Column

প্রকাশ্য সংঘাতের পথে এগিয়ে চলেছে দেশ

প্রকাশ্য সংঘাতের পথে এগিয়ে চলেছে দেশ

| | 27 May 2013, 06:42 am
এক ভয়ানক রাজনৈতিক সংঘাতের দিকে এগিয়ে চলেছে দেশ। একদিকে সরকার বর্তমান প্রশাসনের অধীনেই আসন্ন সংসদীয় নির্বাচন করাতে বদ্ধপরিকর, অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল বি এন পি চায় যে ভাবেই হোক, নির্বাচনের আগে তদারকি সরকার প্রথা ফিরিয়ে আনতে অথবা একটি বিশেষ নির্বাচনী প্রশাসন গঠন করাতে। বি এন পি ঘোষণা করে দিয়েছে, তারা নতুন বছরের শুরুতে শেষ বারের মত সংসদের অধিবেশনে উপস্থিত থাকবে এবং তার পরে তাদের সাংসদরা এক সাথে পদত্যাগ করে সরকার যাতে তদারকি সরকারের দাবী মানতে বাধ্য হয়, তার জন্য এক ‘অপ্রতিরোধ্য’ গ্ণ আন্দোলন গড়ে তুলবেন। এই অবস্থায় মনে করা হচ্ছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার কড়া পদক্ষেপ নেবে। কিছু বি এন পি নেতা আশংকা করছেন, সরকার জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে পারে।

 রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির ফলে অনেক গুজব ছড়াচ্ছে। যেমন তাজরিন কাপড় কারখানার বিধ্বংসী আগুন নিয়ে অনেক জল্পনা হয়েছে, তেমনই বিশ্বজিত-হত্যা, পদ্মা ব্রীজ প্রকল্প অথবা স্কাইপ কেলেঙ্কারি, যার ফলে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনালের একজন বিচারককে পদত্যাগ করতে হয়েছে, তা নিয়েও বহু গুজব রটেছে।

 
একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনী প্রশাসন গঠনের দাবীর স্বপক্ষে বি এন পি’র নেতৃত্বে থাকা ১৮ দলে জোট সম্প্রতি একটি গণ-সংযোগ কর্মসূচী নিয়েছিল। কিন্তু এই কর্মসূচী চলার সময়ে জামাত শিবিরের যুদ্ধাপরাধ বিচার বন্ধ করার দাবী আর সব কিছুকে ঢেকে দেয়। বাংলাদলেশ খিলাফত মজলিশ আয়োজিত অধিবেশনে জাতীয় গ্ণতান্ত্রিক পার্টির প্রেসিডেন্ট সইফুল আলম প্রধান বলেন, প্রধান মন্ত্রী দাড়িওয়ালা মানুষ এবং ইসলামী টুপি দেখলেই ক্ষেপে যান। তিনি প্রধান মন্ত্রীকে এই বলে হুঁশিয়ারি দেন যে, ‘ইসলাম-প্রেমী’ মানুষদের উপর নিপীড়ন চলতে থাকলে অদূর ভতিষ্যতে কিন্তু ‘মুজিব কোট’ পরিহিত লোকেরাও একই নির্যাতনের শিকার হবেন। এই হুমকি দেশ যে রাজনৈতিক সংঘর্ষের দিকে এগিয়ে চলেছে, তার পরিষ্কার ইঙ্গিত।
 
এ দিকে, যুদ্ধাপরাধ বিচার চালিয়ে যাওয়া ছাড়াও সরকারও খুব সম্ভবত অস্ত্র পাচারের বি এন পির জড়িত থাকা, ২১ শে অগাস্টের গ্রেনেড আক্রমণ, খালেদা জিয়ার দুই পুত্র তারিক রাহমান ও কোকোর অর্থ পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগ, প্রভৃতি ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
 
সরকার ঠিক করেছে, নতুন বছরে স্বাধীনতা সংগ্রামের উদ্দীপনা জনসাধারনের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে মানব শৃংখলের আয়োজন করা হবে। এ’ কথা বলা যায় যে, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে যেমন হয়েছিল, তেমনি ভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামের ব্যাপারে মানুষের মনে চেতনা জাগিয়ে তুলতে পারলে বর্তমানের অনিশ্চয়তা এবং রাজনৈতিক সংঘাতের সম্ভাবনা, পুরোপুরি না হলেও অনেকটাই দূর করা যাবে।
 
আওয়ামী লীগ জোট সরকারের চার বছর শাসনের মূল্যায়ন
 
দু’হাজার সাত সালে, যখন কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচারের দূর্নীতিতে প্রাক্তন প্রধান মন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারিক রাহমানের নাম জড়িয়ে খবরের শিরোনামে আসে, তখনকার তদারকি সরকার শুধু মাত্র খালেদা জিয়ার দুই পুত্রকেই নয়, দুই প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল—বি এন পি এবং আওয়ামী লীগের দুই প্রধান--  বেগম জিয়া এবং শেখ হাসিনাকেও দূর্নীতির দায়ে গ্রেপ্তার করে। দেশের অধিকাংশ মানুষই তখন এই দুই রাজনৈতিক প্রধানের গ্রেপ্তারিকে স্বাগত জানায়।
 
পুর্বতন বি এন পি-জামাত জোট সরকারের প্রশাসনিক ব্যর্থতায় অসন্তষ্ট মানুষ ২০০৮ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের উপর আস্থা রাখার রায় দেন। আর এই ভাবেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ধর্ম নিরিপেক্ষ শক্তি বিপুল ভোট পেয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসে।
 
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আওয়ামী লীগের জোট সরকার অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতির চেষ্টা করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলি রূপায়িত হতে পারেনি। তেল, গ্যাস এবং বিদ্যুতের ঘন ঘন মূল্য বৃদ্ধির জন্য তীব্র ভাবে সমালোচিত এই সরকারকে ‘মূল্য বৃদ্ধির সরকার’ বলেও চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে সামগ্রিক ভাবে গত চার বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্যের ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়।    
 
আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করতে পেরেছে। সাফল্য  এসেছে খাদ্য উৎপাদনে, শিক্ষায়, স্বাস্থ্য পরিষেবায়, রপ্তানি বেড়েছে তৈরি মালের। আর এ’ সবের জন্য, স্বাভাবিক ভাবেই আওয়ামী লীগ সরকার গর্ব অনুভব করে।
 
এ’ ছাড়াও একটি পরিচ্ছন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা, নতুন শিক্ষা নীতির প্রবর্তন এবং বিনা মূল্যে পাঠ্য বই বিতরনের ঢালাও আয়োজন—এ’ সবই গত চার বছরের সাফল্যের খতিয়ানে পড়ে।
 
এ’ছাড়াও চরম পন্থী ইসলামে গোষ্ঠীগুলি, যারা অদূর অতীতেই দেশে সন্ত্রাসের আবহাওয়া তৈরি করেছিল, তাদের হিংসাত্মক কার্যকলাপও দমন করার কৃতিত্ব সরকার দাবী করতে পারে। এই ধরনের অনেক সাম্প্রদায়িক এবং ধর্মনিরপক্ষতা বিরোধী দলই এখন নিষিদ্ধ।
 
স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনার সাহায্যে বিদ্যুৎ সংকটের মোকাবিলা করার ব্যাপারেও সরকার সফল হয়েছে, যদিও পরমানু বিদ্যুৎ কেন্দ্র সহ আরও বেশ কিছু প্রকল্প এখনও তৈরি করা যায়নি।
 
যুদ্ধাপরাধ বিচার শুরু করার ব্যাপারটিও বিভি&a