Column

তদারকি সরকারের দাবি ঃ একটি রাজনৈতিক সংকট

তদারকি সরকারের দাবি ঃ একটি রাজনৈতিক সংকট

| | 27 May 2013, 06:35 am
দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, বহু অত্যাচার ও জীবন দানের শেষে বাংলাদেশের মানুষ পাকিস্তানি সেনাদের পরাস্ত করে তাদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করেছিলেন। পাকিস্তানের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর অবশেষে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। নতুন রাষ্ট্রের প্রথম সংসদীয় সরকার গঠিত হয় ১৯৭৩ সালে, নির্বাচনের পরে। তার পর থেকে গণতান্ত্রিক, অগণতান্ত্রিক--অনেক সরকারের হাতেই বিভিন্ন সময়ে দেশের শাসন ভার থেকেছে।

উনিশশো নব্বইতে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পরে গণতান্ত্রিক পথেই বি এন পি ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু অচিরেই তারা অগণতান্ত্রিক ভাবে দেশ শাসন করতে শুরু করে। এর ফলে সাধারন জনতা এবং বিরোধী দল গুলির পক্ষ থেকে নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি নিরপেক্ষ ও দলহীন তদারকি সরকারের দাবি উঠে আসে। এই ধরনের একটি সরকারের তদারকিতে অনুষ্ঠিত ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে সংখ্যা গরিষ্ঠ ভোটে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। একই ভাবে তদারকি সরকার পরিচালিত ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরে লীগ আবার ক্ষমতা দখল করে।এর পরে লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার সংবিধান সংশোধন করে  নির্বাচন পরিচালনার জন্য দলহীন তদারকি সরকার প্রথার বিলোপ ঘটায়।

 
এই মূহুর্তে, আগামী নির্বাচনের আগে তদারকি সরকার প্রথা ফিরিয়ে আনার জন্য বিরোধীদের তুমুল দাবি এবং সরকারের ক্রমাগত প্রত্যাখ্যান বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে অত্যন্ত উত্তপ্ত করে তুলেছে। সাধারন মানুষ ভেবে পাচ্ছেননা এই ব্যাপারে কাদের সমর্থন করবেন। এই ইস্যুতে সরকারের পতন ঘটাতে এবং আইন শৃংখলা  সমস্যা তৈরি করার উদ্দ্যেশ্যে বিরোধীরা ঘন ঘন দেশ ব্যাপী ধর্মঘট ডেকে চলেছেন। বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া একের পর এক আন্দোলন সূচী ঘোষণা করছেন। যা মনে হচ্ছে, এই স্পর্শকাতর ইস্যুতে ঐকমত্যের পরিবর্তে শাসক এবং বিরোধী উভয় পক্ষই সংঘর্ষের পথে যেতে চাইছে। আর এর ফলে দেশ চলেছে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। 
 
শাসক ও বিরোধী উভয় পক্ষেই এমন অনেক নেতা আছেন যাঁরা অতীতে তদারকি সরকার প্রথার বিরোধী ছিলেন, এখন কিন্তু তাঁদের অবস্থান ভিন্ন। এই অদ্ভূত অবস্থার পরিপ্রক্ষিতে এখন দরকার নাগরিক আন্দোলনের। নাগরিকরা এগিয়ে আসুন, কথা বলুন শাসক ও বিরোধী উভয় পক্ষের নেতাদের সঙ্গে এবং তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করুন ঐকমত্যে আসার জন্য। যে অচলাবস্থা চলছে, তার অবসানের জন্য এটাই এখন একমাত্র উপায়। এই নাগরিক আন্দোলনের চেহারা অবশ্যই অরাজনৈতিক হতে হবে, এবং আন্দোলনে অংশগ্রহনকারীরা দুই যুজুধান পক্ষকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার জন্য একটি \'প্রেশার গ্রুপের\' কাজ করবেন।