World
তুরস্কে চীনা দূতাবাসের সামনে উইঘুরদের বিক্ষোভ
আঙ্কারা, ফেব্রুয়ারি ২২: তুরস্কে বসবাসকারী উইঘুররা সম্প্রতি ইস্তাম্বুলে চীনা কনসুলেটের কাছে এক প্রতিবাদ সভায় জড়ো হয়ে জিনজিয়াঙের শিবিরে আটক তাঁদের আত্মীয়স্বজনরা কী অবস্থায় আছেন, তা জানানোর দাবি করেছেন চীন সরকারের কাছে।
শিশু, বৃদ্ধ, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী-সহ প্রতিবাদকারী মানুষদের হাতে ধরা ছিল নিখোঁজ হয়ে যাওয়া স্বজনদের ছবি।
"চীন, বন্ধ কর গণহত্যা"- শ্লোগান উঠেছিল পুলিশের ব্যারিকেডের ওপারে জনতার মধ্য থেকে। ব্যানারে লেখা ছিল, "চীন সরকার, আমার পরিবারের নির্দোষ সদস্যদের মুক্তি দাও", "চীন, কোথায় আমার ছেলে", "কোথায় আমার ভাইয়েরা"।
"জিনজিয়াং এবং অন্যান্য অঞ্চলে আটক আমাদের স্বজনদের এই মুহূর্তে মুক্তির দাবি করছি আমরা," উইঘুর শিক্ষাবিদ বুরহান উলুইয়ুল বলেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, উইঘুরদের ব্যাপারে চীন পৃথিবীর সামনে মিথ্যা বলছে।
তুরস্কের সঙ্গে চীনের ২০১৭ সালের প্রত্যর্পণ চুক্তির ফলে তাঁদের জোর করে চীনে ফিরিয়ে দেওয়া হতে পারে, এই আশংকায় তুরস্কে থাকা উইঘুররা গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রতিবাদ সভা শুরু করেন।
চীনের মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে নীতি নিয়ে চলছে সে দেশের সরকার, সে বিষয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে সারা বিশ্বে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে চীনে এই মুহুর্তে নির্যাতনের শিকার দশ লক্ষের বেশি তুর্কি মুসলিম। চীন অবশ্য এই অভিযোগকে 'মিথ্যা এবং অপবাদমূলক' বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
তুরস্কে বর্তমানে পঞ্চাশ হাজারের বেশি তুর্কিভাষী উইঘুর মুসলিম আছেন। এঁদের অনেকেই চীনে উইঘুরদের উপর ধরপাকড় শুরু হবার পর পালিয়ে তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু চীনে পড়ে রয়েছেন তাঁদের অনেক আত্মীয়স্বজন।
বুজুরা পালতাহাসি জানিয়েছেন যে ২০১৭ সালে থেকে তাঁর স্বামী আলদুলকাদিরের কোনও খবর তিনি জানেননা। আলদুলকাদিরকে জিনজিয়াং বিমানবন্দরে আটক করেছিল চীনের সীমান্ত পুলিশ। "সেই থেকে ওর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করতে পারিনি। আমার স্বামীর প্রাণের আশংকা করছি আমি," তিনি বলেন।
আটক হওয়া স্বজনদের কোনও খবর না পাওয়ার একই অভিযোগ করেছেন আরও অনেক উইঘুর।
এই জমায়েতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখপাত্র হিসেবে সালিহ এমিন মানবতাবিরোধী এই অপরাধের বিরুদ্ধে সরব হওয়া এবং কিছু করার জন্য আবেদন জানান সারা পৃথিবীর মানুষকে।
"মানবাধিকার সংস্থা চীনের পরিস্থিতি নিয়ে তদন্ত করুক, তা চীন সরকার চাইছেনা, কারণ তারা ভয় পাচ্ছে। ওখানকার গণহত্যার বিষয়টি সত্যি এবং সারা বিশ্ব যে তা জানুক, তা চীন চায়না," এমিন বলেছেন।
চীনে নিখোঁজ অথবা আটক হয়ে থাকা আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে যাতে যোগাযোগ করা যায়, তার জন্য চীনের সঙ্গে কথা বলতে তুরস্কের বিদেশমন্ত্রককে অনুরোধ করেছেন এমিন। এ ব্যাপারে সমর্থন জানানোর জন্য তুরস্কের জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
চীন সম্ভবত সে দেশের শিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুর মুসলিম এবং সংখ্যালঘুদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে- এক প্রতিবেদনে এ কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসনাল এক্সিকিউটিভ কমিশন কমিটি (সিইসিসি)।
উইঘুর-সহ তুর্কিভাষী মুসলমানদের বৃত্তিমূলক শিক্ষার নামে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে এবং বন্দিশিবিরে তাদের ওপর নির্মম অত্যাচার চালাচ্ছে চীনা প্রশাসন। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ১০ লাখের বেশি উইঘুর মুসলিমকে বন্দিশিবিরে আটকে রেখেছে চীন। অবশ্য চীনের তরফ থেকে এসব অভিযোগকে মিথ্যা বলা হয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-সহ পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা চীনের লক্ষ লক্ষ সংখ্যালঘু মানুষ, যাদের বেশির ভাগই মুসলিম, তাদের শিবিরে বন্দি করে রাখার কঠোর সমালোচনা করা করেছে।
সংবাদমাধ্যম দি ইকনমিস্ট জানিয়েছে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর মতবাদ বিশ্বাস করতে বাধ্য করা হচ্ছে উইঘুর মুসলিমদের।
ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উইঘুরদের ওপর চীনের এই নির্যাতন বন্ধের জন্য যুক্তরাজ্যের মতো গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি এই ডিটেনশন ক্যাম্পগুলোকে সোভিয়েত শ্রমশিবির ‘গুলাগ’-এর মতো আখ্যা দিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও প্রতিবেদনে উইঘুরদের ডিটেনশন ক্যাম্পের নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা করা হয়েছে দি ইকোনমিস্টে।
ইকোনমিস্টকে একজন উইঘুর বন্দি বলেন, ডিটেনশন ক্যাম্পের থাকা বন্দিদের শিন জিনপিং-এর মতবাদের বিশ্বাস করতে বাধ্য করান হচ্ছে।
১৯৪০এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নে জোসেফ স্টালিনের শাসনের সময় লক্ষ লক্ষ লোককে বন্দী করে পাঠানো হয়েছিল শ্রম শিবিরে।
সেখানে তাদেরকে মানবেতর পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য করা হতো। এগুলোকে বলা হতো গুলাগ। এখানে মৃত্যু হয়েছিল দশ লাখেরও বেশি বন্দীর - যার কারণ ছিল অনাহার, রোগ এবং অতিরিক্ত পরিশ্রমজনিত ক্লান্তি।