Column

নিষিদ্ধ হোক সাম্প্রদায়িক দলগুলি

নিষিদ্ধ হোক সাম্প্রদায়িক দলগুলি

| | 27 May 2013, 06:38 am
হরতালের শহর’ ঢাকায় ডিসেম্বরের ১৮ তারিখে হয়ে গেল আরও একটি হরতাল। শুধু শহরেই নয়, এই হরতাল বস্তুতপক্ষে পালন করা হল সারা দেশেই। এ’রকম হরতাল বাংলাদেশে এখন অহরহ হচ্ছে, এবং আরও অনেক হতে চলেছে। তবে বি এস ডি’র ডাকা ১৮ ই ডিসেম্বরের হরতাল ছিল সম্পূর্ন অন্য রকম। এই দিন কোনও হিংসার ঘটনা অথবা নাগরিক সম্পত্তি নষ্ট হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি, কোনও মৃত্যুও হয়নি।অনেক সংবাদপত্র এই হরতালকে ‘অনন্য’ আখ্যা দিয়েছে, কারন পুলিশের উপর আক্রমণ হয়নি। বিরোধী রাজনৈতিক দল অবশ্য একে ‘বি এস ডি’র ডাকা এবং সরকারের করা’ হরতাল বলে অভিহিত করেছে। এর প্রধান দাবিগুলি ছিল উনিশশো একাত্তরের যুদ্ধাপরাধগুলির দ্রুত বিচার করা এবং সাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলিকে নিষিদ্ধ করা।

 যে দলটি সব কিছু বন্ধের ডাক দিয়েছিল, তারা অভিযোগ করেছে যে, জামাত দখলদারি পাকিস্তানি সেনাদের সাথে হাত মিলিয়ে দেশের প্রতি  বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল।তারা ৩০ লক্ষ স্বাধীনতাকামী মানুষকে হত্যা করে এবং অগনিত মহিলাকে ধর্ষন করে বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়ার প্রচেষ্টা ব্যর্থ করতে চেয়েছিল।  স্বাধীনতা বিরোধী এই জামাত, যারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে নিষিদ্ধ হয়েছিল, শেখ মুজিবের পরবর্তী সময়ে আবার নতুন জীবন ফিরে পায়। এখন তারা আবার বাংলাদেশের ‘বিজয় মাস’ ডিসেম্বরে হরতাল ডাকার স্পর্ধাও দেখাচ্ছে।

 
দেশের মানুষ আশা করেন যে ভাবে ওয়ার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল কাজ করেছে, তাতে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দেওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু এ’ কথা মনে রাখতে হবে, সাম্প্রদায়িকতাকে নিষিদ্ধ করে এবং ধর্মনিরপেক্ষতাকে বরন করেই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল এবং এই দু’টি ব্যাপারই দেশের সংবিধানের মূল নীতি। স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় জামাতের যে ভূমিকা ছিল, তা মনে না রেখে তাদের কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে দিলে তা শুধু বাংলাদেশের সংবিধানের সত্ত্বার বিরুদ্ধেই যাবেনা,  স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল্যবোধের প্রতিও অবমাননা করা হবে।  
 
দেশের প্রধান বিরোধী দল এই ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা নিতে পারে।বি এন পি স্বাধীনতা যোদ্ধাদের সম্মানে ঢাকা শহরে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। কিন্তু তারা তাদের নির্বাচনী মিত্র, জামাতকে এই উপলক্ষ্যে আমন্ত্রন করেনি। এমনকি, বি এন পি ১২ টি ইসলামি দলের ডাকা হরতালকেও সমর্থন করেনি। এই দু’টি ঘটনাই স্বাধীনতা-পন্থী দল হিসেবে বি এন পি’র বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে সাহায্য করবে। যদি বি এন পি স্বাধীনতা-বিরোধী দলগুলির সাথে দূরত্ব বজায় রেখেই চলে এবং যদি বর্তমানে চলতে থাকা যুদ্ধাপরাধ-বিচার যুক্তিপূর্ন ভাবে সম্পন্ন হয়, তাহলে সে দিন দূরে নয়, যে দিন ধর্ম নিরপেক্ষতা-বিরোধী এবং সাম্প্রদায়িক শক্তি থেকে মুক্ত এক নতুন দিনের আলো দেখবে বাংলাদেশে।