World
চীনের পুনর্শিক্ষা শিবিরে ধর্ষণ, যৌন নির্যাতনের শিকার উইঘুর নারীরাঃ প্রতিবেদন
লন্ডন, ফেব্রুয়ারি ২২: বিবিসির একটি সাম্প্রতিক অন্তর্তদন্তমূলক প্রতিবেদনে প্রকাশ, চীনে উইঘুরদের জন্য 'শিক্ষাশিবির'গুলিতে নারীদের পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণ, যৌন অত্যাচার এবং নির্যাতন করা হচ্ছে।
নির্যাতনকারী পুরুষরা মুখোশ পরে থাকে বলে জানিয়েছেন অত্যাচারিত মহিলাদের একজন, তুরুসানে জিয়াউদুন। প্রসঙ্গত, ওই জায়গায় এখন কোনও অতিমারি নেই। এই পুরুষদের পরণে থাকে এক ধরণের স্যুট, যা পুলিশের উর্দি নয়, বলেছেন ঐ মহিলা।
নিউজ চ্যানেলকে জিয়াউদুন বলেছেন, ঐ লোকগুলি তাঁকেও নিয়ে গিয়েছিল।
"এটাই বোধহয় আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ক্ষত হয়ে থাকবে, যা কোনওদিন ভুলতে পারবনা," তিনি বলেছেন।
চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলে গোপন কারাগারে ন' মাস কাটাতে হয়েছে তাঁকে।
নিরপেক্ষ হিসেব অনুযায়ী, বিস্তীর্ন জায়গা জুড়ে থাকা ঐ সব শিবিরগুলিতে দশ লক্ষেরও বেশি নারী-পুরুষ আটক আছেন। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে চীনের দাবি, এই শিবিরগুলি উইঘুর এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের 'পুনর্শিক্ষা' কেন্দ্র।
তুরুসুনে জিয়াউদুন, শিবির থেকে ছাড়া পাওয়ার পর যিনি জিনজিয়াং থেকে পালিয়ে গিয়ে এখন আমেরিকায় আছেন, বিবিসিকে জানিয়েছেন, 'প্রতি রাতে' মেয়েদের সেল থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে এক বা একাধিক মুখোশধারী চীনা পুরুষ ধর্ষণ করত।
সাংবাদিকদের উপর চীনে অত্যন্ত কড়া নিয়মবিধি থাকার জন্য জিয়াউদুন যা বলেছেন, তা যাচাই করা অসম্ভব, কিন্তু চীন ছেড়ে অন্যত্র ভ্রমণের এবং অভিবাসনের যে সব নথি তিনি বিবিসির কাছে দিয়েছেন, সেগুলি তাঁর বলা কাহিনীর সময়ের সঙ্গে মিলে যায়।
শিনউয়ান কাউন্টি, উইঘুরদের কাছে যা কুনেজ কাউন্টি নামে পরিচিত, সেখানকার যে শিবিরে তিনি ছিলেন, তার বর্ননা বিবিসির মিলিয়ে দেখা স্যাটেলাইট ছবির সঙ্গে মিলে গেছে। শিবিরের দৈনন্দিন জীবন এবং সেই সাথে নির্যাতনের প্রকৃতি এবং পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি যা বলেছেন, তা-ও অন্যান্য প্রাক্তন শিবিরবাসীর বর্ননার মতই।
কুনেজ কাউন্টির বিচার ব্যবস্থার ২০১৭-১৮ সালের যে সব নথি জিনজিয়াং-এ চীনের অনুসৃত নীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আদ্রিয়ান জেঞ্জ বিবিসির হাতে তুলে দিয়েছেন, তাতে 'মুখ্য গোষ্ঠীগুলির' মানুষদের 'শিক্ষার মাধ্যমে রূপান্তর' ঘটানোর কথা বলা আছে। চীনে অবশ্য এই শব্দবন্ধগুলি উইঘুরদের বিশেষ আদর্শে উদ্বুদ্ধ করার অর্থেই ব্যবহার করা হয়। এই ধরণের একটি নথিতে এই শিক্ষাকে বর্ননা করা হয়েছে 'মগজ ধোলাই', 'হৃদয় সাফাই' এবং 'শয়তানকে তাড়ানো' ইত্যাদি শব্দের মাধ্যমে।
এই ধরণের একটি বন্দি শিবিরে ১৮ মাস আটক করে রাখা এক কাজাক মহিলা বিবিসিকে বলেছেন যে, তাঁকে দিয়ে জোর করে উইঘুর নারীদের বিবস্ত্র করে হাতকড়া পরানো হত। এরপর তাদের ছেড়ে দেওয়া হত চীনা মানুষগুলির সঙ্গে।
"আমার কাজ ছিল ওদের কোমরের উপরের অংশের পোষাক খুলে নেওয়া এবং হাতকড়া পরানো, যাতে ওরা বেশি নড়াচড়া না করতে পারে," গুলজিরা আউয়েলখান বলেছেন।
"এরপর আমি ঐ মেয়েদের ঘরে রেখে চলে গেলে একজন পুরুষ ঢুকতো-এদের কেউ বাইরের থেকে আসা চীনা অথবা পুলিশের লোক। আমি চুপ করে দরজার পাশে বসে থাকতাম। লোকটি ঘর ছেড়ে চলে যাবার পর মেয়েটিকে স্নান করাতে নিয়ে যেতাম আমি," তিনি বলেছেন।
শিবিরে আটক নারীদের মধ্যে "সুন্দরীদের পাওয়ার জন্য চীনা পুরুষরা টাকা দিত" বলে তিনি জানিয়েছেন।
বিবিসির এই প্রতিবেদন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাজনীতিকরা ইন্টার-পার্লামেন্টারি অ্যালায়েন্স অন চায়না'তে মিলিত হয়ে জিনজিয়াং-এ মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার ব্যাপারে রাষ্ট্রসংঘের নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেছেন বলে জানিয়েছে বিটার উইন্টার।
ইউকের প্রতিবেদনঃ
গ্রেট ব্রিটেনের একজন মন্ত্রী, নাইজেল অ্যাডামস বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে বলেছেন এই প্রতিবেদন থেকে পরিষ্কারভাবে শয়তানি কাজকর্মের কথা বোঝা যাচ্ছে,।
নিখোঁজ উইঘুর চিকিৎসক গুলশান আব্বাসের কন্যা জিবা মুরাত টুইট করে বলেছেন, "বন্দি হওয়া একজন নিরপরাধ উইঘুর মহিলার মেয়ে হিসেবে আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই, কেউ কি আছেন যিনি এখনও মনে করেন চীনের কাছে নত হয়ে এবং উইঘুরদের দিক থেকে পিঠ ফিরিয়ে থাকাটাই ঠিক কাজ? তা হলে তা এইসব অপরাধেরই সমান।"
সিএফইউ-র অন্যান্য সদস্যরাও সরব হয়েছেন।
"আমি মাত্র অর্ধকটাই পড়েছি। এত ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম যে মাঝপথেই থেমে গিয়েছিলাম," সিএফইউর আউটরিচ ডিরেক্টর আকিদা পুতাল বলেছেন। তাঁর মা, নামী উইঘুর পন্ডিত, রাহিলে দাইয়ুত, ২০১৭ সালে থেকে নিখোঁজ।
প্রোগ্রাম ডিরেক্ট্র বাবুর ইলচি বলেছেন, "সকালে পড়লাম এটা। তারপর থেকে সুস্থ বোধ করছিনা।"