Column

প্রয়োজন নেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের

প্রয়োজন নেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের

| | 27 May 2013, 11:05 am
সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথা ১৯৯৬ সালে শুরু করা হয়েছিল, তা বাতিল হওয়াতে বি এন পি-নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট তীব্র আন্দোলন শুরু করেছে।বিরোধীরা বলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথা ফিরিয়ে না আনলে কিছুতেই তারা আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সংসদীয় নির্বাচনে অংশ নেবেনা। তাদের আশঙ্কা, বর্তমান ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনে নিজেদের স্বপক্ষে কারচুপি করবে।

 কী ভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার-প্রথা বাংলাদেশে চালু হয়েছিল ? উনিশশো নব্বই সালে গণ অভ্যুত্থানের ফলে জেনারেল এরশাদের স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে এক বিশৃংখলা এবং অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল। এর কারন, সেই সময় দেশে কোনও সাংবিধানিক সরকার ছিলনা। তাই স্থিতিশীলতার স্বার্থে সব প্রধান রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা একটি ঐকমত্যে পৌঁছলেন ।সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, একটি অরাজনৈতিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সাধারন নির্বাচন করা হবে। এই সিদ্ধান্তের পিছনে উদ্দেশ্য ছিল দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের পথ সুগম করা। সামরিক নায়কদের ঘন ঘন ক্ষমতা দখল রুখতে তখন এটাই ছিল একমাত্র পথ। এর পরে এই অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার অধীনে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯১ সালে এবং জয়লাভ করে বি এন পি ক্ষমতায় আসীন হয়। 

 

পাঁচ বছর দেশ শাসন করার পর কিন্তু বি এন পি চায়নি যে, পরবর্তী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হোক। বরং আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী দলগুলি সাধারন নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার দাবী তোলে। বি এন পি সরকার এর বিরোধিতা করলে আওয়ামী লীগ ও তাদের রাজনৈতিক মিত্ররা নির্বাচন বয়কট করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। তা সত্ত্বেও বি এন পি নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড়ই ছিল। 

 

এর পরে অবশ্য দেশ জুড়ে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ, হরতাল এবং অসহযোগ আন্দোলনের ফলে বি এন পি সরকার পদত্যাগ করে এবং সংবিধানের ১৩তম সংশোধনীর মাধ্যমে আইন করা হয় যে, এর পর থেকে সাধারন নির্বাচনগুলি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই করা হবে। 

 

কিন্তু পরবর্তীকালে একটি প্রশ্ন দেখা দিল। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার ৪২ বছর পরেও  প্রতিটি সংসদীয় নির্বাচন করাতে সত্যিই কি বাংলাদেশে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন ? রাজনৈতিক নেতাদের জন্য কি একটি অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নজরদারি দরকার না তাঁদের ব্যক্তিগত, পেশাগত এবং রাজনৈতিক ভাবে পরিণত হতে দেওয়াই শ্রেয় ! পৃথিবীর কোনও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই কিন্তু এই রকম অদ্ভূত প্রশাসনিক প্রথা নেই। 

 

এই প্রসঙ্গে একটি মৌলিক প্রশ্ন উঠে আসে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মত একটি অগণতান্ত্রিক উপায় কি শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে পারে ? অবাঞ্ছিত স্বল্পমেয়াদী ব্যবস্থা হিসেবে এই প্রথা চলতে পারে, কিন্তু গণতন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষার্থে দীর্ঘকালীন প্রথা হিসেবে কখনওই নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তী অথবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের আগ্রহ আবার প্রবলভাবে দেখা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, নির্বাচন অবাধ এবং কারচুপিমুক্ত করতে ক্ষমতাসীন সরকার যে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে, এমন বিশ্বাস নেই। তাই প্রয়োজন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের। 

 

কিন্তু যখনই দেশে কোনও সাধারন নির্বাচন হয়, তখনই নিরপেক্ষ পরিদর্শকরা গোটা ব্যাপারটির তত্ত্বাবধান করেন। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হচ্ছে কি না, তা ঘুরে দেখার জন্য বিদেশ থেকে নামী ব্যক্তিত্বরাও আসেন। সব সময়ই কিন্তু চূড়ান্ত মন্তব্যের ক্ষেত্রে লেখা হয় অসাধুতার ঘটনা ঘটলেও সেগুলি কোনওভাবেই নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারেনি এবং ভোটদান অবাধ, ন্যায়সঙ্গত এবং স্বচ্ছভাবেই হয়েছে। 

 

এর পরে শপথ গ্রহন করে নতুন সরকার পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় থাকে। এই সময়কালে দেশের আইন অনুযায়ী বিভিন্ন কাজকর্ম চালানর পূর্ন ক্ষমতা তাদের হাতে থাকে। ভাল, মন্দ যা-ই করুক না কেন এবং দেশের মানুষ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলির সেই সম্পর্কে যা-ই অভিমত থাকুকনা কেন, প্রশাসনিক বাধ্যবাধকতা পালনের শপথবলেই  রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যন্ত্রের উপর সরকারের পূর্ন কর্তৃত্ব থাকে। 

 

ক্ষমতায় আসার সময় যে সরকারকে সাংবিধানিক এবং আইনসঙ্গত বলে মনে করা হয়, দেশের ভাল করবে বলে যে সরকারের উপর মানুষ বিশ্বাস ও আস্থা রাখে, সেই সরকারকেই আবার তার শেষ পর্যায়ে সংবিধানপ্রদত্ত দায়িত্ব--সাধারন নির্বাচনের ব্যবস্থা করা--সেই ব্যাপারে হঠাত বিশ্বাসের অযোগ্য বলে মনে করা হয়। এ\'কথা মনে রাখা দরকার যে, নির্বাচন যাতে সব দিক দিয়ে ঠিক মত হয়, তা সুনিশ্চিত করার জন্য দেশে একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন আছে। এ\'ছাড়াও দেশে সাধারন আদালত, হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, বহু নিরপেক্ষ তদারকি সংগঠন আছে। সর্বোপরি, আছে বিশাল এবং শক্তিশালী সংবাদমাধ্যম। 

 

যেখানে পৃথিবীর আর কোনও দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথা চালু নেই, কেন তা বাংলাদেশে থাকবে ? কোনও নিশ্চয়তা কি আছে যে ব্যবস্