Bangladesh
Hindu community observe Bijoya Dasami
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা, ২৬ অক্টোবর ২০২০: ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় ‘আনন্দময়ীর’ নিদ্রাভঙ্গের বন্দনায় যে উৎসবের সূচনা হয়েছিল, দশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনে তার সাঙ্গ হল সোমবার। ‘বাবার বাড়ি বেড়ানো’ শেষে দেবী দুর্গা এক বছরের জন্য ফিরে গেলেন ‘কৈলাসের শ্বশুরালয়ে’; সমাপ্তি হল বাঙালি হিন্দুর সবচেয়ে বড় পার্বণ শারদীয় দুর্গোৎসবের।
কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেলা দেড়টায় বুড়িগঙ্গার ওয়াইজঘাটের বীণাস্মৃতি স্নানঘাটে বনানী জাকের পার্টির হিন্দু ফ্রণ্ট পূজামণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে রাজধানীতে দেবীকে বিদায় জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এ বছর যে শোভাযাত্রা হবে না, তা আগেই জানানো হয়েছিল। এ বছর ঢাকা মহানগরে দুইশর বেশি মণ্ডপে পূজা হয়েছে। সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে, যার যার মত করে এসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিমা বিসর্জন দেবে।
কোতোয়ালি থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিমা বিসর্জন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুলিশের পাশাপাশি নৌ-পুলিশ ও র্যাব সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করেন।
ঢাকা নদীবন্দরে বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম-পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দিন বলেন, প্রতিমা বিসর্জন যাতে সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়, বিআইডব্লিউটি থেকে সেভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।। বিআইডব্লিটিএ-এর ডুবুরি দল ছাড়াও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলকে বুড়িগঙ্গার তীরে রাখা হয়েছে জরুরি প্রয়োজনে মাঠে নামার জন্য।
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, দেবীপক্ষের শুরু হয় যে অমাবস্যায়, সেদিন হয় মহালয়া; আর মহালয়ার প্রাক সন্ধ্যায় ‘কাত্যায়নী মুনির কন্যা’ রূপে মহিষাসুর বধের জন্য দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে।
কিন্তু পঞ্জিকার হিসাবে এবার আশ্বিন মাস ‘মল মাস’, মানে অশুভ মাস। সে কারণে ১৭ সেপ্টেম্বর মহালয়া হলেও দেবীর পূজা এবার হয়েছে কার্তিক মাসে।
নবরাত্রির ষষ্ঠ দিনে বৃহস্পতিবার বিকালে দুর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় এবার।
এরপর সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী পেরিয়ে সোমবার সকালে বিজয়া দশমীর ‘বিহিত পূজায়’ ষোড়শপ্রচার পূজার পাশাপাশি দেবী প্রতিমার হাতে জরা, পান, শাপলা ডালা দিয়ে আরাধনা করা হয়।
সবশেষে দর্পণ বিসর্জনের সময় প্রতিমার সামনে একটি আয়না রেখে তাতে দেবীকে দেখে তার কাছ থেকে সাময়িক সময়ের জন্য বিদায় নেন ভক্তরা।
মহামারীর মধ্যে কড়াকাড়ি থাকলেও অন্যবছরের মত এবারও প্রতিমা বিসর্জনের আগে কোনো কোনো মণ্ডপে আবির খেলায় মেতে উঠেন ভক্তরা।
ঢাকায় ওয়াইজঘাট ছাড়াও বসিলায় তুরাগে এবং সবুজবাগ এলাকার প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
দুপুরের পরপরই বিভিন্ন এলাকার মণ্ডপ থেকে ট্রাকে করে প্রতিমা নিয়ে ঘাটের পথে রওনা হন ভক্তরা। শঙ্খ আর উলুধ্বনির সঙ্গে চলে খোল-করতাল-ঢাক-ঢোলের সনাতনি বাদ্য।
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, এক বছর পর নতুন শরতে আবার দেবী আসবেন ‘পিতৃগৃহ’ এই ধরণীতে।