ্য দাবি করছে যে, এইসব মানুষদের বৃত্তিমূলক শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, যার ফলে তাঁরা কাজ পাচ্ছেন এবং যুক্ত হচ্ছেন বৃহত্তর চীনা সমাজের সঙ্গে।
ওয়াশিংটনের উইঘুর হিউম্যান রাইটস প্রোজেক্টের চেয়ারম্যান নুরি টার্কেল বলেছেন, জোর করে শ্রম আদায়ের জন্য জিনজিয়াংয়ের উইঘুরদের আটকে রেখে উৎপীড়ন করা হচ্ছে, তাই যে সব বস্ত্র ওই অঞ্চলে উৎপাদিত হচ্ছে, তা যে জোর করে আদায় করা শ্রমের বিনিময়ে, এই সম্ভাবনা অতি প্রবল।
উইঘুরদের উপর নির্যাতন, তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া, উইঘুর মহিলাদের জোর করে বন্ধ্যাকরণ- চীনের জিনজিয়াংয়ে এ ধরণের মানবতাবিরোধী কাজকর্মের বিরুদ্ধে সারা বিশ্ব জুড়ে ধিক্কার বেড়েই চলেছে।
সারা পৃথিবীর ১৮০টি মানবাধিকার সংস্থা মিলে জিনজিয়াংয়ে উইঘুরদের দিয়ে জোর করে উৎপাদিত বস্ত্রপণ্য এবং অন্যান্য সূতি সামগ্রীর ব্যবহার আগামী এক বছরের মধ্য বন্ধ করে দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছে বহুজাতিক বস্ত্রবিপনণ সংস্থাগুলির কাছে।