World
পাক মানচিত্র থেকে গিলগিট-বালতিস্তান ও কাশ্মীরকে বাদ দিল সৌদি
ঢাকা, ২৮ নভেম্বর ২০২০: সম্প্রতি পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর এবং গিলগিট-বালতিস্তানকে পাকিস্তানের মানচিত্র থেকে সরিয়ে দিয়েছে সৌদি আরব। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের অ্যাক্টিভিস্ট আমজাদ আইয়ুব মির্জাকে উদ্ধৃত করে এ খবর জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম।
আমজাদ আইয়ুব এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, পাকিস্তানের মানচিত্র থেকে পাক অধিকৃত জম্ম-কাশ্মীর এবং গিলগিট-বালতিস্তানকে সরিয়ে দিয়েছে সৌদি আরব।
একটি ছবি টুইট করে তিনি ক্যাপশনে লিখেছেন, ভারতকে দীপাবলিতে সৌদি আরবের উপহার- পাকিস্তানের মানচিত্র থেকে গিলগিট-বালতিস্তান ও কাশ্মীর সরিয়ে দেওয়া।
জানা গেছে, ২১-২২ নভেম্বরের জি-২০ সম্মেলন উপলক্ষে বিশ্বের মানচিত্র-সহ ২০ রিয়ালের স্মারক নোট প্রকাশ করেছে সৌদি। সেই মানচিত্রে গিলগিট-বালতিস্তান ও কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অংশ হিসেবে দেখানো হয়নি।
এর আগে ইমরান খানের সরকার পাকিস্তানের রাজনৈতিক মানচিত্র প্রকাশ করে, যেখানে ভারতের বিভিনন্ন স্থানকে দেখানো হয়।
গত কয়েক বছর ধরে ভারতের সঙ্গে সৌদি আরবের সখ্যতা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। সৌদি আরব এখন ভারতের চতুর্থ বৃহত বাণিজ্য সঙ্গী। অপরিশোধিত তেল ছাড়াও এই দুই দেশ প্রতিরক্ষা এবং সুরক্ষা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা করে চলেছে। এর ফলে সৌদি আরবের 'ভিশন ২০৩০'-এ গুরুত্বপূর্ন সঙ্গী হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে ভারত।
অন্যদিকে কাশ্মীর নিয়ে আলোচনার জন্য রিয়াধে অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কোঅপারেশনের (সিআইসি) সদস্য দেশগুলির বিদেশমন্ত্রীদের একটি বৈঠক ডাকার জন্য পাকিস্তান যে অনুরোধ করেছিল, সৌদি আরব তা প্রত্যাখ্যান করায় দু' দেশের মধ্যে সম্পর্কের খুবই অবনতি ঘটে। এ নিয়ে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশির বিরূপ মন্তব্যের পর সৌদি আরব পাকিস্তানে তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেয় এবং বাতিল করে দেয় সে দেশের সঙ্গে একটি অর্থনৈতিক ঋণ-চুক্তি। এই ঘটনা ছাড়াও সৌদি আরবের সঙ্গে ভাল সম্পর্কে না থাকা তুরস্কের বেশি কাছাকাছি চলে যাওয়াতে পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হচ্ছিল সৌদির।
কিন্তু পাক-অধিকৃত কাশ্মীর এবং গিলগিট-বালতিস্তানকে পাকিস্তানের মানচিত্রে না দেখানো এক বড় ধাক্কা পাকিস্তানের পক্ষে, কারণ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে, বিশেষত মুসলিম দুনিয়ায় এ ঘটনা তাদের পক্ষে লজ্জাজনক। যেখানে ভারত এবং আমেরিকা যথেষ্ট কাছাকাছি চলে এসেছে, তখন সৌদি সেই পাকিস্তান-বিরুদ্ধ স্রোতে যোগ দিয়ে ফেলায় ব্যাপারটি অন্যরকম মাত্রা পেয়ে গেল।
১৯৪৭ সালে প্রথম ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় পাকিস্তান জম্মু-কাশ্মীরের উত্তরাঞ্চল সহ ৭৮,১১৪ কিমি এলাকা অধিকার করে। এই উত্তরাঞ্চল আসলে গিলগিট-বালতিস্তান, যা ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তা সত্ত্বেও ১ল নভেম্বর তারিখে প্রায় কুড়ি লক্ষ মানুষের এই অঞ্চলটিকে পাকিস্তানের পঞ্চম প্রদেশ হিসেবে ঘোষণা করলেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এ ছাড়াও গত ১৫ই নভেম্বর গিলগিট-বালতিস্তানে পাকিস্তান সরকার নির্বাচন করিয়েছে ভারতের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও।
ভারতের বক্তব্য, ঐ অধিকৃত অঞ্চলে নির্বাচন করার কোনও অধিকারই পাকিস্তান সরকারের নেই। প্রথম থেকেই গিলগিট-বালতিস্তানের রাজনৈতিক চরিত্র দিশাহীন থেকেছে । ১৯৪৯ সালের ২৮শে এপ্রিলে অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীর থেকে অঞ্চলটিকে পৃথক করার পর প্রথমে পাকিস্তান এখানে সরাসরি কেন্দ্রীয় শাসন চালিয়েছে। এরপর স্থানীয় ২০ লক্ষ মানুষের তীব্র প্রতিবাদ সত্ত্বেও এই অঞ্চলটি থেকে ৫,১৮০ বর্গমাইল এলাকা ১৯৬৩ সালের ২রা মার্চ চীনের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টোর আমলে এই অঞ্চলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ফেডারেলি অ্যাডমিনিস্টার্ড নর্দার্ন এরিয়াজ(এফএএনএ)। ২০০৯ সালে গিলগিট-বালতিস্তান এমপাওরমেন্ট অ্যান্ড সেলফ গভর্নেন্স অর্ডার জারি করে পাকিস্তান এই 'উত্তরাঞ্চলে' স্বশাসনের অধিকার দেয়। তবে স্থানীয়দের দাবি ছিল একটি আন্তর্জাতিক ঐকমত্য অনুসারে সেখানে একটি কার্যনির্বাহী সরকার গঠন করা। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের পর থেকে এই অঞ্চলে পরিস্থিতির ব্যাপক পরিবর্তন হয় পরিকাঠামো এবং জলবিদ্যুত প্রকল্পের জন্য পাকিস্তান চীনের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করায়। এই চুক্তি অনুযায়ী এই অঞ্চলে চীনকে অর্থ লগ্নি করা এবং ভারি শিল্পযন্ত্র আনার অনুমতি দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে প্রতিবাদ ওঠে স্থানীয় মানুষদের কাছ থেকে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গিলগিটে এক ভাষনে জানিয়েছিলেন যে তাঁর সরকার গিলগিট-বালতিস্তানকে প্রদেশের মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতের থেকে অবৈধ ভাবে এবং গায়ের জোরে নিয়ে নেওয়া এই অঞ্চলে এ হেন কাজের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের এ ধরণের পদক্ষেপ যে আসলে তাদের অবৈধ কর্মকে আড়াল করার প্রচেষ্টা এবং তা যে গিলগিটি-বালতিস্তানে সাত দশক ধরে চলা মানবাধিকার হরণ, শোষন এবং স্থানীয় মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার কাহিনীকে ঢেকে দিতে পারেনা, সে কথা জানিয়ে এই পাকিস্তানকে এই অঞ্চল থেকে তার দখলদারি সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে এই বিবৃতিতে।