Column

A Paradigm Shift From Article-370 to Article-1 Done & Dusted!
এর পরে কী ?
আজ আমরা একটা পথের মুখে দাঁড়িয়ে আছি এবং সকলের দায়িত্ব বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন বিষয়গুলির নিষ্পত্তি করার জন্য যৌথ আলোচনার মাধ্যমে সহযোগিতা করা।
দুর্নীতি
দূর্নীতির সূচকের দিক দিয়ে কাশ্মীর এক বিশেষ স্থান অধিকার করেছে। অপ্রিয় হলেও এ কথা সত্যি যে, উপর্যুপরি সরকারের সময় কুশাসন এবং অপশাসনের কল্যাণে আমাদের দেশ পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম দূর্নীতিগ্রস্ত দেশে পরিণত হয়েছে বলে বলা হচ্ছে। সুতরাং এখন আমাদের সবার দায়িত্ব, রাইট টু ইনফরমেশন অ্যাক্ট (আর টি আই ) এবং পাবলিক সার্ভিস গ্যারান্টিজ অ্যাক্ট (পিএসজিএ)-এর মত অস্ত্রগুলিকে ব্যবহার করে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলিতে স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতা নিয়ে আসা। বলা হয় যে, খরচ করা প্রতি পাঁচ টাকার মধ্যে মাত্র এক টাকা উদ্দিষ্ট স্বত্বভোগীদের কাছে পৌঁছায়। এই ধরণের দুষ্ট রোগ আমাদের ব্যবস্থা থেকে নির্মূল না করতে পারলে উন্নত এবং শান্তিময় ভবিষ্যতের কল্পনা করাও বাতুলতা।
তরুণ নেতৃত্ব
আক্ষরিকভাবেই স্মরণাতীত কাল থেকেই মুষ্টিমেয় পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতিকেরা জন্মু-কাশ্মীর শাসন করে এসেছেন। এদের বেশিরভাগই স্বল্পশিক্ষিত, দূরদর্শীতাহীন, অযোগ্য এবং ক্ষমতা কুক্ষিগতকারী। সময় এসেছে, জম্মু-কাশ্মীরের রাজনৈতিক আলোচনায় তরুণ, অনলস, যোগ্য এবং পড়াশুনা করা নেতৃত্বকে নিয়ে আসার। গণতন্ত্র কারুর ব্যক্তিগত জায়গীর নয় যে তা উত্তরাধিকার এবং আপন খেয়ালখুশির বশবর্তী হয়ে চলবে। বরং মেধা এবং অংশগ্রহণের দ্বারা চালিত এটি একটি উন্মুক্ত জায়গা।
এম এন সি এবং কর্পোরেট
আর্টিকল-৩৭০ এবং তার উপাঙ্গ জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যটিকে এম এন সি এবং দেশীয় কর্পোরেটদের কাছে একটি অনভিপ্রেত গন্তব্যে পরিণত করেছে। সময় এসেছে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলির কাছে একটি শিল্প-বান্ধব পরিবেশের চিত্র তুলে ধরার যাতে করে জম্মু-কাশ্মীর জুড়ে এরা সবাই ছড়িয়ে পড়তে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, রাজ্যের গুরুত্বপূর্ন ক্ষেত্রগুলি, যেমন পর্যটন এবং কৃষিতে সরাসরি বিদেশি পুঁজি নিয়ে আসা যেতে পারে। যে ভাবে ১৯৯১ সালে এলপিজি মডেল চালু করার পর ভারতবর্ষের বাকি অঞ্চলগুলিতে হয়েছে, সে ভাবেই এই পথের মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মীরের অর্থনীতির পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব।
কর্মসংস্থান
উগ্রপন্থার দিকে তরুণদের আকৃষ্ট হওয়ার পিছনে বেকারি একটি অত্যন্ত বড় কারণ। আজকের কর্পোরেট প্রশাসনের যুগে এই সমস্যা নিরসনের জন্য সরকারি চাকরির দিকে তাকিয়ে থাকলে ভুল করা হবে। ভারতের মূল ভূখণ্ডে অর্থনীতি স্ফীতকায় হয়ে চলেছে। টাটা, উইপ্রো এবং ইনফোসিসের মত বৃহৎ বাণিজ্য সংস্থাগুলিকে জম্মু-কাশ্মীরের শিক্ষিত তরুণ তরুণীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে তাদের প্রতিষ্ঠানে জায়গা করে দেওয়ার জন্য বলা উচিত।
বুদ্ধিজীবীদের বক্তব্য
পরিহাসের বিষয়, প্রান্তিক এবং বিচ্ছেদকামী শক্তিগুলি বড় বেশি দিন পর্যন্ত আঞ্চলিক, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কাশ্মীর বিষয়ক আলোচনায় কর্তৃত্ব করে এসেছে। এ বিষয় নিয়ে এ দেশের বুদ্ধিজীবীকুল এবং এবং নীতি নির্ধারকদের তাঁদের নিজেদের মত করে সদর্থক আলোচনায় বসা জরুরি। সেই আলোচনায় প্রতিনিধিত্ব থাকবে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠদের থেকে, সংখ্যালঘু প্রান্তিকদের থেকে নয়।
তফশিলি জাতি এবং তফশিলি উপজাতি
তফশিলি জাতি এবং তফশিলি উপজাতির মানুষেরা যথেষ্ট সংখ্যায় থাকলেও তাঁরা জম্মু-কাশ্মীরের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি। সংবিধানের আগেকার ব্যবস্থা অনুযায়ী শিডিউল্ড কাস্টস অ্যান্ড শিডিউল্ড ট্রাইবস অ্যাট্রোসিটিজ অ্যাক্ট, যা এইসব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বার্থের পক্ষে কথা বলত, জম্মু-কাশ্মীরে প্রযুক্ত ছিলনা। একদিনও দেরি না করে তফশিলিদের অবস্থার উন্নয়নকামী এই ধরণের ইতিবাচক কাজ শুরু করে দিতে হবে। জম্মু-কাশ্মীরের সমাজ একটি বহুমাত্রিক সমাজ। ন্যায়সাধনের দৃঢ় মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে এই ধরণের সমাজকে ।
আর্টিকল- ১৯
ভারতীয় সংবিধানের আর্টিকল-১৯ দেশের প্রতিটি বৈধ নাগরিকের বাক এবং অভিব্যক্তি প্রকাশের মৌলিক অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয়। কারুর যদি এই ধরণের মৌলিক মানবাধিকা্রের ভীষণ প্রয়োজন হয়ে থাকে, তবে তা জম্মু-কাশ্মীরের যুবসমাজের। বহু বছর ধরে আঞ্চলিক সরকারগুলি যুবসমাজের দমবন্ধ করে দিয়ে তাদের বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। ইন্টারনেট এবং ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবের মত সোশাল মিডিয়াগুলিতে তরুণ তরুণীদের কণ্ঠস্বরই ধ্বনিত হয়। এটা তাদের মধ্যে আলোচনার একটি মঞ্চ। কিন্তু ১০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে ইন্টারনেট এবং সোশাল মিডিয়ায় তাদের উপস্থিতির বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ চলছে। এই বিধিনিষেধের পিছনে নিরাপত্তা বিষয়ক উদ্বেগের ব্যাপারটি যেমন বুঝতে হবে, সেই রকম যুবসম্প্রদায়ের আশা আকাঙ্ক্ষাকেও হৃদয়ঙ্গম করতে হবে। বিচক্ষণতার কাজ হবে, ইন্টারনেট পরিষেবাকে পর্যায়ক্রমে ফিরিয়ে আনা । ভারতের মত পরিণত এবং স্পন্দনশীল গণতন্ত্রে বিভিন্ন মতাদর্শ এবং দর্শনকে তাদের প্রাপ্য জায়গা দেওয়া দরকার।
রাজ্যের মর্যাদা
জন্মু-কাশ্মীরের মূল্যবোধ এবং সংস্কৃতির একটি গর্বিত ইতিহাস আছে। এই রকম একটি রাজ্যকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মর্যাদায় নামিয়ে আনলে তা যেমন স্থানীয় মানুষের মতের পরিপন্থী হয়, তেমনি, তা প্রশাসনিক দিক থেকেও সমীচীন নয়। এ ছাড়া, সারা ভারতে এর আগে এমন কোনও নজির নেই যেখানে একটি পূর্নাংগ রাজ্যকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়েছে। সুতরাং রাজ্য হিসেবে জম্মু-কাশ্মীরের মর্যাদাকে অবিলম্বে ফিরিয়ে আনা উচিত।
সন্ত্রাসবাদের শিকারেরা
দীর্ঘ সময়কাল ধরে জম্মু-কাশ্মীর একটি সংঘাতময় অঞ্চলে হিসেবে পরিচিত। তার অর্থ, রাজনৈতিক আনুগত্য এবং সন্মন্ধ ব্যতিরেকে এখানকার মানুষ দুর্দশা ভোগ করেছেন। এই সব অসুখী মানুষগুলির ক্ষতে নিরাময়ের জন্য মলম লাগানো, তাদের ব্যথা বেদনার কথা শোনা এবং উদার ভাবে তাদের ব্যথা নিরসন করার সময় এখন। একটা কথা আছেঃ হাতুড়ি আর পেরেকের সাহায্যে ভাঙ্গা সম্পর্ক জোড়া লাগানো যায়না।
তৃনমূল স্তরের প্রশাসন
ভারতীয় সংবিধানের প্রয়োগের মাধ্যমে ৭৩ এবং ৭৪তম সংশোধনী এখন দেশের অন্য সব জায়গায় যেমন এতদিন ছিল, তেমন ভাবে জম্মু-কাশ্মীরেও প্রযুক্ত হয়েছে। এর অর্থ, গ্রামে ও শহরে যথাক্রমে ত্রি-স্তরীয় পঞ্চায়েতি রাজ এবং পুরশাসন প্রবর্তিত হয়ে স্থানীয় স্ব-শাসন আসতে চলেছে জম্মু-কাশ্মীরে। এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রশাসনিক এবং আর্থিক দিক দিয়ে যথেষ্টভাবে উন্নত করে তুলতে হবে, যাতে করে তারা স্থানীয় আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারে। এই কাজটিই এতদিন হতে পারেনি।
দূর্নীতি বিরোধিতা
এই নতুন সাংবিধানিক ব্যবস্থা সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন ( সি বি আই), এনফোর্সমেণ্ট ডিরেকটরেট (ই ডি), সেন্ট্রাল ভিজিলান্স কমিশন (সি ভি সি ) এবং অ্যান্টি করাপশন ব্যুরোর (এ সি বি ) মত দূর্নীতিবিরোধী সংস্থাগুলির এক্তিয়ার বৃদ্ধি করার পথ করে দিয়েছে।
যে পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতিকেরা এবং স্বজনপোষণকারী আমলারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে জম্মু-কাশ্মীরে অপশাসন চালিয়ে গেছে, তাদের কুকার্যের জন্য দায়ী করে দেশের আইনের সামনে দাঁড় করানো দরকার। কড়া হাতে আইনের শাসন প্রবর্তন করার এটাই প্রকৃষ্ট সময়।
প্রথমে যা বলা হয়েছিল, আমরা একটি অচলাবস্থা ভেঙ্গে ফেলার একেবারে মুখে এসে দাঁড়িয়েছি। ন্যায়, মুক্তি, সমতা এবং ভ্রাতৃত্বের যে দিশা আমাদের রাষ্ট্র এবং সংবিধানের নির্মাতারা দেখেছিলেন, তাকে উঁচুতে তুলে ধরার জন্য দৃঢ়ভাবে এখন হাতে হাত মিলাক সকলে।