Column

‘Biranganas’ of Bangladesh

‘Biranganas’ of Bangladesh

Bangladesh Live News | @banglalivenews | 23 Aug 2019, 07:47 am
বাংলাদেশ সরকারের লিবারেশন ওয়ার মন্ত্রক গত ৪ঠা অগাস্ট একটি গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে আরও ৪৬ জন 'বীরাঙ্গনা'কে স্বাধীনতা সংগ্রামীর মর্যাদা দান করেছে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁদের উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য। দ্য ন্যাশনাল ফ্রিডম ফাইটার কাউন্সিল ঢাকায় টাদের ৬২তম বৈঠকে স্বাধীনতাসংগ্রামীর মর্যাদা দিয়ে বীরাঙ্গনাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৩২২ করেন।

  ২০১৪ সালের ১৩ই অক্টোবর সরকার থেকে এই সব বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। একাত্তরের সংগ্রামের সময় যে সব নারী দুর্ভাগ্যজনকভাবে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন, তাঁদেরই স্বাধীনতাসংগ্রামীদের সমান সম্মান দিয়ে তাঁদের এবং তাঁদের সন্তানদের কিছু বিশেষ সুযোগ-সুবিধার অধিকারী করা হয়েছে। 

 

মুক্তিযুদ্ধের সময়  কতজন বাঙালি নারী দখলদারি পাক সেনা এবং তাদের স্থানীয় সহযোগীদের যৌন অত্যাচারের শিকার হয়েছিলেন, তা সঠিক ভাবে এখনও জানা যায়নি।  তবে সংগ্রামের ন'মাস সময়কালে   অন্তত ১.৬২ লক্ষ নারী ধর্ষিতা হয়েছিলেন এবং ১.৩১ লক্ষ হিন্দু রমণী নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে ডঃ এম হাসানের  নেতৃত্বাধীন ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস অ্যান্ড ফাইন্ডিং কমিটি। এই সব হতভাগ্য নারীদের অনেকেই মৃত।  এঁদের সকলকে চিহ্নিত করে একটি চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা এক বিষম কঠিন কাজ এবং তা রাতারাতি করাও সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, এই কাজ পর্যায়ক্রমে করা হবে। তিনি বলেছেন,  একটা শুরু করা গেছে, যা শেষ হতে বেশ কয়েক বছর লাগবে।

 

যুদ্ধের সময় নির্যাতিত এই মহিলাদের নিচু চোখে দেখা হত এবং  সমাজ থেকে কোনও সম্মান  তাঁরা পাননি।  এমন কি  অনেকের পরিবারও  সতীত্বহানিকে চরম লজ্জাকর মনে করে তাঁদের চরিত্রহীন আখ্যা দিয়ে তাঁদের সাথে অবিচার করেছে।

 

সংগ্রামের শেষে ধর্ষণের শিকার এই সব মহিলাদের দ্বিতীয় বার যাতনার মধ্যে দিয়ে যেতে হলো। ঢাকার ত্রাণ শিবিরে কাজ করা চিকিৎসকদের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ১৭০,০০০ গর্ভপাত করানো হয়েছিল এবং জন্ম নিয়েছিল ৪৫,০০০ জারজ সন্তান। ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অফ জুরিস্টস-এর একটি রিপোর্ট বলেছে সঠিক সংখ্যা যা-ই হোক না কেন, ব্রিটিশ এবং আমেরিকান সার্জনদের বিভিন্ন দল যে সমানে গর্ভপাত ঘটানোর কাজ করে গেছেন এবং দুর্ভাগ্যের শিকার এই সব মেয়েদের যাতে তাঁদের পরিবার গ্রহণ করে তার জন্য সরকারের করা নিরন্তর প্রচার থেকেই প্রমাণিত হয় কী ব্যাপক হারে ঘটেছিল ধর্ষণের ঘটনা। 

 

এই ধর্ষিতাদের 'বীরাঙ্গনা' নাম দিয়েছিলেন   রাষ্ট্রের জনক শেখ মুজিবুর রহমান,  কিন্তু পরবর্তীকালে এই শব্দটি একটি ভিন্ন অর্থ পরিগ্রহ করে মনে করিয়ে দিত যে এই মহিলারা ধর্ষিতা হয়েছেন, সম্ভ্রম হানি করা হয়েছে তাঁদের। দুর্ভাগ্যক্রমে 'বীরাঙ্গনা' শব্দটি এক সময় 'বারাঙ্গনা'র সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়ে যায়।

 

এই সব মহিলাদের বিবাহ দেওয়া এবং সত্যিই যুদ্ধের বীরাঙ্গনা হিসাবে সমাজে তাঁদের ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করার যে কৌশল নিয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানের তৎকালীন  সরকার, তা ব্যর্থ হয়, কারণ খুব কম পুরুষই এঁদের বিয়ে করতে এগিয়ে আসতেন, এবং যাঁরাও বা আসতেন, তাঁরা আশা করতেন এর বিনিময়ে সরকার তাঁদের বিশাল যৌতুক দেবে। যে সব মহিলার বিয়ে হয়েছিল, স্বামীর ঘরে তাঁরা সাধারণত দুর্ব্যবহার পেতেন এবং বেশির ভাগ 'বীরাঙ্গনা' স্ত্রীদেরই তাঁদের স্বামীরা যৌতুক পেয়ে যাওয়ার পর ত্যাগ করতেন।

 

এই সব বীরাঙ্গনাদের আত্মত্যাগ এবং দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের তাঁদের অবদানকে কোনওভাবেই ছোটো করা যায়না, কিন্তু তাও আশ্চর্যজনক ভাবে বহুদিন ধরে কোনও রকমেরই স্বীকৃতি পাননি তাঁরা। বরং লোকে এদের সাথে দুর্ব্যবহার করে সমাজে একঘরে করে রেখেছে, যেন তাঁরা স্বেচ্ছায় কোনও ভুল পথে গিয়েছিলেন। মানুষ এটা বুঝতে পারেনি যে, সংগ্রামের সময় হানাদার পাকিস্তানি সেনারা এবং তাদের স্থানীয় সহযোগীরা স্বাধীনতার যুদ্ধকে দমন করার উদ্দেশ্যে ধর্ষণকে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিল। 

 

দেশ-বিদেশের সমস্ত মহল থেকেই প্রশংসা পাওয়ার দাবি রাখে। সরকারের এই প্রচেষ্টার ফলে বীরাঙ্গনারা এখন আর লজ্জা এবং বিদ্রূপের বিষয় হয়ে থাকবেন না। সমাজে এখন তাঁরা বসবেন শ্রদ্ধার আসনে। এখন থেকে পুরুষ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মতই সম্মান ও মর্যাদা পাবেন।